সাংবাদিক ছাড়া গণমাধ্যমের মালিকরা অস্তিত্বহীন : প্রধান বিচারপতি

সাংবাদিক ছাড়া গণমাধ্যমের মালিকরা অস্তিত্বহীন : প্রধান বিচারপতি

ছবি সংগৃহিত।

সাংবাদিক ছাড়া সংবাদপত্রের (গণমাধ্যমের) মালিকরা অস্তিত্বহীন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সংবাদপত্রের সাংবাদিক ও কর্মচারীদের বেতন কাঠামো নির্ধারণে গঠিত নবম ওয়েজ বোর্ডের চূড়ান্ত গেজেট (প্রজ্ঞাপন) প্রকাশে স্থিতাবস্থা জারি করে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানিতে আজ সোমবার তিনি এ মন্তব্য করেন।

শুনানি শেষে আগামীকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে ঠিক করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি শেষে আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ ও মো: ইউসুফ আলী। শুনানিতে প্রধান বিচারপতির সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘সাংবাদিক ছাড়া আপনাদেরও (মালিক পক্ষের) অস্তিত্ব (এক্সিসটেন্স) নাই।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সরকার হলো এক্ষেত্রে আম্বায়ারের মতো। সাংবাদিক ও মালিক উভয় পক্ষের স্বার্থই সরকার দেখবে।’ 
এসময় নোয়াবের আইনজীবী বলেন, সাংবাদিক ছাড়া সংবাদপত্র সাদা কাগজ। পরে সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামোর নবম ওয়েজবোর্ডের গেজেট প্রকাশে হাইকোর্টের দেয়া স্থিতাবস্থার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি শেষ করা হয়। এরপর আপিল বেঞ্চ এবিষয়ে আগামীকাল আদেশের দিন ধার্য করেছেন।

শুনানিতে রিটকারীর পক্ষে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ বলেন, সাংবাদিকরাই তো পত্রিকা চালাচ্ছেন। সাংবাদিকরা কাজ না করলে পরের দিন খবরের কাগজ না বের হয়ে সাদা কাগজ বের হবে। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, সাংবাদিক ছাড়া সংবাদপত্রের (গণমাধ্যমের) মালিকরা অস্তিত্বহীন। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে বলেন, গেজেট প্রকাশের আগেই এটা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করা হয়েছে। এই রিট প্রি-ম্যাচিউড। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বেতন না দেয়ার লক্ষ্যেই এ মামলা করা হয়েছে। ওয়েজ বোর্ডের গেজেট হওয়ার পর ১৪ দিনের আপত্তি জানানোর সুযোগ আছে। কিন্তু সে গেজেটই তো হয়নি। তার আগেই রিট করা হয়েছে।

এ এফ হাসান আরিফ বলেন, শ্রম আইনের ১২৮ ধারা অনুযায়ী যে গেজেট হওয়ার কথা তা হয়নি। সেই গেজেট হলে আপত্তির সুযোগ আছে। এরপর আইনের ১৪৫ ধারা অনুযায়ী আরেকটি গেজেট হবে সেটাই চূড়ান্ত। সেটাও হয়নি। এরপর আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে গেজেট প্রকাশের বিষয় জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে আপনাদের জানাবো। পরে আদালত নবম ওয়েজ বোর্ডের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশে স্থিতিবস্থা জারি করে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের আদেশের জন্য আগামীকাল দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ৮ আগস্ট সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণে গঠিত নবম ওয়েজ বোর্ডের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের ওপর দুই মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন হাইকোর্ট। সাথে সাথে রুল জারি করেন আদালত। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিপরিষদ কমিটির আহ্বায়ক, তথ্য সচিব, শ্রম সচিব, নবম ওয়েজ বোর্ডের চেয়ারম্যানকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরে এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৭ আগস্ট সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব) পক্ষে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান এ বিষয়ে রিট দায়ের করেন। গত ২৫ জুলাই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, নবম ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশ চূড়ান্ত হয়েছে। মন্ত্রিসভা অনুমোদন করলে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের আশাংকা থেকেই রিট দায়ের করা হয়।