যে শাস্তি চাইলেন আবরারের বাবা

যে শাস্তি চাইলেন আবরারের বাবা

আবরারের বাবা

রাত তখন ৯টা ৪৫ মিনিট। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেন্দ্রীয় মসজিদের প্রধান ফটকের পাশে লাশবাহী গাড়িতে আবরার ফাহাদের মৃতদেহ। প্রিয় সন্তানের পাশে নির্বাক দাঁড়িয়ে বাবা বরকত উল্লাহ্। বাবার মোবাইলে ফোন কল আসে। তিনি কল ধরে কেঁদে ওঠেন। এরপর অসহায় বাবার আর্তনাদ, ‘আমার এ কী হলো? আমার নিরীহ ছেলেটাকে পিটিয়ে মেরে ফেলল। যারা আমার ছেলেকে পিটিয়ে মারল, তাঁদের আমি ফাঁসি চাই।’
রাত দশটার দিকে বুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদে আবরার ফাহাদের জানাজা হয়। এরপর তাঁর লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ছুটতে থাকে কুষ্টিয়ায় নিজ গ্রামের দিকে। সেখানেই তাঁকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন আবরারের বাবা।

রাত সাড়ে নয়টার পর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ আনা হয় বুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদের প্রধান ফটকের সামনে। লাশ আনার খবর পেয়ে মসজিদের সামনে জড়ো হতে থাকেন আবরারের বন্ধু, সহপাঠী ও বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। সেখানে ছিলেন আবরারের বাবা। তিনি বললেন, ‘কখনো কল্পনাও করিনি আমার ছেলের এমন পরিণতি হবে। আমার ছেলে হত্যাকাণ্ডের শিকার হবে। আমি করতাম আওয়ামী লীগ। আমার বাবাও আওয়ামী লীগ করেন। আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করত না।’ ছেলে আবরারের সঙ্গে বাবা বরকত উল্লাহর শেষ কথা হয় গতকাল, মুঠোফোনে। বরকত উল্লাহ বললেন, ‘আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল দেশের সেবা করবে। লেখা পড়া শেষ করে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে আবার দেশে ফিরে আসবে।’

আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাঁর মা গৃহিণী। বরকত উল্লাহ বললেন, ‘আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করা হোক। দোষীদের ফাঁসি চাই।’ তিনি জানান, আবরার ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। বুয়েট ছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলজে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল সে।

রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বুয়েটের বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, গতকাল দিবাগত রাতে বুয়েটের শের-ই বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। পরে দিবাগত রাত তিনটার দিকে হল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেছেন আবরারের বাবা। এ পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।