করোনাকালে শিক্ষার অবস্থা

করোনাকালে শিক্ষার অবস্থা

ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর

ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর-

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ১৬ জানুয়ারী পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। করোনা অতিমারী প্রতিরোধের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সামাজিক দূরত্বের উপর গুরুত্বারোপ করলে বাংলাদেশে বিগত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও একই ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভারতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় ১৬ মার্চ থেকে। পাকিস্তানে ১৩ মার্চ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রেখে খোলা হলেও আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ২৬ নভেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারী পর্যন্ত। নেপালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয় ১৯ মার্চ থেকে। ইউনেস্কো জানাচ্ছে যে, সারা পৃথিবীতে ১৩০ কোটি শিক্ষার্থী এর শিকার। ভারতে এর সংখ্যা ৩২ কোটির উপরে। বাংলাদেশে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর পড়া-লেখা ঝুঁকিতে পড়েছে। এর মাঝে প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ১ কোটি ৭৫ লাখ। মাধ্যমিকের ১ কোটি ২৫ লক্ষ। বাকিরা শিক্ষার অন্য পর্যায়ে।

বাংলাদেশে এ বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষাও হয়নি। বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীরা ওপরের শ্রেণিতে উঠবে। বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে সেশনজট বাড়ছে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাস ও সেমিস্টার ভিত্তিক ভর্তি অব্যাহত রেখেছে। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আটকে থাকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়া সিদ্ধান্ত হয়েছে।  

বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে আর্থিক সংকটে। বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ ফি আদায় করতে না পারার ফলে শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মীদের ঠিকমতো বেতন-ভাতাদি দিতে পারছে না। বহু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বিশেষত; কিন্ডার গার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। বহু শিক্ষক পেশা পরিবর্তন করে মানবেতর জীবনযাপন করে টিকে থাকার সংগ্রামরত।

করোনার এই ধাক্কা জীবনকে যেমন ঝুঁকির মাঝে ফেলেছে, জীবিকাকে করে তুলেছে অনিশ্চিত, তেমনি শিক্ষার উপর বিস্তার করে এক সুদূরপ্রসারী কালো মেঘ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা প্রায় অসম্ভ ব্যাপার। অনলাইন শিক্ষায় সবার সমান অংশ গ্রহণের সুযোগ নেই, তাই বৈষম্য বাড়বে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় যখন অনলাইনে ক্লাস চালু রেখে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট বৈষম্য বাড়বে।  বিপর্যস্ত জীবিকার কারণে বহু শিক্ষার্থীর আর ফেরা হবে না লেখা-পড়ায়। সব মিলিয়ে বৈষম্যপূর্ণ সমাজে শিক্ষার মাধ্যমে বৈষম্য কমিয়ে আনার যে সুযোগ তৈরী হয়েছিল, তা বড় ধরণের ধাক্কা খাচ্ছে করোনার কারণে। বৈষম্য বাড়লে সমাজিক অস্থিরতা বাড়বে-স্বাভাবিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে।  

আমাদের সকলের সম্মিলিত স্বাস্থ্যবিধির কঠোর অনুশাসন সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে পারে, যার ফলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসতে পারে।   এক্ষেত্রে যত দেরী হবে তত অসম্ভব হয়ে পড়বে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা। আমাদের সকলের সম্মিলিত বোধোদয় আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে পারে। 

লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও 
সম্পাদক: নিউজজোনবিডি ডট কম।