আওয়ামী লীগক্ষমতায় থাকলে দেশের সার্বভৌমত্ব থাকবে না : মির্জা ফখরুল

আওয়ামী লীগক্ষমতায় থাকলে দেশের সার্বভৌমত্ব থাকবে না : মির্জা ফখরুল

ছবি: সংগৃহিত।

আওয়ামী লীগ দেশের সমস্ত অর্জনগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ জনবিরোধী সরকার। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। এই লুটেরা সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের সার্বভৌমত্ব থাকবে না।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে সিলেটের রেজিস্ট্রি মাঠে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে সিলেট মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে পরিচালনা করেন, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা যদি খালেদা জিয়ার মুক্তি চান তাহলে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হন। গতকাল রাত থেকে তিনবার মঞ্চ ভাঙা হয়েছে। তারপরও সিলেটের মানুষের সাহসিকতার ফলে এই জনসভা হয়েছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য আজকে এই সভা করছি। এই সভা সফল করতে গতরাতে ১৬ জনকে বন্দি করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে সিলেটে ছাত্রদল একটি মিছিল করেছিল, সেই মিছিলে হাজার হাজার ছাত্ররা যোগ দিয়েছিল সেজন্য ভয় থেকে গতকাল সন্ধ্যায় হঠাৎ সমাবেশ করতে না দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। আসলে তারা জনগণকেই ভয় পায়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার বৈধ সরকার নয়। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তারা আগের দিন রাতে ভোট চুরি-ডাকাতি করেছে। বন্দুকের জোরে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। সেজন্য আমরা এই সরকারকে অবৈধ সরকার বলি। তিনি বলেন, এই সরকার সুপরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। একটা গৃহপালিত বিরোধী দল বানিয়েছে। সরকার হা বললে হা বলে না বললে না বলে। বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ দলীয় করণ করেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিচারব্যবস্থাকে তারা রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। প্রশাসনকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ক্যাসিনো অভিযানে যেই ধরা পড়ছে তাকেই বলা হচ্ছে বিএনপির লোক। যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেছেন, তার নেতাকর্মীরা অপকর্ম করেছেন পুলিশ প্রশাসন কি ১২ বছর আঙ্গুল চুষছিল। তিনি বলেন, এই সরকারের প্রতিপক্ষ এখন জনগণ। বিগত নির্বাচনে আমাদের একজন ভোটারও ভোট দিতে পারেনি। অথচ সংবিধানে লেখা আছে জনগণ ক্ষমতার মালিক। আপনারা ভোট দিতে পেরেছেন? শুধু আজকে না, স্বাধীনতার পরেও একই কায়দায় ভোট কেড়ে নিয়েছিল। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না বলেই একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। তাদের দুশাসনের সেদিন দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল।

ইলিয়াস আলী ৬ বছর যাবত নিখোঁজ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কয়েকদিন আগে ইলিয়াস আলীর বাসায় গিয়েছিলাম। আমরা তাকে খুঁজে বের করতে পারিনি। আজকে শত শত পরিবার স্বজন হারানোর বেদনায় বেদনার্ত। তাদের পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে যখন বসি তখন চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। একজন নয়, দুজন নয় ৫০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। এক লাখের ওপরে মামলায় ২৬ লাখ মানুষকে আসামী করা হয়েছে। এরা জনগণের সরকার নয়। এরা গণবিরোধী সরকার।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা বড়াই করে বলে বাংলাদেশ নাকি উন্নয়নের রোল মডেল। এখন ঘরে ঘরে ক্যাসিনোর জোয়ার বইছে। সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়াছে। বিদেশী কেউ বিনিয়োগ করছে না। কারণ এটা একটা লুটেরা দেশ। তারা মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা লুট করছে।

তিনি বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গা ২ বছর হয়ে গেলো একজনকেও ফেরত পাঠাতে পারলো না। তাদের কূটনৈতিক তৎপরতা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব এখন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বিরোধী দলের সাহায্য চাচ্ছেন। আমরাতো আগেই সাহায্য দিতে চেয়েছিলাম।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম এ হক, তাহসীনা রুশদীর লুনা, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, বিএনপির সহ শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, বিএনপি নেতা দিলদার হোসেন সেলিম, কলিম উদ্দিন মিলন, জিকে গউছ, আব্দুর রাজ্জাক, নাসিম হোসাইন, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, নাসির উদ্দিন আহমেদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, হুমায়ুন কবীর, মোরতাজুল করিম বাদরু, হাসান জাফির তুহিন, মামুন হাসান, আবুল কালাম আজাদ, মীর হেলাল উদ্দিন প্রমুখ। সমাবেশে সিলেট মহানগর, সিলেট জেলা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে যোগ দেন।