ঈমানের বৈশিষ্ট্য

ঈমানের বৈশিষ্ট্য

আল হাদিসে লজ্জাকে ঈমানের শাখা বলা হয়েছে


হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমানের স্বরূপ এবং মানুষের চরিত্র ও আচরণের ওপর এর প্রভাবের বিষয় গুরুত্বের সাথে তুলে ধরতেন। অবশ্য তিনি ঈমানের ধরন ও প্রতিফলনের সব দিককে এক করে দেখতেন না, কিংবা আলাদা আলাদা না করে সামগ্রিকভাবে ব্যাখ্যা করতেন না। যাতে ঈমান বা আল্লাহতায়ালার ওপর বিশ্বাসের সুস্পষ্ট ও সর্বাঙ্গীণ চিত্র এবং বাস্তবে ঈমানদার বলতে কী বোঝায়, তা ফুটে ওঠে, সে জন্যই তিনি এমনটি করতেন।
রাসূলুল্লাহ সা: এ বিষয়ে একবারে মাত্র একটি পয়েন্ট সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করতেন। ছোট ছোট বক্তব্য দেয়া পছন্দ করতেন। বিশেষ কোনো উপলক্ষের সাথে যে কথাটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, কেবল সেটাই তিনি বলতেন। এভাবে তার বক্তব্যের গুরুত্ব শ্রোতারা উপলব্ধি করতে পারতেন।
হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সা:-এর এমন একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। এর ভাষ্য হলো : ঈমানের প্রায় ষাটটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। লজ্জা (আরবিতে ‘আল হায়া’) এগুলোর একটি (মুসলিম শরিফ)।
মূল আরবি ভাষ্য থেকে জানা যায়, রাসূলে করীম সা: উল্লেখ করেছেন, ঈমানের এসব গুণ বা বৈশিষ্ট্য একটি বৃক্ষের শাখার মতো। বলা নি®প্রয়োজন, গাছের শাখা-প্রশাখা শক্তি ও পুরুত্বের দিক থেকে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তেমনি ঈমানের শাখা বা বৈশিষ্ট্যগুলোও গুরুত্বের দিক দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। 
ঈমানের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো আল্লাহতায়ালার একত্বে বিশ্বাস এবং তাঁর প্রেরিত রাসূল হিসেবে হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি আস্থা। ঈমানের অপরাপর বৈশিষ্ট্যের গুরুত্ব একই সমান নয়। এমনকি, জনগণের চলাচলের পথ থেকে ক্ষতিকর বস্ত্র সরিয়ে দেয়ার মতো সামান্য কাজও ঈমানের বৈশিষ্ট্য।
আল হাদিসে লজ্জাকে ঈমানের শাখা বলা হয়েছে। কোনো কোনো সংস্কৃতিতে লজ্জাকে দেখা হয় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে। তবে ইসলামি সংস্কৃতিতে এটাকে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় যে, রাসূল সা: ঈমানের ষাটেরও বেশি বৈশিষ্ট্যের মধ্য থেকে ‘লজ্জা’কে আলাদা করে বা বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন। এর কারণ, যা অসুন্দর, অপ্রীতিকর, অযথার্থ কিংবা অগ্রহণযোগ্য সামাজিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, লজ্জা মানুষকে তা করা থেকে বিরত রাখে।
এভাবে লজ্জা মানুষের অভ্যন্তরীণ সংযমে পরিণত হয়। যথাযথ আচরণ বজায় রাখা এবং সঠিক মূল্যবোধ তুলে ধরার ক্ষেত্রে লজ্জা আমাদের সাহায্য করে। এ প্রসঙ্গে কেউ কেউ বলতে পারেন, লাজুক ব্যক্তি ভুল আচরণ কিংবা ন্যক্কারজনক কাজের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারে না। আসলে, এই অযোগ্যতা বা অক্ষমতা লজ্জার ফসল নয়। এটা চরিত্রের দুর্বলতা। সাধারণত দৃঢ় ঈমানের বলে এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা যায়। যখন আমরা লজ্জাজনিত সংযমের কথা বলি, আমরা কেবল বুঝিয়ে থাকি মন্দ, পাপপূর্ণ নতুবা সমাজে অগ্রহণীয় কাজ থেকে বিরত থাকাকে।
ইসলাম যে ধরনের লজ্জাকে উৎসাহ জুগিয়ে থাকে, তা ব্যক্তির কার্যকলাপে সর্বদাই প্রতিফলিত হয়। লজ্জার সর্বোচ্চ ধরন হলো, আল্লাহতায়ালা কোনো ব্যক্তিকে যা দিয়েছেন, তা তার অবাধ্যতামূলক পন্থায় ব্যবহারে লজ্জাবোধ করা।
মনে করুন, একজন ধনী লোক একটি নাইট ক্লাবের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন। আর এই ক্লাবে তখন এমন কোনো অনুষ্ঠান চলছে, যা দেখে দর্শকরা বিপুল করতালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করছে। এ অবস্থায় ধনী লোকটির ইচ্ছা হতে পারে নাইট ক্লাবে ঢোকার। তবে তিনি চিন্তা করে দেখলেন, স্বাস্থ্য, সম্পদসহ যা কিছু তার আছে, সেসব আল্লাহই তাকে দিয়েছেন। ক্লাবে প্রবেশমূল্য তার জন্য সামান্যই। কিন্তু তিনি অনুভব করেন, যদি তিনি সেখানে যান, তিনি এমন একটি কাজে অংশ নেবেন যা ইসলামে নিষিদ্ধ। এর মাধ্যমে আল্লাহর অবাধ্যতার পরিচয় দেয়া হবে সে জিনিস ব্যবহারের পন্থায়, যা তাকে আল্লাহ দিয়েছেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে, এমন কাজ আল্লাহতায়ালার অবমাননা। এই মানুষটির ঈমান এমন গর্হিত আচরণ করতে তাকে লজ্জাবোধ করাবে।
কোনো কোনো ইসলামি বিশেষজ্ঞ ঈমানের বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি তালিকা তৈরির প্রয়াস পেয়েছেন। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তালিকা করা যায়নি। কারণ ঈমানের কিছু বৈশিষ্ট্য পৃথকভাবে যেমন চিহ্নিত হতে পারে, তেমনি অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পৃক্ত বলে আলাদাভাবে উল্লিখিত না-ও হতে পারে।
ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোনটি গ্রহণযোগ্য, আর কোনটি নয়, সে ব্যাপারে পুরো জ্ঞান লাভ করা যায় কুরআন ও হাদিস থেকে।

লেখক : বিবিসিতে কয়েক বছর কাজ করার পর আরবি দৈনিক পত্রিকা আশ শারক আল আওসাত-এ কাজ করেছেন। এর সহযোগী প্রকাশনা, সৌদি আরবের ইংরেজি দৈনিক আরব নিউজ-এ ‘ইসলাম ইন পার্সপেক্টিভ’ নামের কলাম লিখছেন। মিসরের শহীদ সাইয়্যেদ কুতুবের লিখিত, বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ, ফি যিলালিল কুরআন (অর্থাৎ কুরআনের ছায়াতলে)-এর কয়েক খণ্ড ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। নির্বাহী পরিচালকÑ আল ফুরকান হেরিটেজ ফাউন্ডেশন।
ভাষান্তর : মীযানুল করীম