অসৎ পথে উপার্জনকারীদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা:প্রধানমন্ত্রী

অসৎ পথে উপার্জনকারীদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা:প্রধানমন্ত্রী

ছবি: সংগৃহিত

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান চলবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউ ইয়র্কে দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি বলেছেন, ‘একটা কথা আমি স্পষ্ট বলতে চাই, কেউ অসৎ পথে উপার্জন করলে, অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খলতা বা অসৎ কাজে জড়িত থাকলে, যদি ধরা পড়ে, সে যে-ই হোক না কেন, আমার দলের হলেও তার বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা চলতে থাকবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসংগতি খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে আমরা এই ব্যাধি আর অসৎ প্রতিযোগিতার হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করতে পারব, আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারব। আমি একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই, কেউ অসৎ পথে উপার্জন করলে, অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খলতা বা অসৎ কাজে জড়িত থাকলে, যদি ধরা পড়ে, তবে সে যে-ই হোক না কেন, আমার দলের হলেও ছাড় দেওয়া হবে না, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাদক একটি সমাজ ও পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। এর পেছনে যারা আছে, তাদেরও খুঁজে বের করা হবে।’

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে আসা প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ম্যানহাটানের ম্যারিয়ট মার্কুইস হোটেলে আয়োজিত সংবর্ধনাস্থলে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছেন স্থানীয় সময় শনিবার বিকেল ৪টার দিকে। শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানস্থলে তিনি পৌঁছলে চারদিকে স্লোগান ওঠে। নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। 

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে পরিবর্তন আসছে—এমন গুঞ্জনের মধ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। মঞ্চে ছিলেন না যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোনো নেতা। বক্তব্যও দেননি কেউ। প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন শুধু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

বক্তব্য দিতে উঠে প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের যে দেশ দিয়ে গেছেন, সেই দেশকে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’

প্রকল্পের প্রতিটি টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেত : দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসৎ মানুষের দৌরাত্ম্যে যারা সত্ভাবে জীবন যাপন করতে চায়, তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘দেশে যে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি, তার প্রতিটি টাকা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হতো, তাহলে বাংলাদেশ আজ অনেক দূর এগিয়ে যেত। এখন আমাকে খুঁজে বের করতে হবে, এখানে কোথায় ঘাটতি রয়েছে। কারা কোথায় কিভাবে এসব সমস্যা তৈরি করছে।’

প্রবাসীদের বিনিয়োগের বিশেষ ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে : শেখ হাসিনা বলেন, দেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। যুবসমাজকে সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কৃষির সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়নের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছি। প্রবাসীদের বিনিয়োগের বিশেষ ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে রপ্তানি আয় বেড়েছে। তিনি প্রবাসীদেরও দেশে বিনিয়োগ করে রপ্তানি করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘তিনটি এনআরবি ব্যাংক করে দিয়েছি। তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে।’

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল বাজেট করতে বিদেশিদের কাছে হাত পাততে হতো। এখন তা করতে হয় না। এখন দেশে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ রয়েছে। নিজেদের উপার্জন দিয়ে নিজেরা চলার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি দেশ বলেছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কী হবে, আন্তর্জাতিকভাবে এটি হবে তলাবিহীন ঝুড়ি।’ তিনি বলেন, ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে, সেই দেশটির চেয়ে দারিদ্র্যের হার অন্তত ১ শতাংশ হলেও কমাব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রবাসী ও দেশের মানুষকে তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে যাচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, একটা সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা এনে দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা শ্রেণির লোক আছে, আপনি যতই ভালো কাজ করেন, তাদের কিছুই ভালো লাগে না। তারা বিদেশের কাছে নালিশ করে।’

দেশের উন্নয়ন ধরে রাখার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন করেন, অনেক সাক্ষাৎকার দিলাম। তাঁরাও প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশ একদলীয় দেশে পরিণত হচ্ছে কি না। আমি তাঁদের প্রশ্ন করলাম, বাংলাদেশে ৪৫টি দল নির্বাচন কমিশনে রেজিস্ট্রেশন করেছে, তাহলে একদলীয় হয় কী করে? দ্বিতীয় কথা হলো, অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল, সেই দলগুলোর জন্মবৃত্তান্ত কী?’