হেপাটাইটিস বি পজিটিভ যেভাবে বুঝবেন

হেপাটাইটিস বি পজিটিভ যেভাবে বুঝবেন

ফাইল ছবি

ডা. শেখ মোহাম্মদ নূর-ই-আলম

বিদেশে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্বেছায় রক্তদান কিংবা গর্ভকালীন রক্ত পরীক্ষা করতে গিয়ে অনেকের হেপাটাইটিস বি এবং কখনো কখনো হেপাটাইটিস সি ধরা পড়ে। অনেকে একেবারে ভেঙে পড়েন বা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কারণ অনেকের ধারণা, হেপাটাইটিস বি বা সি পজিটিভ মানেই হলো লিভার সিরোসিস, নিশ্চিত মৃত্যু। 

হেপাটাইটিস বি পজিটিভ মানে কী?

কোনো ব্যক্তির হেপাটাইটিস বি পজিটিভ মানে নিচের যেকোনোটি হতে পারে: 

১. তিনি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের ইনকিউবেশন বা স্ফুরণপর্বে আছেন

২. বি ভাইরাস দিয়ে একিউট হেপাটাইটিস (স্বল্পমেয়াদি প্রদাহ) হয়েছে

৩. বি ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছিল এবং তা থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন

৪. উপসর্গ ছাড়াই ভাইরাসের এন্টিজেন বহন করছেন কিংবা

৫. তিনি হেপাটাইটিস বি জনিত দীর্ঘমেয়াদি রোগাক্রান্ত।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ইনফেকশনের ইনকিউবেশন বা স্ফুরণপর্ব ৩০-১৮০ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকতে পারে। সাধারণত এ সময় অবসাদগ্রস্ততা, পেটে অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। শারীরিক উপসর্গ বা জন্ডিস দেখা দেওয়ার বেশ কয়েক সপ্তাহ আগেই HBsAg পজিটিভ দেখা দেয়। এ সময় লিভার এনজাইমগুলোও বাড়তে পারে।

একিউট হেপাটাইটিস বি–এর ক্ষেত্রে সংক্রমণের এক থেকে চার মাস পর সাধারণত উপসর্গ দেখা দেয়। শতকরা দুজনের ক্ষেত্রে লিভার ফেইলিউর হতে পারে। বড়দের ক্ষেত্রে শতকরা ৯৫ জন শরীর থেকে সংক্রমণ দূর করতে সক্ষম হয়ে থাকেন। 

ক্রনিক (দীর্ঘমেয়াদি) হেপাটাইটিস বি–এর ক্ষেত্রে HBsAg সাধারণত ছয় মাসের বেশি সময় যাবৎ প্রদাহ উপস্থিত থাকে। নবজাতকের ইনফেকশনের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ, এক থেকে পাঁচ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ২০-৫০ শতাংশ, বড়দের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের কম লোক ক্রনিক হেপাটাইটিস বি–তে আক্রান্ত হতে পারেন। ক্রনিক ইনফেকশনের অবশ্য মাত্রাভেদ রয়েছে। কখনো খুব সক্রিয় আবার কখনো খুব নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে। 

 রক্ত পরীক্ষায় হেপাটাইটিস বি কিংবা সি ধরা পড়লে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে চিকিৎসক, লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। নিশ্চিতকরণ পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাসের উপস্থিতি ও সক্রিয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় অবস্থায়ও দীর্ঘদিন থাকতে পারে। সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে ক্রনিক হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস নিয়েও ভালো থাকা যায়। ভাইরাস বহন করেও চাকরি, দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে কোনো বাধা নেই। ভেঙে পড়বেন না, সঠিক চিকিৎসা নিন। ঝাড়ফুঁক, কবিরাজি, হোমিওপ্যাথি, পানিপড়া, ডাবপড়া থেকে দূরে থাকুন।

ডা. শেখ মোহাম্মদ নূর-ই-আলম, সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।