আবারো ভয়াবহ রূপ নিবে ডেঙ্গুর !

আবারো ভয়াবহ রূপ নিবে  ডেঙ্গুর !

ফাইল ছবি।

ডেঙ্গুর শেষ সেরুটাইপটি রয়েই গেছে। আরো একটি ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরুটাইপ। এগুলো ডেন১, ডেন২, ডেন৩ ও ডেন৪ নামে পরিচিত। চার সেরুটাইপের তিনটিই ২০০০ সাল থেকে প্রকাশ পেয়েছে। চলতি মওসুমে ডেঙ্গুর তিন নম্বর টাইপটি বেশি পাওয়া যাচ্ছে ল্যাবরেটরি টেস্টে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ডেন২ বেশি আক্রান্ত করেছে। একই সাথে ওই সময়ে ডেন১ও ছিল। ২০১৭ সালেও সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করে ডেঙ্গুর ডেন২ সেরুটাইপ। সে বছর নতুন করে ডেন৩ সেরুটাইপ পাওয়া যায়। ২০১৮ সালেও ডেন২ বেশি আক্রান্ত করেছে। একই সাথে ডেন৩ ও ডেন১ সেরুটাইপও ছিল। চলতি বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করেছে ডেঙ্গু ভাইরাসের ডেন৩ সেরুটাইপ। একই সাথে ডেন১ ও ডেন২ পাওয়া যাচ্ছে।

অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, ডেঙ্গু ভাইরাসের যেকোনো একটি সেরুটাইপ কাউকে আক্রান্ত করলে তা পরবর্তী সময়ে ওই মানুষের দেহে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। একই সেরুটাইপের ডেঙ্গু আবার একই মানুষের দেহে প্রবেশ করলে তার আর কোনো ক্ষতি করতে পারে না। যেমন চলতি বছর বেশির ভাগ ডেঙ্গু রোগী ডেন৩ সেরুটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেন৩ সেরুটাইপ বহন করছে এমন মশা ভবিষ্যতে একই মানুষকে কামড়ালে তার আর ডেঙ্গুজ্বর হবে না যদি না অন্য কোনো সেরুটাইপ তার দেহে প্রবেশ করে। ডেঙ্গুর সেরুটাইপ ডেন৪ এখন পর্যন্ত ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায়নি। মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার না করলে সেরুটাইপ ডেন৪ সামনের দিনগুলোতে বিপজ্জনক হয়ে আসতে পারে। তবে আশার কথা হলো  চলতি বছর ব্যাপক ভিত্তিতে মশক নিধন কার্যক্রম চালানো হয়েছে। ফলে মশা কমে গেছে রাজধানীতে। সামনের বছর মশা যেমন খুব বেশি থাকবে না, তেমনি ডেঙ্গুর প্রকোপও কম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের ১২৮ দেশের ৩৯০ কোটি মানুষ ডেঙ্গু ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এর মধ্যে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে বিশ্বে প্রতি বছর ৯ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্তদের শুরুতে শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসা সহজ হয়। কারণ এই রোগটি প্রতিরোধযোগ্য। নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকলেও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা যায়।
আইইডিসিআর জানিয়েছে, ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে এবং তাপমাত্রা কমপক্ষে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে এডিস মশার ডিম ফোটে বংশ বিস্তার বেশি হয়। ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অথবা এর নিচের তাপমাত্রায় এডিস মশার ডিম ফোটে না। এ কারণে বাংলাদেশে শীতকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম থাকে এবং গ্রীষ্ম বা বর্ষা এমনকি শরৎকালেও ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। তবে অধ্যাপক সেব্রিনা বলছেন, এখন থেকে সারা বছরই ডেঙ্গুর বিস্তার থাকবে। অতএব সবাইকেই মশা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বাড়ির আশপাশে অথবা বাসাবাড়িতে মশা জন্মাতে পারে এমন পানি রাখা যাবে না। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার করে রাখতে হবে।