মাহে রামাদান: আমাদের প্রস্তুুতি

মাহে রামাদান: আমাদের প্রস্তুুতি

রামাদানে কুরআন পাঠের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে

 

ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে রামাদানের রোযা অন্যতম। প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মুসলমানের উপর প্রতি বছর মাহে রমাদানে এক মাস রোযা পালন করা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরয। আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ “যে ব্যক্তি এ মাসের সাক্ষাত পাবে সে যেন এ মাসে রোযা পালন করে।” (সূরা আল-বাকারা-১৮৫) এই রোযা পালনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ “হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম বা রোজা ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।” (সূরা আল-বাকারা-১৮৩) এজন্য রমাদান আসার আগেই আমাদের রোযার মাসে অধ্যয়ন ও ইবাদত-বন্দেগীর একটা প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার। রাসূল (সা.) রজব মাস আসলেই মাহে রমাদানের প্রস্তুুতি নিতেন। আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, عن أنس بن مالك قال : كان النبي صلى الله عليه و سلم إذا دخل رجب قال اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبارك لنا في رمضان “হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন রজব মাস আসতো তখন রাসূল (সা.) বলতেন, হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে রজব ও শা’বানে বরকত দান করো এবং মাহে রমাদানে আমাদের বরকত দান করো।” (মুসনাদে আহমদ) নি¤েœ মাহে রমাদানের প্রস্তুতি সম্পর্কে আলাচনা করা হলোঃ

আল-কুরআন অধ্যয়নের প্রস্তুতি গ্রহন করা:
মাহে রমাদান আল-কুরআন নাযিলের মাস। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ “রমাদান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। (সূরা আল-বাকারা-১৮৫) 
এই কুরআনই মানুষকে হেদায়াত দিতে পারে, সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারে, অন্ধকার থেকে বের করে আলোর পথে নিয়ে আসতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, إِنَّ هَذَا الْقُرْآَنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا (৯) وَأَنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآَخِرَةِ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا (১০) وَيَدْعُ الْإِنْسَانُ بِالشَّرِّ دُعَاءَهُ بِالْخَيْرِ وَكَانَ الْإِنْسَانُ عَجُولًا (১১) “নিশ্চয় এ কুরআন এমন একটি পথ দেখায় যা সবচেয়ে সরল এবং যে মুমিনগণ নেক আমল করে তাদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। আর যারা আখিরাতে ঈমান রাখে না আমি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব। (সূরা বনি ইসরাইল ৯-১০)
قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ (১৫) يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ (১৬) “অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তাঁর সন্তুষ্টির অনুসরণ করে এবং তাঁর অনুমতিতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হিদায়াত দেন। (সূরা মায়েদা ১৫-১৬)
যারা এই কুরআনের অনুস্বরণ করবে এবং আল-কুরআনের বিধান সমাজে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের পুরস্কার হিসেবে জান্নাত দান করবেন। আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ وَاسْتَظْهَرَهُ ، فَأَحَلَّ حَلاَلَهُ ، وَحَرَّمَ حَرَامَهُ أَدْخَلَهُ اللَّهُ بِهِ الجَنَّةَ وَشَفَّعَهُ فِي عَشَرَةٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ كُلُّهُمْ قَدْ وَجَبَتْ لَهُ النَّارُ.  “হযরত আলী ইবনে আবি তােিলব (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল-কুরআন অধ্যয়ন করবে এবং কুরআনকে সমাজে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। কুরআনে বর্ণিত হালালকে হালাল হিসেবে মেনে নিবে, হারামকে হারামকে হারাম হিসেবে মেনে নিবে। আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং কিয়ামতের দিন তার পরিবারের ১০জনকে শাফায়াত করার সুযোগ লাভ করবে যে দশ জনের উপরে জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিলো।” (সূনান আরত-তিরমিযি) 
তাই রমাদান আসার আগেই আমাদের আল-কুরআন অধ্যয়নের প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে। মাহে রমাদানে পবিত্র আল-কুরআন পুরোটা অর্থসহ বুঝে পড়ার চেষ্টা করতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ আয়াতগুলো গভীরভাবে অধ্যয়ন করে কুরআনে বর্ণিত হালাল-হারাম ও ইসলামের বিধানগুলো সম্পর্কে জানার এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।

