পাবনায় করোনার মধ্যেও চলছে প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য!

পাবনায় করোনার মধ্যেও চলছে প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য!

ছবি:সংগৃহীত

তোমরা দল বেধে বই পুস্তক নিয়ে কোথায় যাচ্ছো? এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনা।। কারণ বলতে বারণ। শিখিয়ে দিয়েছেন শিক্ষকগণ। ওরা সব শিক্ষার্থী। প্রাইভেট বা কোচিং থেকে ফিরছে বা যাচ্ছে।  করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে যখন সারাদেশে সতর্কাবস্থায় থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, মহামারির কারণে দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই মুহূর্তে পাবনা শহরসহ সব উপজেলায় এই নির্দেশ অমান্য করে অধিকাংশ অর্থলোভী শিক্ষক প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন দেদারছে।

এসব শিক্ষক তাদের  বাসা অথবা ভাড়া করা কক্ষে ব্যাচ করে একসঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে বসিয়ে এ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।স্থানীয় ব্যক্তিরা এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও ওই শিক্ষকেরা তা কানে তুলছেন না। পাবনা শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রকাশ্যেই প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য শুরু হয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে নির্ভয়ে শিক্ষকেরা প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি মধ্য শহরে প্রকাশ্যে বহুতল ভবনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক র‌্যান্ডাম কোচিং চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কিছু কিছু সুচতুর অর্থলোভী শিক্ষক কোন গোডাউন বা টিন শেড বা কোন বিল্ডিং বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ভিতরে ঢুকিয়ে বাইরে তালা ঝুলিয়ে ভিতরে পড়াচ্ছেন। আর এসময় অভিভাকরা বাইরে ঘোরাঘুরি করতে থাকেন। শিক্ষার ব্যাপারে নানা ধরণের প্রলোভন বা শিক্ষা জীবনের নানান কথা মোবাইলে অভিভাকদেরকে ভুলিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে প্রাইভেট বা কোচিং মুখী করছেন। অর্থের মোহের কছে করোনা তাদের কাছে যেন তুচ্ছ ব্যাপার। স্থানীয়রা জানান, প্রাইভেট পড়ানোর নামে যা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

কিছু কিছু এলাকাতে বিশেষ কৌশলে কোচিংয়ে ভর্তি শুরু হয়েছে। অভিভাবকরাও প্রাইভেট ও কোচিংয়ে সন্তানদের ভর্তি করাতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। অবশ্য সবই হচ্ছে গোপনীয় পরিবেশের মধ্যে। ভর্তির পোষ্টার প্রকাশ্যেই বিভিন্ন স্থানে সাটিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রাইভেট পড়ানোর সুবিধার জন্য শিক্ষকেরা বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়েছেন। প্রত্যেকের বাসায় রয়েছে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য বিশেষ কক্ষ। কক্ষগুলো বেশ ছোট হলেও সেখানে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বে  ঢুকিয়ে তাতে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থী বসানো হচ্ছে। এভাবে প্রতি ব্যাচে ২৫ থেকে ৩০ জন বা তারও বেশি শিক্ষার্থীকে পড়ানো হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকেরা অধিকাংশই বিভিন্ন সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। প্রাইভেট ও কোচিং নিষিদ্ধ করার পর বেশ কিছুদিন তারা পড়ানো বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু বর্তমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউ উল্লেখ করে সরকার সতর্কাবস্থা ঘোষণা করলেও তা আমলে না নিয়ে আবারও তারা আগের মতোই প্রায় প্রকাশ্যে প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য শুরু করেছেন।

অনেক অভিভাবক জানান, যখন করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে; ঠিক সেই মুহূর্তে কিছু বিবেকবর্জিত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। এব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ থাকাটা খুবই জরুরী বলে তারা মনে করেণ। অনেকে জানান, সকালে রাস্তায় বের হলে শিক্ষার্থীদের দল বেধে শিক্ষকদের বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে যেতে দেখা যাচ্ছে। এভাবে চললে করোনা সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রাইভেট পড়ান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক শিক্ষক জানান, অভিভাবকদের চাপে তার মতো কয়েকজন শিক্ষক প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। প্রাইভেট পড়ানোর কক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে বলে তিনি দাবি করেন।

অত্যন্ত সুনামধন্য একটি কোচিংয়ের পরিচালক বলেন,“দেশে বর্তমান করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারও সতর্কাবস্থা ঘোষণা করেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে কোন বিবেকবান শিক্ষকের উচিৎ নয়; এত বড় ঝুঁকির মধ্যে শিক্ষার্থীদের জড়ো করে পড়ানো।”

সরকারি স্কুলের একজন শিক্ষক বলেন, করোনার মত এত বড় ঝুঁকির মধ্যে কোন বিবেকবান শিক্ষক এভাবে দল বেধে শিক্ষার্থীদেরকে একত্রে পড়াতে পারেন না। এমন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ বলে তিনি মন্তব্য করেণ। 

শনিবার (২১ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে এ ব্যাপারে পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদের সাথে কথা বললে এব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলে তিনি জানান।