শীতে হাড়ের সুরক্ষায় করণীয়

শীতে হাড়ের সুরক্ষায় করণীয়

হাড় ও পেশির সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী শরীরচর্চা

তাপমাত্রা কমলে অনেকেরই হাড়ে ব্যথা হয়, যা দূরে রাখতে কিছু পন্থা অবলম্বন করা যায়। প্রচণ্ড গরম থেকে সাময়িক মুক্তি বয়ে আনা শীতকাল সবারই প্রিয়। বাহারি পোশাক, বেড়াতে যাওয়া, পিঠা উৎসব, অতিথি পাখি ইত্যাদি মিলিয়ে শীতকালটা আমাদের দেশে যেন উৎসবের ঋতু। তবে করোনাভাইরাস মহামারী সব উৎসবেই ভাটা ফেলবে। শুধু করোনাভাইরাসই নয়, রোগবালাইয়ের দিক থেকে শীতকাল সাথে নিয়ে আসে নানান সমস্যা। প্রথমেই বলতে হয় মৌসুমি সর্দিজ্বর, যাতে কমবেশি সবাই আক্রান্ত হবেই।
দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন হাঁপানি, বাত ইত্যাদিতে আক্রান্ত মানুষের কষ্ট বাড়ে এই শীতকালে। হাড়ের সমস্যায় ভোগা মানুষগুলোর জন্য শীতকাল কষ্টের সময়ই বটে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের জাসলোক হাসপাতালের ‘ডিপার্টমেন্ট অব রিউমাটোলজি’র ‘কনসালট্যান্ট অ্যান্ড অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর’ ডা: পুনিত মাশরু’র দেয়া তথ্যাবলম্বনে জানানো হলো এই ঋতুতে হাড়ের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ ও করণীয় সম্পর্কে। তিনি বলেন, ‘শীতকালে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে পরিবেশগত চাপে পরিবর্তন আসে, যা হাড়ের জোড়ের অভ্যন্তরীণ বায়ুচাপেও পরিবর্তন আনে। যাদের ইতোমধ্যে হাড়ের জোড়ে সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে এই অভ্যন্তরীণ বায়ুচাপে পরিবর্তনের কারণে জোড়ের দেয়ালে এবং স্নায়ুতে আরো বেশি চাপ পড়ে, যা ব্যথার তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।’
‘পরিবেশের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে জোড়ের ভেতরের তরলের ঘনত্ব বেড়ে যায়, ফলে তার আড়ষ্টতা বেড়ে যায়। আবার নড়াচড়ার অভাবে এই আড়ষ্টতা আরো বাড়ে, যা ব্যথা সৃষ্টি করে কিংবা ইতোমধ্যে থাকা ব্যথার তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।’
হাড় ও হাড়ের জোড় সুস্থ রাখতে করণীয়
শারীরিক পরিশ্রম বা শরীরচর্চা নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে। এতে রক্ত সঞ্চালন অব্যাহত থাকবে এবং তা শরীর গরম রাখবে। হাড় ও পেশির সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী শরীরচর্চা, পাশাপাশি তা জোড়ের ‘স্টিফনেস’ বা আড়ষ্টভাব কমাতেও অনন্য। এমন শরীরচর্চা বেছে নিতে হবে যা হাড় কিংবা জোড়ের ওপর চাপ ফেলে কম। ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে হালকা ‘স্ট্রেচিং’ বেশ উপকারী। ‘পশ্চার’ ঠিক করা এবং পেশি শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ‘পিলাটিস’ কার্যকর। জোড়ের ওপর চাপ কমায় এমন ব্যায়ামের মধ্যে সাঁতার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
খাদ্যাভ্যাসে বয়সের হিসাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি থাকতে হবে। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, কাঠবাদাম, সয়া ইত্যাদি ক্যালসিয়ামের আদর্শ উৎস। দুগ্ধজাত খাবার ভিটামিন ডি’র অন্যতম উৎস। এ ছাড়াও ডিম, সিরিয়াল ইত্যাদিতেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
তাপ পেশি শিথিল করে। তাই হাড়ের জোড়ে কিংবা পেশিতে ব্যথা হলে গরম ভাপ দেয়া যেতে পারে। একাধিক গরম কাপড় পরলেও কিছুটা একই ধরনের উপকার পাওয়া যায়। শরীর গরম থাকলে ব্যথা কম হবে। রাতে পর্যাপ্ত এবং নির্ভেজাল ঘুম অত্যন্ত জরুরি। পরিবেশ ঠাণ্ডা হলে মনে বিমর্ষভাব আসতে পারে। মন খারাপ থাকলে ব্যথার তীব্রতা বেশি মনে হতে পারে। তাই হাসি-খুশি থাকাটাও জরুরি।
যাদের বাতের সমস্যা আছে তাদের শীতের আগে থেকেই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। যেকোনো ব্যথা দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত তাদের খেয়াল রাখতে হবে, নতুন কোনো সমস্যা অনুভব করলে দ্রুত তা চিকিৎসককে জানানো।