মুত্তাকী হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া:
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ “হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম (রোযা) ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।” (সূরা আল-বাকারা-১৮৪) 
রাসূল (সা.) তাঁর জবানীতে রোযা রাখার পদ্ধতি সম্পর্কে বলেছেন, مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. “যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে রমযানের রোযা রাখবে তার পূর্বের যাবতীয় গুনাহ মাফ করা হবে। (সহীহ আল-বুখারী) 
এখানে রোযা পালন করার ব্যাপারে ২টি পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাহলোঃ 
১. ঈমান: ঈমান অর্থ বিশ্বাস স্থাপন করা। তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাতসহ ইসলাম নির্দেশিত বিষয়গুলির উপর প্রগাঢ় বিশ্বাস স্থাপন করাকে ঈমান বলা হয়। ইসলামী পরিভাষায়, মৌখিক স্বীকৃতি, আন্তরিক বিশ্বাস ও সেটাকে কাজে পরিণত করার নামকে ঈমান বলা হয়। 
২. এহতেসাব: এহতেসাব শব্দের অর্থ হচ্ছে সংস্কারের উদ্দেশ্যে সমালোচনা করা। এখানে সংস্কারের উদ্দেশ্যে সমালোচনার বিষয়টা নিজের সংস্কারের জন্য। যাকে বলা হয় আত্মসমালোচনা। 
ঈমান ও এহতেসাব (আত্মসমালোচনা) এর মাধ্যমে রোজা রাখার বিধান থাকার কারণে রোজাদার তার সকল কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার আদেশ-নিষেধ মেনে চলছেন কি না সে ব্যাপারে আত্মসমালোচনা করতে হবে। আর আত্মসমালোচনায় অন্যায় বা খারাপ ধরা পড়লে সাথে সাথে তা পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ রাসূল (সা.) বলেছেন, مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ. “যে ব্যক্তি রোজা রাখলো অথচ মিথ্যা কথা ও কাজ পরিহার করতে পারল না, আল্লাহর কাছে তার খাদ্য-পানীয় পরিত্যাগের কোনই মূল্য নেই। (সহীহ আল-বুখারী) 
এ হাদীস আমাদেরকে পরিস্কার বলে দিচ্ছে, রোজা অবস্থায় অন্যয়-অপকর্ম, অশ্লীল আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কাজেই রোযাদার এ হাদীসের শিক্ষা তার জীবনে বাস্তব প্রয়োগ করবে। অর্থাৎ রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে সংস্কারের উদ্দেশ্যে নিজেই নিজের সমালোচনা করবে। আত্মসমালোচনার মাধ্যমে যে সকল অন্যায় কাজ-কর্ম বা আচরণ ধরা পড়বে সাথে সাথে সেটা পরিত্যাগ করার জন্য তাওবা করে ভবিষ্যতে এ কাজ না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করবে। এভাবে যদি প্রতিদিন বান্দাহ রোযা পালন করে এবং বছরের বাকি দিনগুলি এই শিক্ষার আলোকে পরিচালিত করতে পারে তাহলে এই রোজা আল্লাহর নিকট গ্রহনযোগ্য হবে এবং সে মুত্তাকী হিসেবে গণ্য হবে। 
মাহে রমাদান আসার পূর্বেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, যাতে রোজা থাকা অবস্থায় সকল প্রকার অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখে স্বীয় আত্মাকে পবিত্র করতে পারি। এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে শয়তানের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করে রোজার শিক্ষা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। 

