এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেলো বাংলাদেশ

এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেলো বাংলাদেশ

এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেলো বাংলাদেশ

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসঙ্ঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপির চেয়ার টেফারি টেসফাসো শুক্রবার রাতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে সিডিপির পাঁচ দিন ব্যাপী ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভা শেষে এই ঘোষণা আসে। তবে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে বের হতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

জাতিসঙ্ঘের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো মানদণ্ডগুলো অর্জন করেছে।

১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে।সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে।

উন্নয়নশীল দেশ হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার।মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন; বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫.৩।অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে কোনো দেশের পয়েন্ট ৩৬ এর বেশি হলে সেই দেশকে এলডিসিভুক্ত রাখা হয়, ৩২ এ আসার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন হয়। সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ২৫ দশমিক ২।

বাংলাদেশের সাথে নেপাল এবং লাওসও উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ পেয়েছে। নেপাল ২০১৮ সালেই দ্বিতীয়বারের মতো উত্তরণের মানদণ্ড অর্জন করে। তবে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তাদের সময় লেগে যায়।

এবার বাংলাদেশের সাথে লাওস এবং মিয়ানমারও দ্বিতীয় দফায় উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের মানদণ্ড অর্জন করেছে। তবে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও জরুরি অবস্থা জারির কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কায় তাদের এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করা হয়নি। আর ২০১৮ সালে নেপালের সাথে দ্বিতীয় দফায় মানদণ্ড অর্জনকারী পূর্ব তিমুরকেও সুপারিশ করা হয়নি দেশটির উন্নয়ন অগ্রগতির স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা থেকে।

সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী, উত্তরণের সুপারিশ পাওয়ার পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতিকালীন সময় ভোগ করতে পারে।করোনাভাইরাস মহামারীর বাস্তবতায় উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সিডিপির কাছে প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় চাওয়া হয়েছে। সব ঠিক থাকলে পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকাল শেষে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে।

উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে সস্তা ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রফতানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। ফলে সেই সুবিধাগুলো উত্তরণের প্রস্তুতি পর্বে চাওয়া হয়েছে।

প্রস্তুতির এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরো তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে।