সিগারেটকে প্রণোদনা দিতে সুপরিকল্পিতভাবে বিড়ি শিল্পকে ধ্বংস করা হচ্ছে: দিলীপ বড়ুয়া

সিগারেটকে প্রণোদনা দিতে সুপরিকল্পিতভাবে বিড়ি শিল্পকে ধ্বংস করা হচ্ছে: দিলীপ বড়ুয়া

ছবি:শিল্প বাঁচাও শ্রমিক বাঁচাও আলোচনায় বক্তব্য প্রদান করছেন দিলীপ বড়ুয়া

একটি দেশের বাজেটে কোন শিল্পকে ধ্বংস করার কথা নয়। অথচ প্রতি বছর বাজেট এলে শুধু বিড়ি শিল্প নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়। সুপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শুধু বিড়ি শিল্পকে ধ্বংস করা হয়। ধূমপান বন্ধের নামে বিড়ি শিল্পকে ধ্বংস করে সিগারটেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়। যেখানে এদেশের শ্রমঘন বিড়ি শিল্পকে প্রণোদনা দিয়ে টিকিয়ে রাখার কথা কিন্তু বিদেশী কোম্পানী সিগারেটকে নানা সুবিধা দেওয়া হয়। বৃহষ্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত শিল্প বাঁচাও শ্রমিক বাঁচাও শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী  ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া।

তিনি আরো বলেন,‘ঐতিহাসিক ৬দফা দাবির মূল নিয়ামক ছিল বিড়ি শ্রমিকরা। এদেশের মুক্তির সংগ্রামে তারা সর্বদা সাথে ছিল। তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে সাথে জড়িত। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কর্মের নিশ্চয়তা বিধান বিড়ি শ্রমিকদের দিতে হবে। বিড়ি শিল্প থেকে অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে সিগারেট কারখানায় তেমন শ্রমিক নেই। বিড়িতে গ্রামীন জনপদের লাখ লাখ মানুষ জাড়িত। তাই বিড়ি শিল্পকে সুরক্ষা করতে হবে। বিড়ি শিল্পের সাথে জড়িত গরীব অসহায়দের অন্ধকারে ঠেলে না দিয়ে তাদের দিকে সুনজর দিতে হবে। 

গবেষণা সংগঠন গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভ (আরডিসি) এবং বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের আয়োজনে আলোচন সভায়  সভাপতিত্ব করেন আরডিসি এর চেয়ারপার্সন প্রফেসর ড. মেসবাহ কামাল। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী  ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ.কে.এম ফজলুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান। বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এম কে বাঙ্গালী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, কার্যকরী সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি, যুগ্ম-সম্পাদক হারিক হোসেন,সহ-সাধারণ সম্পাদক লাভলু, শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য মিছ মায়া বেগম, বিড়ি শ্রমিক নেতা ফজলুর রহমান, হাকিমুল বেগম। সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভ (আরডিসি) সাধারণ সম্পাদক মিস জান্নাত-এ-ফেরদৌসী লাকী। 
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আরডিসির পরিচালক আসাদুল্লাহ সরকার। 

সভাপ্রধান প্রফেসর ড. মেসবাহ কামাল বলেন,‘ধূমপান বন্ধের নামে সিগারেটকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত সময় দিয়েছে সরকার।  সিগারেট কোম্পানী কি দুলা ভাই হয়? বিড়ি ও সিগারেট স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। অথচ একটি বন্ধ করে দিয়ে অন্যটিকে লালন করছে। বিড়ি ও সিগারেট একই শিল্প। বন্ধ করতে হলে দুটিকে একই সাথে বন্ধ করতে হবে। বিড়ি শিল্পের সাথে জড়িতদের ভাগ্য নীতিনির্ধারণ না করে কোনভাবে তাদের কর্ম বন্ধ করা যাবে না। 

আওয়ামীগের সংসদ সদস্য এ.কে.এম ফজলুল হক বলেন, সরকারের নীতি হচ্ছে ধূমপান ৫ শতাংশে কমিয়ে আনা। কিন্তু মুখে ধূমপান বন্ধের কথা বলে অন্তরে ধূমপান পুষে রাখা চলবে না। বিড়ি শিল্পকে ধ্বংস করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর প্রতি সহানুভূতিশীল সহ্য করা হবে না। তিনি আরো বলেন, ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ না হলে বিড়ি শিল্প বন্ধ নয়। প্রধানমন্ত্রী শ্রমিক বান্ধব। আশাকরি তিনি বিড়ি শিল্প ও শ্রমিকদের প্রতি সুনজর দিবেন। 

জান্নাত-এ-ফেরদৌসী লাকী বলেন,আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিড়ি শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবন দেখেছে। এর সাথে ২০ লক্ষাধিক শ্রমিক জাড়িত। এটা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। কিন্তু আমরা হতবাক হই এ শিল্পকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি সিগারেটেরে উপর বেশি কর বৃদ্ধি করে বিড়ির উপর কর কমানো আহ্বান করেন। নারীরা বাড়ির কাজের পাশাপাশি পরিবারে আর্থিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে। তিনি মালিকদের প্রতি বিড়ি  শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করেন। 

