প্রিয় নবীর পরিবারের সদস্য যাঁরা

প্রিয় নবীর পরিবারের সদস্য যাঁরা

ফাইল ছবি

মুফতি তাজুল ইসলাম    

নাম : মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ।

উপনাম : আবুল কাসেম।

পিতা : আবদুল্লাহ ইবনে মুত্তালিব (আবদুল মুত্তালিবের দশম সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ)।

মাতা : আমেনা বিনতে ওহ্হাব।

দাদা : আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম।

দাদি : ফাতেমা বিনতে আমর।

নানা : ওহ্হাব ইবনে আবদে মানাফ।

নানি : বোররা বিনতে ওমজা।

জন্মস্থান : মক্কা (বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত)।

গোত্র : কোরাইশ।

বংশ : হাশিমি।

জন্ম সময় : রাত অতিবাহিত হয়ে প্রত্যুষকালে।

নবীপত্নীরা : মক্কা থেকে মদিনায় ইতিহাসখ্যাত হিজরতের মাত্র তিন বছর আগে খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকাল হয়। এ সময় নবী (সা.)-এর বয়স ছিল ৪৯ বছর। খাদিজা (রা.)-এর মৃত্যু পর্যন্ত তিনিই ছিলেন নবী (সা.)-এর একমাত্র স্ত্রী। খাদিজা (রা.)-এর মৃত্যুর পর তিনি একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করেন। তাঁদের অনেকেই ছিলেন বিধবা বা যুদ্ধে স্বামীহারা অথবা স্বামী পরিত্যক্তা কিংবা দুস্থ। কোনো বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আল্লাহ পাকের সরাসরি নির্দেশে। নামের তালিকা নিচে রয়েছে :

১.  হজরত খাদিজা (রা.) : নবী করিম (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী। তিনি বিধবা, তবে বিদুষী, ধনী নারী ছিলেন। পবিত্র মক্কায় তিনি ‘তাহেরা’ অর্থাৎ পবিত্র বলে পরিচিত ছিলেন। নবী (সা.)-এর চেয়ে কমপক্ষে ১৫ বছরের বড় ছিলেন তিনি। নবুয়তের প্রথম জীবনে নবী (সা.)-এর দাওয়াতের কাজে তিনি বিশেষভাবে পাশে দাঁড়ান।

২.  সাওদা বিনতে জামআ (রা.) : প্রথমে সাকরান ইবনে আমরের স্ত্রী ছিলেন। সাকরানের মৃত্যুর পর নবী (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

৩.  আয়েশা (রা.) : আবু বকর (রা.)-এর কন্যা। যাঁদের সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর বিয়ে হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে শুধু আয়শা (রা.)-ই কুমারী মেয়ে ছিলেন। নবী (সা.)-এর ওফাতের সময় আয়েশা (রা.)-এর বয়স ছিল ১৮ বছর। নবী (সা.)-এর বহু হাদিস আয়েশা (রা.)-এর মাধ্যমে মানবজাতির কাছে পৌঁছেছে। তাঁর প্রখর স্মরণশক্তি এ কাজে সহায়ক হয়েছিল।

৪.  হাফসা (রা.) : ওমর (রা.)-এর কন্যা ছিলেন তিনি। প্রথম জীবনে উনাইস ইবনে হোজাফা (রা.)-এর স্ত্রী ছিলেন। উনাইস (রা.) যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পর নবী (সা.) তাঁকে স্ত্রী হিসেবে বরণ করেন।

৫.  জয়নাব বিনতে খুজাইমা (রা.) : তিনি মদিনায় নিঃস্বদের জননী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রথম জীবনে তাঁর বিয়ে হয়েছিল তোফায়েল ইবনে হারিছের সঙ্গে। তালাকপ্রাপ্ত হয়ে তোফায়েলেরই ভাই উবায়দাকে বিয়ে করেন তিনি। উহুদের যুদ্ধে উবায়দা শহীদ হন। পরে অসহায় জয়নাবকে বিয়ে করেন নবী (সা.)। কিন্তু বিবাহিত জীবনের ছয় মাসের মধ্যেই তিনি ইন্তেকাল করেন।

৬.  সালামা (রা.) : প্রথম জীবনে তাঁর বিয়ে হয়েছিল আবু সালামা (রা.)-এর সঙ্গে। উহুদের যুদ্ধে আবু সালামা (রা.) শহীদ হন। বিধবা উম্মে সালামাকে অবশেষে নবী (সা.) স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। ইতিহাসবিদরা বলেন, নবী (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে তিনিই সবার শেষে মৃত্যুবরণ করেন।

