রাখাইনের গ্রামে মর্টার-বিমান হামলা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী

রাখাইনের গ্রামে মর্টার-বিমান হামলা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী

রাখাইন

মিয়ানমারের রাখাইনে গ্রামবাসীর ওপর নির্বিচারে বিমান হামলা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। বৃষ্টির মতো ফেলছে মর্টার ও বোমা। জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নামে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে চালানো হচ্ছে এসব হামলা। সেইসঙ্গে ঘরে ঘরে চলছে তল্লাশি অভিযান। হামলায় এখন পর্যন্ত গুরুতর আহত হয়েছেন শিশুসহ ৮ জন। বিমান হামলার ফলে আগুনে ছাই হয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি। প্রাণ বাঁচাতে গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজার হাজার নারী ও শিশু। অবশিষ্ট যারা রয়েছেন ধর্ষণ ও হয়রানির ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। গ্রামের বন-জঙ্গলে টহল দিচ্ছেন সেনা সদস্যরা। বৃহস্পতিবার এ খবর দিয়েছে দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক ইরাবতী।

বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও আরাকান সলভেশন আর্মির সদস্যরা লুকিয়ে রয়েছে সন্দেহে সোমবার থেকে রাখাইনের দক্ষিণাঞ্চলের ম্রাউক-উ এলাকার গ্রামগুলোতে বিমান ও স্থল হামলা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া হামলা অব্যাহত রয়েছে। বিমান হামলার শিকার গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে ইয়র হোয়া ত। গ্রামবাসী বলছেন, এ এলাকায় কোনো জঙ্গি বা সন্ত্রাসী লুকিয়ে নেই। তারপরও আমাদের ঘরবাড়ির ওপর বৃষ্টির মতো মর্টার শেল ফেলা হচ্ছে। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত ম্রাউক-উ হেরিটেজ অঞ্চল থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত গ্রামটি। হামলার পর ভয়ে-আতঙ্কে এ গ্রাম থেকেই অন্তত ২০০ নারী ও শিশু পালিয়েছেন। আশ্রয় নিয়েছেন ম্রাউক-উ শহরে অবস্থিত চিত থং প্যাগোডায়। এটাই এখন গ্রামবাসীর অস্থায়ী আশ্রয়শিবির হয়ে উঠেছে।

আশ্রয়শিবির থেকে বিমান হামলার অভিজ্ঞতা জানিয়ে ড. থেইন থেইন অয় নামে গ্রামের এক নারী বলছেন, সোমবার তার গ্রামে বেশ কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। একটি বোমা তার বাড়ির ওপর এসে পড়ে। এতে তার পরিবারের দু’জন গুরুতর আহত হন। তিনি মনে করেন, মর্টার শেলগুলো ম্রাউক-উ ভিত্তিক সেনাবাহিনীর হালকা পদাতিক বাহিনীর ৫৪০ নম্বর ব্যাটালিয়ন থেকে ছোড়া হয়েছে। ম্রাউক-উ হেরিটেড অঞ্চলে অবস্থিত কোই থং প্যাগোডার কাছেই ব্যাটালিয়নটির ঘাঁটি।

ড. মোয়ে ইয়াইং সেইন নামে একই গ্রামের আরেক নারী জানান, মুহুর্মুহু হামলায় বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছিলেন তিনি। দিনের বেলায় নিকটস্থ বনের মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখেছেন তিনি। রাখাইনের গ্রাম এলাকায় বহু গ্রামেই এখনও আধুনিক টয়লেটের চল শুরু হয়নি। গ্রামের মেয়ে-ছেলেরা বনে-জঙ্গলেই প্রাকৃতিক কাজ সারেন। কিন্তু সর্বত্র সেনাবাহিনীর আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় যৌন হয়রানির ভয়ে রাতের বেলা বের হতে পারেন না। মর্টার শেল থেকে বাঁচতে বাড়িতে বাঙ্কার খুঁড়ছেন অনেকেই। রাতের বেলা সেখানেই ঘুমায়। ড খাইন স থান নামে এক নারী বলেন, ‘অন্ধকার হলেই আমরা ভয়ে ভয়ে থাকি। বাড়িতে শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। রাতে আমরা মাটির নিচে বাঙ্কারে ঘুমাই।’