দাঁতের সুরক্ষায় যে সকল খাবার ক্ষতিকর ও উপকারী

দাঁতের সুরক্ষায় যে সকল খাবার ক্ষতিকর ও উপকারী

ফাইল ছবি।

কিছু খাবার আছে যা দাঁতের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর, আবার কিছু খাবার বিশেষ উপকারী। দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখার জন্য দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করা, ফ্লস ব্যবহার করা ইত্যাদি কখনই বাদ দেয়া যাবে না। এ ছাড়া খাবারো দাঁতের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হলো খাবারগুলো সম্পর্কে।
দাঁতের জন্য ক্ষতিকর খাবার
কোমল পানীয় : স্থূলতা বাড়ানোর পাশাপাশি দাঁতেরও মারাত্মক ক্ষতি করে কোমল পানীয়। এই পানীয়গুলোতে অ্যাসিড ও চিনি দুটোই থাকে বেশি, যা দাঁতের ‘এনামেল’য়ের আবরণকে আক্রমণ করে। নিয়মিত এই পানীয় যারা পান করেন, স্বভাবতই তাদের দাঁত ক্ষয় হওয়া, শিরশির অনুভূতি দেখা এবং ‘ক্যাভিটি’ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
ক্যান্ডি : এতেও থাকে প্রচুর পরিমাণে চিনি, যা দাঁতের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। বিশেষত, চিবিয়ে খাওয়া ক্যান্ডি যেমন ক্যারামেল, ট্যাফি, লিকোরিস ইত্যাদি খাওয়ার সময় দাঁতে আটকে যায়। ফলে খাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পরও আটকে থাকা ওই অংশগুলো ‘এনামেল’য়ের আবরণ ক্ষয় করতে থাকে।
চিপস : এতে চিনি না থাকলেও তা দাঁতে আটকে থাকতে পারে। আর স্নেহজাতীয় এই খাবার দাঁতের ‘এনামেল’য়ের আস্তর ক্ষয় করে।
ড্রাই ফরুটস : খাবারটা পরিমাণ মতো খেলে স্বাস্থ্যকর এতে কোনো সন্দেহ নেই। আছে বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ ও ভোজ্য আঁশ। তবে সমস্যা হলো এর আঠালো ধরন, যা দাঁতে আটকে থাকে। এই আটকে থাকা খাবারে জীবাণু সংক্রমণ হয়ে দাঁত ক্ষয় হতে থাকে।
অ্যালকোহল : সমস্যা আসলে অ্যালকোহলয়ের নয়, বরং অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়গুলোতে থাকা চিনি। অ্যালকোহলে থাকা চিনি মুখের ভেতরের ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এসে তৈরি করে ‘প্লাক’। আর দাঁতে ‘ক্যাভিটি’ তৈরি হওয়ার অন্যমত প্রধান কারণ হলো এই ‘প্লাক’।
এনার্জি ড্রিংক : প্রচুর পরিমাণে অমীয় উপাদান থাকে এই পানীয়গুলোতে, যা অতিরিক্ত পান করলে দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এনার্জি ড্রিংকের কারণে হওয়া দাঁতের ক্ষতি অনেক সময় সারিয়ে তোলা সম্ভব হয় না।’
বরফ : প্রচণ্ড গরমের দিনগুলোতে বরফ দেয়া পানীয় পান করার সময় বরফগুলো চিবানোর অভ্যাসটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অনেকে ইচ্ছা করেও বরফ চিবিয়ে খায়। গরম থেকে প্রশান্তি দিলেও দাঁতের জন্য তা মোটেও ভালো নয়। নিয়মিত তীব্র ঠাণ্ডার সংস্পর্শে আসার ফলে ‘এনামেল’য়ের স্তর দুর্বল হতে থাকে। দাঁতের এই রক্ষাকবচ দুর্বল হয়ে গেলে দেখা দেবে শিরশির অনুভূতি, বাড়বে ‘ক্যাভিটি’য়ের ঝুঁকি।
ফলের রস : মিষ্টি এবং অমীয় ফলের রস দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। দাঁত ক্ষয় করার মাধ্যমে তা ‘ক্যাভিটি’ সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়।
