মধ্যপ্রাচ্যে আরো সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

মধ্যপ্রাচ্যে আরো সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ

মধ্যপ্রাচ্যে 'ইরানি বাহিনীগুলোর অব্যাহত হুমকি মোকাবেলায়' আরো সেনা, অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শানাহান একটি বিবৃতিতে বলেছেন, সেখানে পনেরোশো সেনা পাঠানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রও মোতায়েন করা হবে।

কংগ্রেসকে বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

শুক্রবার দিনের প্রথম ভাগে এই পদক্ষেপের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, এই সেনা মোতায়েন তুলনামূলকভাবে স্বল্প।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন যে, দেশটি তেলের ট্যাংকারে হামলা চালাচ্ছে।

এ মাসে ওমান উপসাগরে কয়েকটি তেলের জাহাজে রহস্যজনক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরো বেড়েছে।

এরপর ওই এলাকায় বিমানবাহী রণতরী এবং বোমারু বিমান মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ পদক্ষেপের কি মানে?

মি. শানাহান বলেছেন, ওই এলাকায় অতিরিক্ত সেনা চেয়ে কমান্ডারদের অনুরোধের তিনি অনুমোদন দিয়েছেন।

তিনি বলছেন, এই পদক্ষেপ হলো ইরানিয়ান সেনাবাহিনী, আইআরজিসির অব্যাহত হুমকির মোকাবেলায় এই সেনারা একটি রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করবে।

আইআরজিসি হলো ইরানি রেভুল্যশনারি গার্ড কর্পস, সামরিক বাহিনীর একটি এলিট শাখা, যাদের গত মাসে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

মি. শানাহান বলছেন, প্রকৌশল দলের অংশ হিসাবে সেখানে অতিরিক্ত গোয়েন্দা ও নজরদারি সরঞ্জাম এবং বিমান মোতায়েন করা হবে।

একটি ফাইটার এয়ারক্রাফট স্কোয়াড্রন ও প্যাট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমও পাঠানো হবে।

''এটা ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যাতে ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য যেকোনো হুমকির সম্ভাবনা কমিয়ে আনা যায়'' বলছেন মি. শানাহান।

এর আগে শুক্রবার সকালের দিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, 'খুবই ছোট একটি বাহিনী' সেখানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

''আমরা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা চাই'' এবং অতিরিক্ত সেনা এই নিরাপত্তায় কাজ করবে বলে তিনি জানান।

তবে এর ফলে উত্তেজনা আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তিনি নাকচ করে দেন।

''এই মুহূর্তে আমার মনে হয় না যে, ইরান একটি যুদ্ধ চায়, এবং আমি নিশ্চিতভাবেই মনে করি, তারা আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে চায় না।'' বলেছেন মি. ট্রাম্প।

বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো নতুন এসব সরঞ্জাম ও কর্মীর মাধ্যমে ইরানের ওপর আরো গভীরভাবে নজর রাখা সম্ভব হবে।

তবে ওই অঞ্চলে ইরানি হুমকি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র আসলে কি পদক্ষেপ নেবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

উত্তেজনার পেছনের কারণ কী?

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা এই মাস থেকে নতুন করে শুরু হয়েছে, যখন ইরানের কাছ থেকে কেনাকাটা করা দেশগুলোকে দেয়া ছাড় তুলে নেয় ওয়াশিংটন।

ইরানের তেল বিক্রি শূন্যতে নামিয়ে আনাই ওই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য, যা দেশটির সরকারের আয়ের প্রধান উৎস।

ছয় জাতির সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে গিয়ে গতবছর পুনরায় ইরানের ওপর অবরোধ আরোপ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ইরান এখন ঘোষণা দিয়েছে, ওই চুক্তিতে দেয়া বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি তারাও স্থগিত করতে যাচ্ছে।

কিছুদিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চারটি তেলে ট্যাংকারে অন্তর্ঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। এরপরে সৌদি আরবের দুইটি তেল পাম্পিং স্টেশনে ড্রোন হামলা করে সাময়িকভাবে তেলের পাইপলাইন বন্ধ করে দেয় ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা, যাদের সমর্থন করছে ইরান।

ইরান এসব হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট স্টাফের পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মাইকেল গিলডে এজন্য আইআরজিসিকে সরাসরি দায়ী করেছেন।