ঘাড় ব্যথার কারণ, উপসর্গ ও চিকিৎসা

ঘাড় ব্যথার কারণ, উপসর্গ ও চিকিৎসা

আজকাল কম বয়সী কিংবা স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েদেরও ঘাড় ব্যথা সমস্যা দেখা যাচ্ছে।

আনিছুর রহমান-

আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই জীবনের কোনো এক সময় ঘাড় ব্যথায় ভোগেন। মেরুদণ্ডের উপরের অংশকে আমরা সারভাইক্যাল স্পাইন বলে থাকি। মেরুদণ্ডের ওপরের সাতটি কশেরুকা ও দুই কশেরুকার মাঝখানের ডিস্ক, পেশি ও লিগামেন্ট নিয়ে সারভাইক্যাল স্পাইন বা ঘাড় গঠিত। এই ঘাড় ব্যথা সাধারণত মধ্য বয়সী মানুষের বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু আজকাল কম বয়সী কিংবা স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েদেরও এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এর জন্য মূলত বেশি সময় কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার বেশি দায়ী। তাছাড়া কাঁধে ভারী ব্যাগ বেশি সময় বহন করার কারণেও ঘাড় ব্যথা হতে পারে।

ঘাড় ব্যথা সাধারণত দুই ধরনের হয়: 
১.লোকাল বা স্থানীয় ব্যথা। 
২.রেফার্ড পেইন বা দূরে ছড়িয়ে যাওয়া ব্যথা। 

অনেক কারণে ঘাড় ব্যথা হতে পারে যেমন: 
১. সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস। 
২. সারভাইক্যাল স্পনডাইলাইটিস।
৩. সারভাইক্যাল স্পনডাইলিসথেসিস।
৪. সারভাইক্যাল রিবস।
৫. সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস।
৬. সারভাইক্যাল ডিক্স প্রলাপস বা ডিস্ক হারনিয়েশন, যার কারনে নার্ভের ওপর চাপ পরে।
৭. মাংসপেশী, হাড়, জয়েন্ট , লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি। 
৮. অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা বা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা। 
৯. উচ্চ রক্তচাপ। 
১০.অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয়। 
১১. রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস। 
১২.এনকাইলোজিং স্পন্ডালাইটিস। 
১৫. ফাইব্রোমায়ালজিয়া ইত্যাদি। 

উপসর্গ: 
১. ঘাড়ে ব্যথা এবং এই ব্যথা কাঁধ থেকে হাতের আঙুল পর্যন্ত যেতে পারে। 
২. হাতের আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব। 
৩. হাত ও আঙুল দুর্বল মনে হতে পারে। 
৪. ঘাড় কিংবা হাতের নিচের অংশ ভারী ভারী মনে হতে পারে, বিশেষ করে ঘুম থেকে উঠার পর। 
৫. ঘাড়ের মুভমেন্টে বা নামায পড়ার সময় সালাম ফিরাতে ব্যথা হতে পারে। 
৬. অনেক সময় এই ব্যথা শুধুমাত্র হাত কিংবা হাতের আঙুলে অনুভব হতে পারে।     
                       
ডায়াগনোসিস : একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক সাধারণত রোগীর হিস্ট্রি, ডারমাটোম, মায়োটোম এবং ফাংশনাল এক্সামিনেশনের মাধ্যমে কোন ধরণের সমস্যা তা নির্ণয় করে থাকে। তাছাড়া কিছু ক্ষেত্রে এক্সরে কিংবা এমআরআই করা লাগতে পারে।

চিকিৎসা :

চিকিৎসা দুই ধরনের আছে। 
১. কনজারভেটিভ চিকিৎসা। 
২. সার্জিকাল ম্যানেজমেন্ট।

কনজারভেটিভ চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে মেডিসিন এবং ফিজিওথেরাপি। তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াবিহীন আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি। যেখানে ঔষধবিহীন অত্যাধুনিক ম্যানুয়াল ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে সহজেই একজন রোগী ব্যথামুক্ত জীবনযাপন করতে পারেন। পক্ষান্তরে দীর্ঘদিন পেইন কিলার ব্যবহার আমাদের কিডনির জন্য ক্ষতিকর। 

ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধে কিছু পরামর্শ : 
১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না। 
২. মাথার ওপর ভারী ওজন বহন করবেন না। 
৩. খুব বেশি শক্ত কিংবা নরম বালিশ ব্যবহার করবেন না। 
৪. একাধিক বালিশ ব্যবহার করবেন না। 
৫. বেশি সময় একটানা কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করবেন না। 
৬. সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না। 
৭. কাত হয়ে শুয়ে দীর্ঘক্ষণ পড়বেন না বা টেলিভিশন দেখবেন না। 
৮. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন। 

লেখক: আনিছুর রহমান
ফিজিওথেরাপি এবং পুনর্বাসন বিষেশজ্ঞ,
আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
মগবাজার, ঢাকা।