তারাবীহ ও কিয়ামুল লাইল এর প্রস্তুতি নেওয়া:
রমাদান মহিমান্বিত, কল্যাণময় বরকতপূর্ণ মাস। রমাদান রহমত, মাগফিরাত ও নাযাতের মাস। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, وَهُوَ شَهْرٌ أَوَّلُهُ رَحْمَةٌ، وَأَوْسَطُهُ مَغْفِرَةٌ، وَآخِرُهُ عِتْقٌ مِنَ النَّارِ “এ মাসের প্রথম ১০দিন রহমতের, ২য় ১০দিন মাগফিরাতের, ৩য় ১০দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি বা নাযাতের।” (বাইহাকী শুআবুল ঈমান) 
রমাদান গুনাহ মাফের মাস। এ সম্পর্কে হাদীসে জিবরাঈলে বলা হয়েছে, مَنْ أَدْرَكَ شَهْرَ رَمَضَانَ فَصَامَ نَهَارَهُ، وَقَامَ لَيْلَهُ ثُمَّ مَاتَ فَلَمْ يُغْفَرْ لَهُ فَدَخَلَ النَّارَ، فَأَبْعَدَهُ اللهُ، قُلْ: آمِينَ، قُلْتُ: أَمِينَ، “জিবরাঈল (আ.) বলেন, হে মুহাম্মদ (সা.) যে ব্যক্তি রমাদান মাস পেল আর দিনের বেলায় রোযা পালন করে এবং রাত্রে দাড়িয়ে ইবাদত করে তার গুনাহ মাফ করাতে পারল না তাকে জাহান্নামে দেওয়া হলো। আল্লাহ তাকে রহমত থকে দূরে সরিয়ে দিন। আপনি বলুন আমীন। আমি বললাম আমীন।” (বাইহাকী শুআবুল ঈমান)

তাই রমাদার আসার আগেই প্রতিদিন তারাবীহ এর নামায জামায়াতে আদায় করার প্রস্তুতি নেওয়া এবং প্রতি রাত্রেই কিয়ামুল লাইল বা রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত-বন্দেগী করার মানুসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা। রাত্রি জাগরণের সুফল সম্পর্কে আল-হাদীসে বলা হয়েছে, وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. “যে ব্যক্তি ঈমান ও এহতেসাবের সাথে লায়লাতুল কদরের রাত্রে দন্ডায়মান হয়ে ইবাদত করবে তারও আল্লাহ পূর্বের গুনাহ-খাতা মাফ করে দিবেন।” (সহীহ আল-বুখারী)
  
এখানে যে রাত্রের কথা বলা হয়েছে আল-কুরআনের বর্ণনা মতে, এ রাত্রের মর্যাদা এতই বেশী যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন, إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ  وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ  لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ  تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ  سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ  “নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে।’ তোমাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল কদর’ কী? ‘লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।” (সূরা কদর) 
এ থেকে আমরা স্পষ্ট জানতে পারি লায়লাতুল কদরের রাত্রে অর্থাৎ রমজানের শেষ দশ দিনের রিজোড় রাত্রে যদি কোন রোজাদার মুমিন দাড়িয়ে অথবা বসে আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়ে দেয় এবং এই বছরের বাকি দিনগুলি ঐ শিক্ষার আলোকে চলতে পারে তাহলে আল্লাহ তার পূর্বের সকল অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন।  
তাই আমাদের উচিৎ নিজেকে পবিত্র করে খাঁটি ঈমানদার হওয়ার চেষ্টা করা এবং লায়লাতুল কদরের রাতকে হেলায় হারিয়ে না ফেলে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থেকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা। এখন থেকেই সেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা। 


বেশী বেশী ভালো আমল করার প্রস্তুতি নেওয়া:
মাহে রমাদান আসার পূর্বেই আমাদের মানুসিক প্রস্তুতি নিতে হবে এবং পরিকল্পনা তৈরী করতে হবে, যাতে এ মাসে বেশী বেশী ভালো আমল করতে পারি। এ মাসের ১টি ভালো আমল অন্য মাসের চেয়ে সাতশতগুন আল্লাহ বাড়িয়ে দেন। এবং রোযা পালনকারী মুত্তাকীদের প্রতিদান আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাতে প্রদান করবেন। আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم  إِنَّ رَبَّكُمْ يَقُولُ كُلُّ حَسَنَةٍ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ وَالصَّوْمُ لِى وَأَنَا أَجْزِى بِهِ الصَّوْمُ جُنَّةٌ مِنَ النَّارِ “হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের রব বলেছেন, বনি আদমের প্রত্যেক নেক আমল সাতশত গুণ বাড়িয়ে দিব। কিন্তু রোজা আমার জন্য আর এর প্রতিদান আমি নিজ হাতে প্রদান করব। আর রোজা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য ঢাল স্বরূপ।” (সূনান আন-তিরমিযি) 
রোযাদারের প্রতিদান সম্পর্কে রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ “জান্নাতে ‘রাইয়ান’ নামক একটি দরজা আছে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদারগণ ঐ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহীহ আল-বুখারী) 

