সমাবেশে বিএনপির নেতারা: ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশবিরোধী চুক্তি

সমাবেশে বিএনপির নেতারা: ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশবিরোধী চুক্তি

ছবি: সংগৃহিত

ক্ষমতায় টিকে থাকতে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। শনিবার নয়াপল্টনে আয়োজিত সমাবেশে দলটির নেতারা বলেন, ‘আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জনগণ জেগে উঠেছে।

দেশবিরোধী চুক্তির জন্য বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আবরারের রক্তে আধিপত্যবাদ সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে বীজ রোপিত হয়েছে।

আবরারের কথা এ দেশের মানুষের কথা। আবরারকে হত্যা করে দেশের জনগণের কণ্ঠকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। তার রক্ত জনগণ বৃথা যেতে দেবে না। দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল ও আবরার হত্যার প্রতিবাদে আরও কর্মসূচি আসবে। নেতাকর্মীদের বলব, ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন- এ সরকারের পতন হবেই।’

ভারতের সঙ্গে করা চারটি চুক্তিই দেশের স্বার্থবিরোধী দাবি করে বিএনপির নেতারা বলেন, ‘ফেনী নদীর পানি দেয়া হলে মুহুরী প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দর ভারত ব্যবহার করলে দেশের ব্যবসায়ীদের মালামাল খালাসে সময় বেশি লাগবে। সমুদ্র সীমানায় যৌথভাবে রাডার বসালে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে। বিদেশ থেকে আমদানি করা এলপিজি গ্যাস ভারতের কাছে বিক্রি করলে তারা লাভবান হবে।’

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে দুই দিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজন করে ঢাকা মহানগর বিএনপি। পূর্বঘোষিত হলেও সমাবেশের জন্য পুলিশের অনুমতি পায়নি বিএনপি। অনুমতির জন্য বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সকালে ডিএমপি কার্যালয় যায়। প্রতিনিধি দলের সদস্য বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘সমাবেশের বিষয়ে আমরা পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছি। কিন্তু তারা কোনো অনুমতি দেয়নি। দুপুর ২টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন- অনুমতির ব্যাপারে আপনাদের পরে জানাব। এরপর তারা আমাদের কিছু জানায়নি।’

অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘদিন পর বড় ধরনের সমাবেশ করে বিএনপি। তবে জনসমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার সময় ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় পুলিশের সাজোয়া যান। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ হয়।

মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও উত্তর-দক্ষিণের দুই সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার ও আহসান উল্লাহর পরিচালনায় সমাবেশে- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আজিজুল বারী হেলাল, আবদুস সালাম আজাদ, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, অঙ্গসংগঠনের আফরোজা আব্বাস, সাইফুল আলম নীরব, শফিউল বারী বাবু, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাদেক আহমেদ খান, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, মোরতাজুল করিম বাদরু, হেলেন জেরিন খান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ফেনী নদীর পানি সরবরাহ, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার, বঙ্গোপসাগরের উপকূল পর্যবেক্ষণে যৌথ রাডার স্থাপন, আমদানিকৃত এলজিপি রফতানি করা- এ চারটি চুক্তি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী। এই চার চুক্তির একটিও বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে নয়, জাতীয় স্বার্থে নয়। নতজানু পররাষ্ট্র নীতি এবং ভারত তোষণের নীতি হিসেবে আপনারা এসব চুক্তি করে এসেছেন। ক্ষমতায় থাকার জন্য এসব চুক্তি করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘চুক্তির প্রতিবাদ করে বুয়েটের ছাত্র আবরার একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিল। এজন্য তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আবরারের এই স্ট্যাটাস এ দেশের জনগণের মনের কথা, এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষের কথা। আবরারের এই কথা এ দেশে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা।’

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য এ দেশে আগামী দিনে যেসব কর্মসূচি আসবে- আপনারা সাহসের সঙ্গে আজকের মতো সফল করার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে এ দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারব। আর ইস্পাত কঠিন গণঐক্য ছাড়া এ ফ্যাসিবাদের পতন হবে না। ইনশাআল্লাহ ফ্যাসিবাদের পতন হবেই।’

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এই সরকার দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। তারা এমন ফাঁদে পড়েছে, সেই ফাঁদ থেকে তাদের কোনো নিষ্কৃতি নাই। এই ফাঁদ থেকে তারা উঠে আসতে পারবে না। আমি মনে করি, এই সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার। এই দেশের মানুষ কখনও এ ধরনের সরকারকে বরদাশত করতে পারে না।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বিনিময়ের চুক্তি হবে; কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একতরফা দান করে দিয়ে আসলেন। আমি অত্যন্ত গর্বিত আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী দান করতে জানেন। আবার অত্যন্ত লজ্জিত- আমি দেখলাম ভারতের বিমানবন্দরে লাল কার্পেট নাই, এক প্রতিমন্ত্রী তাকে (শেখ হাসিনা) অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন। আমি লজ্জা পেয়েছি, জাতি লজ্জা পেয়েছে, দেশ লজ্জা পেয়েছে।’