৭.  জয়নাব বিনতে জাহাল (রা.) : তিনি ছিলেন নবী (সা.)-এর ফুফাতো বোন। নবী (সা.) প্রথমে তাঁর এই বোনকে তাঁর পালকপুত্র জায়েদ (রা.)-এর সঙ্গে বিয়ে দেন। এ বিয়েতে গোড়া থেকেই জয়নাব (রা.)-এর আপত্তি ছিল। ফলে তাঁদের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি। পরে তাঁদের পারিবারিক জীবনে বিচ্ছেদ ঘটে। জয়নাব (রা.)-এর আপত্তিতে এ বিয়ে সংঘটিত হওয়ায় এবং পরে বিচ্ছেদ ঘটায় নবী (সা.)-এর মনে কিছুটা অনুশোচনা আসে। এ থেকে জয়নাব (রা.)-কে নিজে বিয়ে করার প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও তৎকালীন আরবের কুসংস্কারের জন্য তা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। পরে পবিত্র কোরআনের সুরা আহজাবে আয়াত নাজিল হয়। সেখানে পালক ছেলে ও ঔরসজাত সন্তান সমানতুল্য নয় বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে কুসংস্কার নির্মূল করার উদ্দেশ্যে নবী (সা.)-এর মাধ্যমে সেই বিধান বাস্তবায়ন করে দেখানোর প্রয়োজন অনুভূত হয়। তখনই জয়নাব (রা.)-এর সঙ্গে নবী (সা.)-এর বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

৮.  জুওয়াইরিয়া (রা.) : একটি আরব গোত্রের সরদার হারিছের কন্যা। যুদ্ধে বন্দিনী হয়ে আসেন। মহানবী (সা.) যুদ্ধবন্দির সঙ্গে বিয়ে আবদ্ধ হন। উপহার হিসেবে গোত্রের সব বন্দি মুক্তিলাভ করে। তাঁর পিতা হারিছও ইসলাম গ্রহণ করেন।

৯.  উম্মে হাবিবা (রা.) : মহানবী (সা.)-এর চাচা আবু সুফিয়ানের কন্যা। প্রথমে উবায়দুল্লাহ বিন জাহালের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। দুজনই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং আফ্রিকার হাবশায় হিজরত করেন। কিন্তু সেখানে উবায়দুল্লাহ খ্রিস্টান হয়ে যান। উবায়দুল্লাহর থেকে উম্মে হাবিবাকে মুক্ত করতে তিনি হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশির মাধ্যমে চাচাতো বোন উম্মে হাবিবা (রা.)-কে বিয়ে করেন।

১০. সাফিয়া (রা.) : তিনি ছিলেন নবীদেরই বংশধর। হজরত মুসা (আ.)-এর ভাই হজরত হারুন (আ.)-এর অধস্তন বংশধারার কন্যা। প্রথমে কিনানা ইবনে আবিলের স্ত্রী ছিলেন তিনি। কিনানার মৃত্যুর পর মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।

১১. মায়মুনা (রা.) : তিনি প্রথমে মাসউদ বিন ওমরের স্ত্রী ছিলেন। তিনি তালাক দিলে আবু রিহামের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। আবু রিহাম মারা যাওয়ার পর মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।

মহানবী (সা.)-এর সন্তানরা
পুত্র :    ১. কাসেম (তাঁর নামানুসারে মহানবী (সা.)-এর উপনাম হয়েছিল আবুল কাসেম)।

    ২. তাহের (অনেক ঐতিহাসিক বলেছেন তাঁর নাম ছিল ‘আবদুল্লাহ’)।

    ৩. ইবরাহিম। (তিনি ছিলেন মারিয়া কিবতিয়া (রা.)-এর গর্ভজাত)।

কন্যা :   ৪.  ফাতিমা ৫. জয়নাব ৬. রোকাইয়া ৭. উম্মে কুলসুম।

জীবনীকারদের কেউ কেউ বলেছেন, জয়নাব ছিলেন মহানবী (সা.)-এর সব সন্তানের মধ্যে বড়। কেউ বলেছেন, রোকাইয়া ছিলেন সবার বড়, আবার কেউ বলেছেন, উম্মে কুলসুম ছিলেন সবার বড়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, রোকাইয়া ছিলেন সবার বড় এবং উম্মে কুলসুম ছিলেন সবার ছোট। (সূত্র : মুফতি শফি (রহ.), সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা. ২৭)

ইবরাহিম ছাড়া উল্লিখিত সন্তানদের সবাই ছিলেন খাদিজা (রা.)-এর গর্ভজাত।

মহানবী (সা.)-এর এই তিন পুত্রসন্তানের সবাই শৈশবে মারা যান। তবে কাসেম সওয়ারিতে আরোহণ করতে পারতেন, এমন বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন।