"আমাদের আনন্দ উপভোগ"

"আমাদের আনন্দ উপভোগ"

শামীম ওসমান

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের একটি উক্তি দিয়ে শুরু করছি "সব মানুষের জীবনেই অপূর্ণতা থাকবে । অতি পরিপূর্ণ যেসব মানুষ তাকে জিজ্ঞেস করলে সেও অতি দুঃখের সঙ্গে তার অপূর্ণতার কথা বলবে । অপূর্ণতা থাকেনা শুধু বড় বড় সাধক ও মহাপুরুষদের।" এ পৃথিবীর জীবন ক্ষণস্থায়ী যেকোনো মানুষের জীবনে পৃথিবী ছিল না । এখন আছে ভবিষ্যতে যে কোন মুহূর্তে থাকবে না। জীবনের দীর্ঘতা কত সময় পর্যন্ত কোন মানুষকে প্রশ্ন করলে সে কখনোই বলতে পারবে না। পারার কথাও না, কারন এ বিষয়ে তার কাছে কোনো জ্ঞান দেওয়া হয়নি। জীবন মরণ কোন প্রশ্নের উত্তরই কোন মানুষের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয। মানুষের জীবনে সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা পাশাপাশি থাকবেই । কেননা যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন সে আল্লাহ বলেছেন " সুখের সাথে দুঃখ রয়েছে" । এখানে আমাদের আনন্দ উপভোগ বলতে বিশেষ করে আমরা যারা ইসলামে বিশ্বাসী এবং নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করি নিজেদের বিশ্বাস ও বাস্তব জীবনের পালনীয়, করণীয় কার্যবিধিতে একমাত্র বিধি-বিধান হিসেবে নিয়ম কাঠামো হিসেবে ইসলামকে মেনে নিয়েছি তাদেরকে বোঝানো হয়েছে।কেননা ব্যক্তির বিশ্বাসের উপর কর্ম নির্ধারণ হয় । আর প্রকৃত বিশ্বাসই মানুষকে যেকোনো কাজের দিকে ধাবিত করে । আমরা মুসলিম হিসেবে বিশ্বাস করি আল্লাহ নবী রাসুল ফেরেশতা আখেরাতের জীবন। পরকালের শাস্তি,শান্তি। আমাদের বিশ্বাসগুলো একমুখী নয়। আমাদের বিশ্বাস হলো অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকার করা এবং তদনুসারে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা। ইসলামের যাবতীয় বিষয়ের প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস মৌখিক স্বীকৃতি তদনুযায়ী কাজ করার নাম হলো ঈমান (বিশ্বাস)। আমাদের বাস্তব জীবনে আনন্দ উপভোগের পন্থা আমরা নিজেরাই নির্ধারণ করবো। কোন পন্থায় আনন্দ উৎসবের আয়োজন করব এবং সেগুলো আমাদের বিশ্বাসের সাথে কতটুকু সম্পর্কযুক্ত তা আমরা সর্বসময় বিবেক-বিবেচনা দিয়ে এবং বিধিবদ্ধ নিয়মের আলোকে যাচাই বাছাই করেই করতে হবে। মানুষের জীবনে শুধু দুঃখ থাকে না আর একজন মানুষ সারা জীবন কান্নাকাটি করেই জীবন কাটায় না। তবে দুঃখের পাশাপাশি সুখ থাকবে এটাই চিরন্তন সত্য। তবে ধনী গরিবের আনন্দ উপভোগের সামাজিকভাবে কিছুটা তারতম্য রয়েছে এবং এর প্রভাবেরও ভিন্নতা রয়েছে।বর্তমানে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে আনন্দ উপভোগের মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনকে এমনভাবে প্রাধান্য দিচ্ছি যা আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য কে ভুলিয়ে দিয়েছে।যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তিনি পৃথিবীর জীবনকে এমন ভাবে উপস্থাপন করেছেন এ আয়াত ও হাদিস গুলো জানার মাধ্যমে আমরা বাস্তব শিক্ষা নিতে পারি। এক.তিনি বলেছেন: “তোমার জেনে রাখো যে, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারষ্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। এর উপমা বৃষ্টি; যার দ্বারা উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, তারপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তা পীতবর্ন দেখতে পাও, অবশেষে তা টুকরো-টুকরো (খড়-কুটায়) পরিণত হয় এবং পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।” [সূরা হাদীদ ২০ আয়াত] দুই. আল্লাহ তাআলা বলেন: “বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো বৃষ্টির মত, যা আমি আসমান হতে বর্ষণ করি। অতঃপর তার দ্বারা উৎপন্ন হয় ভূপৃষ্টের উদ্ভিদগুলো অতিশয় ঘন হয়, যা থেকে মানুষ ও পশুরা ভক্ষণ করে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে এবং তার মালিকরা মনে করে যে, তারা এখন তার পুর্ন অধিকরী, তখন দিনে অথবা রাতে তার উপর আমার (আযাবের) আদেশ এসে পড়ে, সুতরাং আমি তা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেই, যেন গতকাল তার অস্তিত্বই ছিল না। এরুপেই আয়াতগুলোকে আমি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য বিশদরূপে বর্ণনা করে থাকি”। (সূরা ইউনুস ২৪) তিন. রাসূলুল্লাহহ (সাঃ) বলেছেন, “দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট ও সবুজ শ্যামল এবং আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধি করেছেন। তারপর তিনি দেখবেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ কর। অতএব তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান হও ও নারীজাতির ব্যাপারে।” [মুসলিম ২৭৪২, তিরমিযী ২১৯১] চার. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: নবী (সাঃ) বলেছেন, “হে আল্লাহ! আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন।” (সহীহুল বুখারী ২৮৩৪,২৮৩৫) পাঁচ. নবী (সাঃ) বলেছেন, “তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে (সঙ্গে যায়) দাফনের পর দুটি ফিরে আসে, আর একটি তার সাথেই থেকে যায়। সে তিনটি হল, (এক) তার পরিবারবর্গ, (দুই) তার মাল, (তিন) তার আমল। দাফনের পর তার পরিবারবর্গ ও মাল ফিরে আসে। আর তার আমল তার সাথেই থেকে যায়।” (সহীহুল বুখারী ৬৫১৪, মুসলিম ২৯৬০) উক্ত আয়াত হাদীস থেকে আমরা শিক্ষা পেলাম দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী পরকালের জীবনই চিরস্থায়ী। যে জীবন থেকে আমরা আর কখনো ফিরে আসবো না। তাই এখনি সময় আমাদের নিজেদের সংশোধন করে চিরস্থায়ী জীবনের প্রস্তুতি নেওয়ার । কেননা সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। বিখ্যাত একটি কবিতার লাইন দিয়ে শেষ করছি " খেলায় মজিয়া শিশু কাটায়ো না বেলা, সময়ের প্রতি কভু করিওনা হেলা, আজি যে সময় গত হইল তোমার আসিবেনা পুন: তাহা আসিবে না আর । তাই বলি বৃথা কাল করিও না ক্ষয়, আপনার কাজ কর থাকিতে সময়।

শামিম ওসমান

লেখক, গবেষক