কালবৈশাখী ঝড়ে নিহত ৮

কালবৈশাখী ঝড়ে নিহত ৮

ঝড়ে বিভিন্ন সড়কে গাছ পড়েছে।

মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী ছোবলে রোববার ঢাকায় গাছচাপা, ইটের আঘাত, দেয়ালচাপা এবং নৌকাডুবিতে দুই নারীসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকাডুবিতে নারী ও শিশুসহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে।

ঝড়ের কবলে পড়ে আহত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ১৮ জন। ঢাকা ছাড়াও বৃহত্তর সিলেটসহ দেশের কয়েকটি এলাকায়ও চলে কালবৈশাখীর তাণ্ডব।

মৌলভীবাজারে বজ্রপাতে মারা গেছে ২ শিশু। কালবৈশাখীর এমন তাণ্ডবের কারণে দেশের নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) সন্ধ্যায় এসব তথ্য জানিয়েছে।

সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে রাজধানী ঢাকার ওপর দিয়ে বয়ে যায় কালবৈশাখী ঝড়। কয়েক মিনিটের ঝড়ে গাছপালা ভেঙে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড ও ওভারহেড বোর্ড ভেঙে পড়ে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়।

বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ চলে যায়। ঝড়ের আগে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বজ্র ও প্রচণ্ড ধূলিঝড় বয়ে যায়। এরপরই শুরু হয় আসল কালবৈশাখী। তখন বাতাসের গতি ছিল ৭৪ কিলোমিটার। পরে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়।

মাত্র ২০ মিনিটে আবহাওয়া বিভাগ ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করে। রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় বজ্র বৃষ্টির সঙ্গে বড় বড় শিলা পড়ে। ঝড় স্বল্পস্থায়ী হলেও এর দু’ঘণ্টা পরও রাজধানীর আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন।

ঝড়ের সময় পুরানা পল্টন মোড়ে মল্লিক কমপ্লেক্সের ওপর থেকে ইট ও ফুলের টব মো. হানিফ (৫০) নামে এক পথচারীর মাথায় পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। পথচারীরা ধরাধরি করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত হানিফের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল লতিফ। তিনি ঢাকায় পরিবারসহ দক্ষিণ মুগদায় বসবাস করতেন। মল্লিক কমপ্লেক্সের কোন তলা থেকে ইট ও ফুলের টব পড়েছে তার অনুসন্ধান চলছে।

শেরে বাংলা নগরে ঝড়ের সময়ে গাছে চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন মিলি ডি কস্তা (৬০)। তার বাসা মণিপুরীপাড়ায়। তিনি সংসদ ভবন এলাকায় হাঁটতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন বলে জানান শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম।

মিরপুর থানার পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় নির্মাণাধীন একটি দেয়াল থেকে ইট পড়ে নিহত হন এক গাড়িচালক। তার নাম দুলাল মিয়া (৪০)। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক।

তার লাশ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। মিরপুর মডেল থানার এসআই আসিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কদমতলীর পলাশপুরে দেয়ালচাপা পড়ে মো. হাসান (৪০) নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কদমতলী থানার ওসি জামালউদ্দীন মীর। তিনি জানান, পলাশপুর ৫ নম্বর সড়কে একটি বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেয়ালচাপা পড়ে তিনি মারা যান।

ঝড়ের মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা ডুবে এক নারী ও তার পাঁচ বছরের ছেলেসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- রুমি আক্তার, তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে আরিফ হোসেন, তুহিন এবং সাব্বির হোসেন।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার এসআই রাসেল মোল্লা বলেন, কেরানীগঞ্জের মাদারীপুর ঘাট দিয়ে কামরাঙ্গীরচরে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাটি। মুহূর্তেই সেটি ডুবে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা  জানান, বাতাসে মেঘের দৌড়াদৌড়ির কারণে হালকা বিদ্যুৎ চমকানোর মতো ঘটনা ঘটছিল। সেইসঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। সব মিলে এই হঠাৎ ঝড় ও বৃষ্টিতে নীড়ে ফেরা কর্মজীবী ও মানুষ পথে বেকায়দায় পড়ে।

ঝড়ের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়েছে। গাছের ছোটখাটো ডাল-পাতায় রাস্তা ভরে যাওয়ায় যানজট তৈরি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়ে রাজধানীবাসী।

ঝড়ের সময়ে মগবাজারে আদ্-দ্বীন হাসপাতালের একটি দেয়াল ধসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের ডিউটি অফিসার আতাউর রহমান।

গুলশান-২-এর ১১৩ নম্বর রোডে প্রকৌশলী সালাউদ্দিনের গাড়ির ওপর গাছ ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে গাড়িটির সামনের কাচ ভেঙে চৌচির হয়ে যায়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। একই এলাকায় একটি সিএনজির ওপরও গাছ ভেঙে পড়ে বলে জানা গেছে।

ঝড়ের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, লালবাগ, বংশাল, আজিমপুর, শুক্রাবাদ, পান্থপথ, ধানমণ্ডি, কলাবাগান, মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যায়। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখাকালে অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎবিহীন ছিল।

ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) এক কর্মকর্তা জানান, ঝড়ের কারণে কোনো কোনো এলাকার গ্রিড বিপর্যয় হয়েছে। তবে এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ সন্ধ্যায় জানান, রোববারের এই কালবৈশাখী ঢাকায় এবারের মৌসুমের প্রথম আঘাত। এর আগে অবশ্য সিলেটে ঝড় হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এদিন খুলনার কিছু এলাকা বাদে প্রায় সারা দেশেই কালবৈশাখী আঘাত হেনেছে।

এদিকে দিনের বিভিন্ন সময়ে ঢাকার বাইরে বিশেষ করে দেশের পূর্বাঞ্চলে কালবৈশাখী ও বজ্রপাত হয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে বজ্রপাতে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিশুদের নাম সাদিয়া আক্তার (৬) ও মুন্নী আক্তার (৪)।

আবহাওয়াবিদরা জানান, সাধারণত ফেব্রুয়ারির শেষ থেকেই কালবৈশাখীর আনাগোনা চলে। তবে এবার এটা বিলম্বিত হয়ে মার্চের শেষদিন কালবৈশাখীর অভিষেক ঘটল। বাংলাদেশে এপ্রিল-মে এই দু’মাস কালবৈশাখীর মৌসুম।

বিএমডির এক সিনিয়র আবহাওয়াবিদ জানান, সন্ধ্যায় রাজধানীর ঝড় কমে গেলেও তা দেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চলে যাচ্ছে। এটি কক্সবাজার পর্যন্ত যাবে। ফলে রাতে দক্ষিণাঞ্চলেও কালবৈশাখীর ছোবল পড়তে পারে।

বিএমডির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বাংলাদেশে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

এতে বলা হয়, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।