গুচ্ছ পদ্ধতিতে ইবি: শিক্ষকদের অসন্তোষ

গুচ্ছ পদ্ধতিতে ইবি: শিক্ষকদের অসন্তোষ

ফাইল ছবি

ইবি প্রতিনিধি: কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) গুচ্ছ পদ্ধতিতে যাবে না এমন সিদ্ধান্ত হলেও এর পক্ষে মত দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। গত পহেলা ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) গৃহীত সিদ্ধান্তের সাথে তিনি একমত পোষণ করেন বলে জানা গেছে। সভার সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে উপাচার্যের একপাক্ষিক মতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

জানা যায়, গত ৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতির বিষয়ে ৩৪টি বিভাগের সভাপতির মতামত নেন উপাচার্য। এতে একটি বিভাগ ব্যতিত সব বিভাগই গুচ্ছ পদ্ধতিতে না গিয়ে প্রচলিত নিয়মে পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মত দেন। ফলে সভায় প্রচলিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে গত পহেলা ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সাথে ইউজিসির সভায় সমন্বিত পদ্ধতির পক্ষে মত দেন উপাচার্য। 

শিক্ষকদের দাবি, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্ত্বশাসন ব্যাহত হবে। কেননা, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভায় শিক্ষকদের গৃহীত সিন্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গৃহীত হয়। কিন্তু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা কমে যাবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। যা স্বায়ত্ত্বশাসনের পরিপন্থী। এছাড়াও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব ও ইসলাম শিক্ষা অনুষদ দেশের একটি স্বতন্ত্র অনুষদ। সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে এই অনুষদের পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রশ্নপত্র প্রণয়ন নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন অনুষদটির শিক্ষকরা। 

প্রথমে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তের পর আবার সমন্বিত পদ্ধতিতে যাওয়ায় মত দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন আজাদ বলেন, ‘কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় না যাওয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পূর্বের নিয়ম অনুসারে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু হঠাৎ করেই গুচ্ছ পদ্ধতিতে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মর্মাহত করেছে। এই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষায় শ্রেণীবৈষম্য গড়ে তুলবে এবং গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হবে মনে করি।

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে উপাচার্যের সম্মতির বিষয়টি আরও সুচিন্তিত হওয়া উচিৎ ছিল। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতিটা এখনো স্পষ্ট নয়। এরকম একটি অস্পষ্ট বিষয়ে অংশগ্রহণ করা সমীচীন নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমরাও আগের মত স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিতে আগ্রহী। কিন্তু আমাদের একটা সিদ্ধান্ত ছিল যে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার বা ইউজিসি যদি সমন্বিত পদ্ধতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে আমরা সে পদ্ধতিতে যাব। তাছাড়া আগামী ২২ ডিসেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।