পাবনার মাঠভরা সূর্যমুখীর হাসির কিরণ ‘আমি সূর্যমুখী ফুলের মত-দেখি তোমায় দূর থেকে’

পাবনার মাঠভরা সূর্যমুখীর হাসির কিরণ ‘আমি সূর্যমুখী ফুলের মত-দেখি তোমায় দূর থেকে’

ফুলের সৌন্দর্য দেখতে এসে ফুল নষ্ট করেন দর্শনার্থীরা। তাইতো বাঁশের লাঠি নিয়ে দাড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন পাহারাদার। ছবি: পাবনা প্রতিনিধি

এটি কোন বিছানার চাদর বা কোন নকশীকাঁথা নয়। এটি পাবনা বিএডিসি’র বীজ তৈরির মাঠ। যেখানে আবাদ করা হয়েছে ব্যবহারে সূর্যমুখী। সেই সূর্যমুখী ফুল যেন ফুলপ্রেমীকদেরকে আলিঙ্গন করছে। আর দূর-দূরান্তের ফুলপ্রেমীকরা ছুঁটছেন সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য পাবনার এই বিএডিসির মাঠে। তাই তো কবি কাজী নজরুল ইসলাম গান লিখেছেন ‘আমি সূর্যমুখী ফুলের মত-দেখি তোমায় দূর থেকে, দলগুলি মোর রেঙ্গে ওঠে-তোমার হাসির কিরণ মেখে, দেখি তোমায় দূর থেকে--নিত্য জানাই প্রেম-আরতি, যে পথে নাথ-তোমার গতি ওগো আমার ধ্রবজ্যোতি, সাধ মেটে না তোমায় দেখে, দেখি তোমায় দূর থেকে---।

পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের কোল ঘেঁষে উত্তরা লের বিখ্যাত বাণিজ্যিক এলাকা টেবুনিয়ায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) এর বীজ উৎপাদনের কৃষি খামার। সেখানে  উৎপাদন করা হয়েছে মনোমুগ্ধকর, চোখ ঝলসানো এই সূর্যমুখীর আবাদ। মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহনগুলোর যাত্রীদের যেন হাতছানি দিচ্ছে দৃষ্টি নন্দিত সূর্যমুখী ফুল। কোন সুগন্ধ না থাকলেও চোখ আকৃষ্ট করা সৌন্দর্য এই ফুল দেখতে প্রতিদিন পরিবার পরিজন নিয়ে দল বেধে মানুষ ভীড় করছেন ফুলের মাঠে। দর্শনার্থীরা ফুলে হাত বুলালেও তাদের সাথে থাকা ছোট ছেলে-মেয়েরা অনেক সময় ফুল ছেঁড়ার জন্য উৎফুল্লহ হয়ে ওঠে। সব মিলে ফুল রক্ষা করতে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ  থেকে পাহারাদার রাখা হয়েছে। ফুল রক্ষা করতে পাহারাদার এক হাতে বাঁশের লাঠি, আরেক হাতে বাঁশি বাজিয়ে সতর্ক করছেন ফুলপ্রেমিকদেরকে। তবুও চরম বেগ পেতে হচ্ছে ফুল রক্ষায়রত পাহারাদারকে।

এদিকে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত: তেল আসে সরিষা, চিনাবাদাম, তিসি, সূর্যমুখী, কালোজিরা, ভ্যান্না, নারিকেল তেল থেকে। প্রতি বছর স্বল্পাকারে সূর্যমুখী আবাদ করা হলেও এবার এ আবাদে সরকার কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ায় বেশি পরিমাণ আবাদ হয়েছে। জেলায় এবার ২ মেট্রিক টন সূর্যমুখীর তেল উৎপাদনের লক্ষ্যে ২০ (বিশ) হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সূর্যমুখী আবাদে কৃষকরা ঝুঁকছে বেশি বিধায় আবাদের পরিধিও বিস্তৃতি লাভ করছে। তাই কৃষি বিভাগ থেকে জেলায় এ বছর ২০ হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কৃষক প্রায় তার দ্বিগুন অর্থাৎ ৩৫ হেক্টর সূর্যমুখী আবাদ করেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সরিষা ক্ষেতের ন্যায় সূর্যমুখী মাঠে মধুর চাষ হয়ে থাকে। তাই মৌয়ালীরা সূর্যমুখী ফসলের মাঠে বক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করে থাকেন।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক (ডিডি) মোঃ আবদুল কাদের বলেন, “সূর্যমুখী তেল খুবই স্বাস্থ্যসম্মত ও উপকারী। এ তেল ১০০ শতাংশ কোলেস্টেরল মুক্ত। আয়র্বেদীক চিকিৎসা সেবায় সূর্যমুখীর বিশেষত: রয়েছে ব্যাপক। সূর্যমুখী বীজ স্বাস্থ্যকর এবং প্রিমিয়াম মানের। সূর্যমুখীর কাঁচা বীজও খাওয়া যায়। সূর্যমুখী ঘান ভাঙ্গিয়েও তেল তৈরি করা যায়। কোলেস্টেরল মুক্তসহ বিভিন্ন উপকারীতা সম্পর্কে জানতে পেরে মানুষ এ তেল ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছে বেশি। মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় আবাদের পরিধিও বিস্তৃতি লাভ করছে। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে সূর্যমুখী আবাদের ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাই সূর্যমুখী আবাদের প্রতি কৃষকদের আকৃষ্ট করতে কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের প্রশিক্ষণলব্ধ কৃষি কর্মীরা কৃষকদেরকে সূর্যমুখী আবাদের প্রতি আকৃষ্ট করাসহ হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ, বীজসহ বিভিন্ন ধরণের সাহায্য সহযোগিতা করছেন।