দেউলিয়া হলো প্রাচীন ভ্রমণ সংস্থা টমাস কুক

দেউলিয়া হলো প্রাচীন ভ্রমণ সংস্থা টমাস কুক

ছবি সংগৃহিত।

ঋণের ভারে ভেঙে পড়ল শতাব্দী প্রাচীন ভ্রমণ সংস্থা টমাস কুক। সোমবার নিজেদের ‘দেউলিয়া’ ঘোষণা করেছে ব্রিটেনের ওই সংস্থাটি। বন্ধ হয়ে গেছে তাদের বিমান সংস্থাও।বেশ কিছু দিন ধরেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিল সংস্থাটি। সেই চাপ কাটাতে তার প্রয়োজন ছিল ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার। বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের থেকে ওই টাকা তুলে সংস্থাটিকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সেই উদ্যোগও ব্যর্থ হয়।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘প্রচুর চেষ্টা সত্ত্বেও, সংস্থার শেয়ার হোল্ডার ও সংস্থার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যা আলোচনা হয়েছিল তা শেষ পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ হয়নি। তার পরই বোর্ড এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে, দ্রুত সংস্থাটিকে বাধ্যতামূলক দেউলিয়া ঘোষণা ছাড়া সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই।’ সংস্থার চিফ এগজিকিউটিভ পিটার ফ্যাঙ্কহাউসার বলেন, “সত্যিই এটা খুবই দুঃখের দিন। এটা আমার কাছে গভীর অনুতাপের বিষয় যে আমি এবং অন্য বোর্ড সদস্যরা সফল হলাম না।’’

টমাস কুকের এমন পরিণতির জেরে বেড়াতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন লক্ষ লক্ষ পর্যটক। শুধুমাত্র ব্রিটেনেই সমস্যায় পড়েছেন দেড় লক্ষ পর্যটক। ইতিমধ্যেই তারা অভিযোগ জানাতে শুরু করেছেন। সংস্থার থেকে ক্ষতিপূরণও দাবি করেছেন তারা। তথ্য বলছে, টমাস কুকের এমন পরিণতির জেরে বিশ্ব জুড়েই বিপদে পড়তে পারেন মোট ৬ লক্ষ পর্যটক।

দীর্ঘ দিন ধরেই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল সংস্থায়। কিন্তু, সোমবারের ঘোষণায় যেন বজ্রাহত সংস্থার হাজার হাজার কর্মী। সংস্থা ‘দেউলিয়া’ হওয়ায় কাজ হারাতে চলেছেন প্রায় ২২ হাজার কর্মী। এর মধ্যে ৯ হাজার জন ব্রিটেনের। এ দিনের সিদ্ধান্তের পর বন্ধ করে দিতে হবে সংস্থার ট্রাভেল এজেন্সিগুলোও।

গত ১৭৮ বছর ধরে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল টমাস কুকের ভ্রমণ ব্যবসা। কিন্তু, তার অন্দরেই ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছিল তীব্র অর্থ সঙ্কট। ব্রেক্সিটের পর থেকে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছিল সংস্থাটি। তার জেরে ধাক্কা খায় গ্রীষ্মকালীন ছুটির বুকিংও। গত মে মাসের একটি বিবৃতি থেকে উঠে এসেছে এই তথ্য। গোটা ব্রিটেন জুড়ে রয়েছে টমাস কুকের ৬০০ স্টোর। সম্প্রতি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখেও পড়েছিল ওই সংস্থাটি।

১৮৪১ সালে পথ চলা শুরু করেছিল ওই সংস্থাটি। কম খরচে ট্রেনে পর্যটকদের ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর ঘুরিয়ে দেখানো দিয়ে শুরু হয়েছিল টমাস কুকের ‘অভিযান’। এর পর, উনিশ শতকের মধ্যেই ইউরোপ ও বিশ্ব ভ্রমণও শুরু করে তারা। পর্যটকদের জন্য ‘সার্কুলার নোট’ চালু করেছিল সংস্থাটি, যা পরে ‘ট্রাভেলার্স চেক’ নামে পরিচিত হয়। কম খরচে মধ্যবিত্তের বিশ্ব দেখার শখ মেটানো, এই ছিল সংস্থাটির মূলমন্ত্র। তাদের বিজ্ঞাপনেও তার ছাপ ছিল। বলে হতো, ‘ডোন্ট জাস্ট বুক ইট, টমাস কুক ইট’। এত দিনের সেই ঐতিহ্যে এ বার ছেদ পড়ল।