ওসি মোয়াজ্জেম কারাগারে

ওসি মোয়াজ্জেম কারাগারে

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ ভিডিওতে ধারণ এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (১৭ জুন) বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ আগামী ৩০ জুন নির্ধারণ করেন আদালত।

সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী  ‘বিচারক উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’

মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী সালমা আক্তার ও ফারুক আহমেদ এই জামিন আবেদন করেছেন। আর শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ।  

বাদী সায়েদুল হক সুমন আদালতে বলেন, ‘আসামি যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতো, তাহলে সে কেন এতদিন আত্মগোপনে ছিল? সে পুলিশ বিভাগের কলঙ্ক।’ তিনি জামিনের বিরোধিতা করেন।

এ সময় আসামির পক্ষে আইনজীবী ফারুক আহমেদ শুনানিতে অংশ নেন। তিনি  বলেন, আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তিনি ভিডিও প্রচার করেছেন। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে তিনি এটি প্রচার বা প্রকাশ করেন নাই। মূলত একটি মামলার এজাহার হলে পরবর্তীতে বাদী বিভিন্ন চাপের কারণে মামলা উঠিয়ে নেয়। মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে মোয়াজ্জেম তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। তবে তিনি প্রচার করেন নাই। আর আসামি মোয়াজ্জেম বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে যে তিনি পলাতক ছিলেন। আসলে তিনি পলাতক ছিলেন না। তিনি আদালতে আসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন। আদালতে আসার কোনও পরিবেশ ছিল না। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিন নিতে গিয়েছিলেন। ওখানে হাইকোর্টের একটা টেন্ডার নম্বরও আছে। তাকে সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তিনি হাইকোর্টে জামিন নিতে গিয়েছিলেন। আসামি আদালতে হাজির আছেন।তার আইন জীবী জামিনের প্রার্থনা করেন। 

এরপর আদালত ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।

এর আগে সোমবার (১৭ জুন) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে আসামি মোয়াজ্জেমকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। গ্রেফতার পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর  রবিবার (১৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানার পুলিশ।

গত ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা মামলার ১২৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালে। এরপর বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

 নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের পরীক্ষার্থী ছিলেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন তিনি। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। গুরুতর দগ্ধ নুসরাত পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হার মানেন। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তিনি মারা যান।