সাদা পাউরুটি : এই পাউরুটিতে থাকা ‘সিম্পল কার্বোহাইড্রেইট’ দাঁতের গায়ে আটকে থাকে। যত বেশি সময় তা আটকে থাকবে, ততই বাড়বে দাঁত ক্ষয় ও ‘ক্যাভিটি’ হওয়ার সম্ভাবনা।
হোয়াইট পাস্তা : এই খাবার চটজলদি ক্ষুধা নিবারণের জন্য আদর্শ। তবে এটাও আঠালো প্রকৃতির যা দাঁতে আটকে থাকে। আটকে থাকা অবস্থায় তা ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন-কেন্দ্রে পরিণত হয়। তাই তা খাওয়ার পর অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
দাঁতের জন্য উপকারী খাবার
দুধ : ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ দুধ দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। যদিও এতে ‘ল্যাকটোজ’ নামক চিনি থাকে তবুও তা ‘ক্যাভিটি’ থেকে সুরক্ষা দেয়। তবে শিশুরা যদি দুধের বোতল মুখে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে তবে সে ক্ষেত্রে দুধ আবার দাঁতের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
চিজ : ‘ডেন্টাল ইরোশন’য়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে চিজ, যা ‘ক্যাভিটি’ থেকে বড় ধরনের সুরক্ষা দেয়। চিজ মুখের ভেতরে লালারস বৃদ্ধির মাধ্যমে অম­তা কমায়, আর ব্যাকটেরিয়া ওই অম­ পরিবেশে বংশ বৃদ্ধি করে দ্রুত।
টক দই : দাঁতের ক্ষয় রোধ করার ক্ষেত্রে অন্যতম উপকারী খাবার হলো টক দই। দাঁতের ‘এনামেল’য়ের আবরণে নতুন করে খনিজ জোগায় এই খাবার। পাশাপাশি কমায় অম­তার মাত্রাও। তবে খেতে হবে ‘সুগার ফ্রি’ ও ‘ফ্লেইভার’ নেই এমন টক দই।
বাদাম : প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি সরবরাহ করে বাদাম। কাজুবাদাম মুখের ভেতরের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং দাঁতে লেগে থাকা আঠালো খাবার দূর করে। তবে মধু কিংবা সিরাপ মাখানো বাদাম আবার খাওয়া যাবে না। নইলে উপকারের বদলে অপকার হবে।
পেঁয়াজ : মুখে বাজে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করলেও দাঁতের জন্য পেঁয়াজ আবার উপকারী। ‘ক্যাভিটি’ এবং মাড়ির বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী কিছু নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়াকে সরাসরি আক্রমণ করে পেঁয়াজে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলো।
আপেল : মিষ্টি এবং অমীয় হওয়ার পরেও দাঁতের জন্য উপকারী এই ফল। আপেল কামড়ানোর সময় মুখের ভেতরে লালা তৈরি শুরু হয়, যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া অপসারনে সহায়ক হয়। তবে আপেল খাওয়ার পর কমপক্ষে আধা ঘণ্টা দাঁত ব্রাশ করা যাবে না। নইলে ব্রাশ করার কারণে দাঁতের ‘এনামেল’য়ের আরবণ ক্ষয় হয়ে যাবে।
পানি : কোনোরকম ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়াই মুখের ভেতরের জমে থাকা খাদ্যকণা, ব্যাকটেরিয়া ধুয়ে ফেলে পানি। ‘ফ্লুরাইড’ মিশ্রিত পানি, যা কিছু দেশে পাওয়া যায়, দাঁতের ক্ষয় রোধ করার জন্য বেশ উপকারী।
ডার্ক চকলেট : চকলেট খেয়েও দাঁতের যত্ন নেয়া সম্ভব। তবে তা হতে হবে ‘ডার্ক চকলেট’,যাতে চিনির পরিমাণ কম এবং থাকে প্রচুর পরিমাণে ‘পলিফেনলস’। চকলেটের মূল উপাদান কোকো’তে থাকা ‘পলিফেনলস’ দূর করে সেসব ব্যাকটেরিয়া যা ‘প্লাক’ ও অমীয় পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দায়ী। সংগৃহীত