নিরাপদ খাদ্যের সন্ধানে: ভাত রান্নার সঠিক পদ্ধতি

নিরাপদ খাদ্যের সন্ধানে: ভাত রান্নার সঠিক পদ্ধতি

ভাত রান্নার সঠিক পদ্ধতি

ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর

স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ খাদ্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভেজাল কিংবা ক্ষতিকর উপাদান সম্বলিত খাদ্য গ্রহণ ইদানিংকালে প্রকটভাবে দেখা দেওয়া ক্যান্সার, কিডনী ফেইলিউরসহ বিভিন্ন রোগের অন্যতম কারণ। বিভিন্ন কারণে খাদ্য দ্রব্যে নানা ক্ষতিকর উপাদান মেশানো হয়।

আগাম বাজারজাত করে বেশী দামের প্রত্যাশায় হরমোন প্রয়োগ কাঁচাফল  পাকানোর জন্য কার্বাইড, পচনশীলতা থেকে রক্ষা করার জন্য ফরমালিন -জানা কয়েকটি ক্ষতিকর উপাদান। তবে পরিবেশ মাটি,বায়ু,পানি, দূষণের ফলে উৎপাদিত ফসলেও ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। ব্যবহৃত কীটনাশকের অস্থিত্ব থেকে যাচ্ছে শাক-সবজি ফলসহ অনান্য খাদ্যে।

নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি বেশ পুরানো বাংলাদেশে। আর্সেনিকযুক্ত পানি সেচে ব্যবহার করার ফলে উৎপাদিত ফসলেও আর্সেনিকের উপস্থিতি সনাক্ত করা হয়েছে। চালে আর্সেনিক নিরাপদ খাদ্যের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। চাল আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের মাথা পিছু চাল গ্রহনের হার বেশি। খাদ্য দ্রব্যের উর্দ্ধমূল্যের সময়ে অনেকের খাবারে শুধু ভাতই জোটে, যা দিয়ে ক্ষুধা নিবৃত্তির সাথে সাথে স্বাস্থ্য রক্ষার প্রচেষ্টাও থাকে। চালে আর্সেনিকসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতিতে তাই স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। আর্সেনিক কিংবা অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান সম্বলিত চাল থেকে কিভাবে নিরাপদ ভাত রান্না করা যায়, সে ব্যাপারে সকলের সচেতন হওয়া দরকার ।

প্রথমেই রান্নার চাল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত পানির স্বচ্ছতা অবিকৃত না থাকে ততক্ষন পর্যন্ত বার বার ধুতে হবে। সেটি ৫-৬ বারও হতে পারে। ভালোভাবে ধোয়ার পর চালের তুলনায় ৪-৫ গুন বেশি পরিমানের পানি দিয়ে চাল চুলায় দিতে হবে । ২০ মিনিট মতো রান্না হবার পর ছাকনা দিয়ে আধা সিদ্ধ চাল পানি থেকে তুলে নিয়ে পানিটুকু ফেলে দিতে হবে । তারপর আবার নতুন গরম পানি দিয়ে আধাসিদ্ধ চাল চুলায় দিতে হবে ও নরম আচে রান্না করতে হবে, যতক্ষণ পরিপূর্ণ সিদ্ধ না হয়। পুরোপুরি সিদ্ধ হবার পর ভাত ছাকনি দিয়ে ছেঁকে আলাদা করে নিতে হবে এবং পানি ফেলে দিতে হবে। কোন অবস্থাতে ভাতের সাথে পানি শুকিয়ে ফেলা যাবে না ।

রান্নার আগে চাল কয়েকবার ধুয়ে নেবার ফলে আধাসিদ্ধ চাল থেকে পানি ফেলে দেবার কারণে সবশেষে সম্পূর্ণ পানি ভাতের সাথে শুকিযে না নিয়ে আলাদা করে বাদ দেওয়ার জন্য প্রতি ধাপেই চাল থেকে আর্সেনিকসহ অনান্য ক্ষতিকর উপাদান আলাদা হয়ে ভাতকে নিরাপাদ খাদ্যে পরিণত করবে।

আমাদের প্রচলিত ভাত রান্নার চাইতে এই প্রক্রিয়া ভিন্ন ও সময় সাপেক্ষ। তবে অসুস্থতা থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজনে আমাদের এই বাড়তি সময় ও প্রচেষ্টা গ্রহন করতে হবে । নচেৎ অসুস্থ হলে এর চাইতে বেশী সময় ও অর্থ ব্যয় হবার সম্ভবনা থেকে যাচ্ছে ।

   ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