শ্রমিক নেতা ফজলুরর রহমান সিগারেট বাঁচাতে কোন আন্দোলন করতে হয় না। ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু সিগারেটের অপরাধ নেই। বিড়ি ও কর দেয় সিগারেটও কর দেয় তাহলে বিড়ির পেছনে কেন তারা সবসময় উঠে পড়ে লাগে।এ শিল্পের সাথে লাখ লাখ শ্রমিক জড়িত। স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা, নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ বিড়ি শিল্পের সাথে জড়িত। অথচ বিড়িকে গলটিপে হত্য করা হচ্ছে। বিড়ি বন্ধ হলে সিগারেট চলতে দিব না। 
বিড়ি শিল্পকে ধ্বংস করা হলে  শ্রমিকরা ভিক্ষার থালা নিয়ে পথে নামবে। যেটা প্রধানমন্ত্রী সহ্য করবেন না। 

শ্রমিক নেতা মিস মায়া বেগম বলেন, প্রতি বছর মে থেকে শুরু হয় আমাদের যুদ্ধ। যুদ্ধের জন্য আমরা প্রস্তুত। জুন এলে শ্রমিকের বুক কাঁপে। আমরা মহিলারা সেই সুদূর গ্রাম থেকে কেন রাজধানী ঢাকায় এসে আন্দোলন করব? বিড়ি দিয়ে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। আমাদের যেন রাজপথে নামতে না হয় সেদিকে প্রধানমন্ত্রী একজন মহিলা হিসেবে আমাদের দিকে অবশ্যই সুদৃষ্টি দিবেন বলে আশাকরি। তিনি বলেন এবারের বাজেট এমনভাবে প্রণয়ন করেন যাতে  সরকার বাহ বাহ গ্রহণ করেন। 

শ্রমিক নেতা হাকিমুল বেগম,‘ আমরা গরীব বিড়ির কাজ করি। সন্তান-সন্তুতি মানুষ করি। তাদের লেখাপড়ার জন্য বই খাতা কিনে দিই। আমাদের কর্ম আছে বলেই আমরা তাদের মানুষ করতে পারছি। পড়ালেখা শেখাতে পারছি। একজন মা যেমন তার সন্তানকে মেরে ফেলতে পারেন না তেমনি অতিরিক্ত করারোপ করে প্রধানমন্ত্রীও যেন আমাদের মেরে না ফেলেন এই আশাকরি।

বাগেরহাট বিড়ি শ্রমিক নেতা মোঃ হাসানুর রহমান বলেন,‘বিড়ি কারখানায় কাজ করে দুবেলা দুমুঠো জুটে। স্ত্রী-সন্তান সন্তুতিদের । আমাদের বেচে থাকার অধিকার আছে। বৃদ্ধ বাবা মাকে আমরা বিড়ি কারখানায় কাজ করে খাওয়াই। প্রধানমন্ত্রী যেন রুটি রুজি কেড়ে না নেন।

যশোর বিড়ি শ্রমিক নেতা আলমগীর হোসেন বলেন, বিড়ি কারখান বন্ধ হলে আমরা কর্ম হারাব। ফলে চুরি ডাকাতি ছিনতাই অপরাধ কর্মে জড়িত হয়ে পড়বে। বিড়ি শিল্প বন্ধ করে প্রধানমন্ত্রী যেন এ ধরণের অপরাধে উৎসাহ না দেন সেদিকে সুদৃষ্টি কামনা করছি। 

শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম-সম্পাদক হারিক হোসেন বলেন,‘আমরা না পারি ভাল খেতে না পারি ভাল পরতে। তারপরও যদি কর্ম বন্ধ করে দেয় তাহলে কোন উপায় থাকবে না। বিড়ির উপর সম্পূর্ণ কর তুলে নিয়ে কুটির শিল্প করার ঘোষণা দাবি জানান। 

শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন,‘বাজেট এলেই আমাদের খাওয়া ঘুম থাকে না। কর্ম হারানো ভয়ে দিনাতিপাত করতে হয়। আমরা কর্মের সুরক্ষা চাই। 

শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এম কে বাঙ্গালী বলেন,‘বিড়ি কারখান বন্ধ হলে আমাদের রাস্তায় থালা নিয়ে ভিক্ষা করতে হবে। শ্রমিকরা অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়বে। আগামী ২০১৯-২০ অর্থ বছর বাজেটে বিড়ির উপর কোন করারোপ না করা হয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ করেন। বিড়ির উপর করারোপ করা হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে বলেও হুশিয়ারি করেন এ শ্রমিক নেতা। এছাড়াও মালিকদের প্রতি শ্রমের ন্যায্যমূল্য দেওয়ার দাবি করেন তিনি। তিনি আরো বলেন,দীর্ঘদিন ধরে আমরা এ লড়াই করে আসছি। আমাদের লড়াই চলছে চলবে।