পরমাণু কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে অস্থায়ী সমঝোতায় ইরান ও আইএইএ

পরমাণু কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে অস্থায়ী সমঝোতায় ইরান ও আইএইএ

পরমাণু কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে অস্থায়ী সমঝোতায় ইরান ও আইএইএ

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেছেন, ইরানের পরমাণু কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখতে তারা তেহরানের সাথে তিন মাসের অস্থায়ী সমঝোতায় পৌঁছেছেন। তবে মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে যাওয়া এই পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমের আওতা সীমিত থাকবে এবং কোনো প্রকার আকস্মিক পরিদর্শনের সুযোগ থাকবে না।রোববার তেহরান সফর শেষে ভিয়েনা পৌঁছে সাংবাদিকদের এই কথা জানান আইএইএ প্রধান।

ইরানি কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় ‘সুন্দর, যৌক্তিক ফলাফলের’ কথা উল্লেখ করে রাফায়েল গ্রসি বলেন, পরিস্থিতির আপাত সমাধান করা হয়েছে।

গ্রসি বলেন, ‘আমরা অস্থায়ীভাবে দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সমঝোতায় পৌঁছেছি যেখানে সংস্থা তিন মাস প্রয়োজনীয় সত্যায়ন ও পর্যবেক্ষণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবে।’তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একমত যে, এই সমঝোতা প্রতিনিয়ত মূল্যায়ন করা হবে - যাতে এটি স্থগিত বা সম্প্রসারণ করতে চাইলে আমরা তা করতে পারি।’

রাফায়েল গ্রসি বলেন, ‘আইএইএ প্রত্যাশা করে অস্থিতিশীল এক পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল করার এবং আমি মনে করি কৌশলগত সমঝোতা তা করতে সক্ষম হবে। যার মাধ্যমে ভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক আলোচনা সফল হতে পারে।’

এর আগে ইরানি পার্লামেন্ট থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে তার পূর্বসূরী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দেয়া ২৩ ফেব্রুয়ারি ডেডলাইনের আগেই এই সফর করলেন আইএইএ প্রধান। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে ইরানে আইএইএর আকস্মিক পরিদর্শন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল তেহরান।আইএইএ প্রধান পরিদর্শকের সংখ্যা সমান থাকার কথা জানালেও সতর্কতার সাথে বলেন, তারা কিছু সুযোগ হারাতে পারেন।

এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ এর আগে বলেছিলেন, পরমাণু স্থাপনার ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের সুযোগ আইএইএর থাকবে না।

সাংবাদিকদের গ্রসি বলেন, ইরানের পার্লামেন্টে পাস হওয়া আইন প্রয়োগ করা হবে, যার ফলে আইএইএর আকস্মিক পরিদর্শনের সুযোগ স্থগিত করা হবে।তিনি বলেন, ‘যে পরিস্থিতিই হোক, আমরা সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং নির্দিষ্ট দ্বিপাক্ষিক সমঝোতায় একমত হয়েছি... এটি আমাদের সক্ষম করেছে প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ ও সত্যায়নের ক্ষমতা না হারিয়েই সর্বোত্তম সম্ভাব্য উপায়ে এই সময়ের সাথে সংযোগ তৈরিতে।’

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আলজাজিরার প্রতিবেদক মাইক হাননা বলেন, এই ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে কূটনীতিক প্রক্রিয়া চালুর জন্য বিপুল সময়ের সুযোগ তৈরি করবে।

বিগত কয়েক সপ্তাহ থেকে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি চালুর চেষ্টার প্রক্রিয়ায় দুই দেশের মধ্যে অচলাবস্থা চলছে। চুক্তি অনুযায়ী ইরানের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিনিময়ে দেশটি তার পরমাণু প্রকল্প সীমিত করতে সম্মত হয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে কঠোর অবরোধ চালুর পর ইরান ধাপে ধাপে চুক্তির শর্ত থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলছেন তিনি চুক্তিতে ফিরতে চান, তবে ইরানকে আগে চুক্তির শর্ত মানায় ফিরে আসতে হবে। অন্যদিকে ইরানের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমেই দেশটির ওপর থেকে সব অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি করছেন।

রোববার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রেসটিভিতে এক সাক্ষাতকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বলেন, জয়েন্ট কম্প্রেহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন বা সংক্ষেপে জেসিপিওএ নামে পরিচিতি চুক্তির ইউরোপীয় অংশীদার- জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের উচিত যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তিতে ফেরাতে রাজি করানো।সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘এটি কোনো লম্বা চাহিদা নয়।’

অপরদিকে রোববার হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান জানান, বাইডেন ইরানের সাথে তাদের পরমাণু প্রকল্প সীমিত করার বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।কিন্তু ইরানের হাতেই সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইরানই নিজেদের কূটনীতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে, যুক্তরাষ্ট্র নয়।’

এদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলী ভায়েজ আইএইএর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সংস্থাটি ‘প্রমাণ করেছে তারাই কক্ষের একমাত্র পরিণত বয়সী।’
টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘আশা করা যাচ্ছে, জেসিপিওএ পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্য অর্জনে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র সহনশীল ও সৃষ্টিশীল হতে শিখবে।’

সূত্র : আলজাজিরা