বাতাসে পোড়া গন্ধ, কণ্ঠে আর্তনাদের সুর

বাতাসে পোড়া গন্ধ, কণ্ঠে আর্তনাদের সুর

আবু জাফর।

আবু জাফর-
বছরটা ঘুরতে না ঘুরতেই আমরা শুনতে পাই নানা জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের কথা। কেউ অগ্নি দেয় সাম্প্রদায়িক ইস্যু তে কেউবা দেয় রাজনৈতিক কোন্দলে, তবে যে অগ্নিকাণ্ড গুলো সবার মন নাড়া দেয় তা হল অসহায় বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা গুলো। বাংলাদেশে এগুলো নতুন নয়। বেশ কয়েকবার বড়সড় বস্তি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সারাদেশে সাড়া ফেলেছিল। তার মধ্যে অন্যতম হল আজ থেকে ঠিক ১০ বছর আগে ২০১০ সালের ৩রা জুন ঢাকার নিমতলীতে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। যা এখনও আমাদের অন্তর দগ্ধ করে বেড়ায় । এ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১১৯ জন লোক প্রাণ হারিয়েছিল। এমনকি বাংলাদেশ সরকার ৫ জুন, ২০১০ তারিখে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে। বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার থেকে এটার উৎপত্তি হলেও পরে তা আশেপাশের দোকানগুলোতে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যাদিতে ছড়িয়ে পরে। তখন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট টিম ক্ষতিগ্রস্থদের স্মরণে শোকসূচক কালো আর্মব্যান্ড পরিধান করে খেলায় অংশ নিয়েছিল। তখন সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একজোগে এরকম ঘটনা পুনরাবৃত্তি যেন না হয় তার জন্য শপথ নিয়েছিল। সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমাদের স্বরণ করে দেয় আসলেই ঐ দিনের সেই সভা-সেমিনার গুলো স্রেফ লোকদেখানো ছাড়া তেমন কোন কাজের কাজেই করেনি।

এক জরিপে উঠে আসে প্রায় ৭২ শতাংশ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বৈদ্যুতিক গোলযোগ, চুলা থেকে লাগা আগুন এবং সিগারেটের আগুন কিন্তু আফসোস হল তা থেকে বাঁচার উপায় জানার জন্য সাধারণ মানুষ ততটা আগ্রহী নয়। আবাসিক এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে মানুষজন সবচেয়ে বড় ভুল যেটি করেন তা হল অনেকে রান্নার পর চুলা জ্বালিয়ে রাখেন। চুলার আশপাশে অনেকেই শুকনো পদার্থ, কাগজ, কাপড় বা অন্যান্য দাহ্য পদার্থ রাখেন। শিশুদের হাতের নাগালে গ্যাসের চুলা ও ম্যাচের কাঠি অনেক সময় বিপদ ডেকে আনে। মশার কয়েল ও এ আগুন লাগানোর জন্য অনেকটা দায়ী। সুতরাং শুষ্ক ও দাহ্য পদার্থ চুলার কাছ থেকে সরিয়ে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। 

গত কয়েকদিন আগে রাজধানীতে ৩০ ঘণ্টার ব্যবধানে পুড়ে তিনটি বস্তি আগুনে পুড়ে ছাই কালশির অন্তত অর্ধ শতাধিক ঘরবাড়ি। ভাগ্যক্রমে জীবনটুকু হয়তো বেচেছে কিন্তু সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তারা। পরপর মহাখালির সাততলা বস্তি, মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লার বিহারিপট্টির পর এবার পুড়ে মিরপুর কালসির বি ব্লক বস্তি। রাতের গভীরে সবাই যখন ঘুমে বিভোর তখনই জ্বলে আগুনের লেলিহান শিখা। এতে কিছু বুঝে উঠার আগের পুড়ে ছাই হয় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। ঘুমের ঘরে সব হারিয়ে প্রাণ দৌড়ায় তারা। তাদের পিছনে ফেলে আসে সারাজীবনের সব আয়, সংসারের জিনিসপত্র, যদিও এগুলো তেমন দামি নয় কিন্তু তাদের জন্য এগুলোই ছিল স্বর্গতুল্য। প্রায় ঘন্টাখানেকে চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। বস্তির সবাই আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিক বললেও প্রভাবশালীগন বলছে দুষছেন অটোরিক্সার চার্জিং পয়েন্টকে।

শুষ্ক বস্তুর আগুন যেমন কাগজ, কাপড় বা গাছের পাতায় আগুন লাগলে নেভানোর সবচেয়ে ভালো উপায় পানি। তবে আমাদের জানা দরকার পেট্রল বা ডিজেলের মতো তেলেও আগুন লাগলে তাতে পানি ব্যবহার করলে বরং বিপদ বাড়ে। এক্ষেত্রে আগুন যদি ছোট হয় তবে বালি, বস্তা, কাঁথার মতো ভারি কাপড় দিয়ে সেই আগুন ঢেকে দিতে হবে। জ্বালানি তেলের আগুনে সবচেয়ে বেশি কাজ করে ফেনা জাতীয় পদার্থ। গ্যাসের আগুনে কার্বন ডাই-অক্সাইড সবচেয়ে ভালো কাজ করে। বিদ্যুতের আগুন লাগলে অবশ্যই 'মেইন সুইচ' বন্ধ করতে হবে। আর গ্যাসের আগুনের ক্ষেত্রে গ্যাসের পাইপ টিপ দিয়ে বন্ধ করে সরবরাহ কেটে দিতে হবে। এগুলো করলে হয়ত আগুনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমবে।

বিদ্যুতের তার সঠিক ভাবে নেয়া, অনেক বেশি মাল্টি-প্লাগ ব্যবহার না করা, বাড়ির বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার ক্ষমতার বাইরে বেশি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার না করা, বৈদ্যুতিক তার বা সরঞ্জামের সাথে পানির সংস্পর্শে না আনা। এগুলো সম্পর্কে সবার সজাগই দিতে পারে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার অসহায়দের সম্পতি আগুনে ঝলসানো থেকে মুক্তি। 

লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ,
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।