কাশ্মির ইস্যুতে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকির কথা বললেন ইমরান খান

কাশ্মির ইস্যুতে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকির কথা বললেন ইমরান খান

ফাইল ছবি।

ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা ও ৩৫-এ ধারা বাতিলের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু এখন কাশ্মির। আর ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনা পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নেয়ার বড় ঝুঁকি রয়েছে বলে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কাতারভিত্তিক সংবাদসংস্থা আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, এমন যুদ্ধ হলে কাশ্মির ও নিজেদের স্বাধীনতার জন্য মৃত্যু পর্যন্ত যুদ্ধ করবে পাকিস্তান। কাশ্মির সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হলে তাতে পুরো বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য পাকিস্তানের সামনে খুব অল্প উপায়ই আছে। তিনি বলেন, কাশ্মিরে ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আমরা আন্তর্জাতিক সংগঠনের কাছে যাওয়া ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারি না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে ওঠা এসব আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রধান সংগঠন হলো জাতিসঙ্ঘ।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আরো বলেন, কাশ্মির ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় দেশগুলোর দ্বারস্থ হয়েছে পাকিস্তান। নয়াদিল্লী কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হালকা যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে অর্থ্যাৎ উদাসীনতার বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলো, বড় বড় পরাশক্তি দেশগুলো অর্থনীতির কথা চিন্তা করছে। কিছু দেশ ভারতকে ১০০ কোটি মানুষের একটি বড় বাজার হিসেবে দেখছে। তারা এটা অনুধাবন করছে না যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কাশ্মির ইস্যুতে যদি এখনই হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে তা যে করুণ পরিণতি বয়ে আনবে তাতে শুধু এই উপমহাদেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন নয়। পুরো বিশ্বের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেছেন, কাশ্মির ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘দুর্ঘটনাক্রমে যুদ্ধ’ শুরু হয়ে যেতে পারে। এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত কিনা তা জানতে চাইলে ইমরান বলেন, অবশ্যই একমত। এখন যা ঘটছে তা হলো, ভারত কাশ্মিরে বড় মাপের অথবা ছোট মাপের গণহত্যা চালাচ্ছে। কাশ্মিরের জনগণের ওপর যে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানোর পাশাপাশি বাড়িঘরে আক্রমণ করা হচ্ছে, আমার মনে হয় না- নাৎসী জার্মানির পর তা আর কোথাও হয়েছে।

ইমরান খান বলেন, টানা ৬ সপ্তাহ ধরে কাশ্মিরের ৮০ লাখ মুসলিম অবরুদ্ধ। আর কাশ্মির ইস্যু ভারত ও পাকিস্তানের উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার কারণ হলো- কাশ্মিরে অবৈধ দখলদারিত্ব বাড়ানো ও কাশ্মিরের গণহত্যার দিক থেকে সবার দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে ভারত। তারা সন্ত্রাসে সমর্থন দেয়ার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে মনোযোগ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনী আত্মঘাতী হামলার শিকার হওয়ার পরও একই কাজ করেছিল ভারত। হামলার জন্য তারা পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল এবং পাকিস্তানে বোমা মেরেছিল। তাই আমাদের আশঙ্কা, আবারও সেই একই ঘটনা ঘটবে। কারণ, কাশ্মিরে ভারত যা করছে, তার প্রতিবাদে কাশ্মিরিরা অবশ্যই প্রতিবাদ বিক্ষোভে রাস্তায় নামবে। এরপর সেই প্রতিবাদ বিক্ষোভের অর্থ্যাৎ আন্দোলনের জন্য ভারত দায়ী করবে পাকিস্তানকে। এর উদ্দেশ্য একটাই, কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর চালানো গণহত্যা থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরিয়ে নেয়া।

পারমাণবিক অস্ত্র প্রথম ব্যবহার করা হবে নাকি আক্রান্ত হলে ব্যবহার করা হবে- এ বিষয়ে পাকিস্তানের নীতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, এ বিষয়ে কোনো দ্বিধা নেই। আমি বলেছি, পাকিস্তান কখনো আগে যুদ্ধ শুরু করবে না। এ বিষয়ে আমি আবারও পরিষ্কার করে বলছি। আমি শান্তিকামী, যুদ্ধবিরোধী। তা সত্ত্বেও আমি পরিষ্কার করে বলছি, যখন দুটি পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দেশ যুদ্ধ করে- যদি তা প্রচলিত যুদ্ধও হয়- তবু তা একটি পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নেয়ার খুব বেশি সম্ভাব্যতা থাকে। যদি এমন প্রচলিত যুদ্ধ করতেই হয় তাহলে নিজেদের স্বাধীনতার জন্য মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করবে পাকিস্তান।

ইমরান খান বলেন, যখন পারমাণনিক অস্ত্রধর একটি দেশ মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করে, তখন এ যুদ্ধের ফলে করুণ পরিণতির সৃষ্টি হয়। এ জন্যই আমরা জাতিসঙ্ঘ ও প্রতিটি আন্তর্জাতিক ফোরামের দ্বারস্থ হচ্ছি এবং তাদেরকে এখনই পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ, এমন যুদ্ধ, বিপর্যয় ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে।

এ মাসেই শেষের দিকে বসছে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন। এই অধিবেশনে যোগ দেবেন ইমরান খান। সেখানে কাশ্মির ইস্যুটি তুলে ধরবেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলবো। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে যে কয়েকটি দেশ আছে তার মধ্যে পাকিস্তান অন্যতম। এ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবো। এরপরে কথা বলবো ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বে ক্রমবর্ধমান ইসলামভীতি নিয়ে। এই ইসলামভীতির কারণে বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে এবং ভারতে মুসলিমরা দুর্ভোগের শিকার হন। আর জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে আমার আলোচনার প্রধান বিষয় হবে কাশ্মির পরিস্থিতি।

এদিকে কাশ্মির ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবের বিষয়ে আল জাজিরাকে ইমরান খান বলেন, এমন প্রস্তাব দেয়ার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাই। যদি তিনি এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন, গুরুত্ব দিয়ে হস্তক্ষেপ করেন, তাহলে এ সমস্যার একটি সমাধান হবে বলে নিশ্চয়তা দেয়া যায়। ইমরান খান বলেন, যদি কাশ্মির ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ নাও করে, তবু জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিজেদের ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারে ওয়াশিংটন।