আল্লাহর ক্ষমা ও মাগফিরাত লাভের প্রস্তুতি নেওয়া:
মাহে রমাদান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, وَهُوَ شَهْرٌ أَوَّلُهُ رَحْمَةٌ، وَأَوْسَطُهُ مَغْفِرَةٌ، وَآخِرُهُ عِتْقٌ مِنَ النَّارِ “এ মাসের প্রথম ১০দিন রহমতের, ২য় ১০দিন মাগফিরাতের, ৩য় ১০দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি বা নাযাতের।” (বাইহাকী শুআবুল ঈমান) 
রমাদান গুনাহ মাফের মাস: হাদীসে জিবরাঈলে বলা হয়েছে, مَنْ أَدْرَكَ شَهْرَ رَمَضَانَ فَصَامَ نَهَارَهُ، وَقَامَ لَيْلَهُ ثُمَّ مَاتَ فَلَمْ يُغْفَرْ لَهُ فَدَخَلَ النَّارَ، فَأَبْعَدَهُ اللهُ، قُلْ: آمِينَ، قُلْتُ: أَمِينَ، “জিবরাঈল (আ.) বলেন, হে মুহাম্মদ (সা.) যে ব্যক্তি রমাদান মাস পেল আর দিনের বেলায় রোযা পালন করে এবং রাত্রে দাড়িয়ে ইবাদত করে তার গুনাহ মাফ করাতে পারল না তাকে জাহান্নামে দেওয়া হলো। আল্লাহ তাকে রহমত থকে দূরে সরিয়ে দিন। আপনি বলুন আমীন। আমি বললাম আমীন।” (বাইহাকী শুআবুল ঈমান)
রমাদানের রোজা জাহান্নাম থেকে বেচে থাকার জন্য ঢাল স্বরূপ। এ সম্পর্কে আল-হাদীসে বর্নিত হয়েছে, عن عُثْمَانُ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ يَقُولُ : الصِّيَامُ جُنَّةٌ مِنَ النَّارِ ، كَجُنَّةِ أَحَدِكُمْ مِنَ الْقِتَالِ “হযরত উসমান (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, রোজা হচ্ছে জাহান্নামের আগুন থেকে বাচার জন্য ঢাল স্বরূপ। যেমন ঢাল তোমাদের একজনকে হত্যা থ্্েকটাককে রক্ষা করে।” (সূনান ইবনে মাজাহ) 
এ হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট জানা যায়, মাহে রমাদান আমাদের মাঝে আসে আমাদের গুনাহ মাফের জন্য, আমাদের মাগফিরাতের জন্য এবং জাহান্নাম থেকে নিজেকে পরিত্রানের জন্য। তাই মাহে রমাদান আসার পূর্বেই আমাদের এ মাসে ভালো আমল করে নিজের গুনাহ মাফ করে নেওয়া, জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে হেফাজত করার প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। 

পরিশেষে বলা যায়, এখন থেকেই উপরোক্ত প্রস্তুতি নিয়ে মাহে রমাদানে ভালো আমল করতে পারলে এবং  আত্মসমালোচনার মাধ্যমে রোজা পালন করতে পারলে ‘রাইয়ান’ নামক দরজা দিয়ে নিআমতে ভরা জান্নাতে প্রবেশ করা সম্ভব হবে। আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, عَنْ سَهْلٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ “হযরত সাহাল (রা.) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, জান্নাতে ‘রাইয়ান’ নামক একটি দরজা আছে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদারগণ ঐ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহীহ আল-বুখারী) আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন।