বিশ্ব ভালবাসা দিবস

বিশ্ব ভালবাসা দিবস

ফাইল ছবি

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। দিনটিকে বিশ্ব ভালবাসা দিবস নাম দেয়া হয়েছে।আমাদের দেশে  বর্তমান প্রজন্মের সকলে এ দিন নিয়ে মাতামাতি করে না, বরং একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যা চরমভাবে তা অপছন্দ করছে। ফেসবুকের ঝড়বার্তা সেটিই প্রমাণ করছে। আমার কথা যারা এ দিনকে পালন করছে তাদের নিয়ে।যারা এ দিন নিয়ে নানাভাবে ব্যস্ত- তোমরা আমাদেরই সন্তান অথবা আপনজন। তোমাদেরকে নিয়েই আমাদের জীবন, ভাললাগা, বেঁচে থাকা, হাসি-কান্নার যত গল্প। তোমাদের কোনো কাজকে চোখ বুঁজে অস্বীকার করলে আমরা থাকি কোথায়? তাই বলছি, তোমাদের একটু জানতে চেষ্টা করো- এ দিনটির জন্ম কোথায়, কখন, কেনো, কীভাবে হলো? আমার জানামতে এ দিনটির জন্ম হয়েছে ঐ সমাজে, যেখানে অনেক সন্তান-সন্ততি তার বাবার পরিচয় জানে না বা কখনই জানবে না, তাদের কোনো উত্তরাধিকার নেই, যুগলরা ভাবতেই পারে না তাদের দীর্ঘ সংসার জীবন, বিবাহ যেখানে একান্ত গৌণ বিষয়, পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি যেখানে সত্যিকার অর্থেই  নামকাওয়াস্তে টিকে আছে, যারা দুনিয়া জুড়ে আইলান কুর্দীর ইতিহাস গড়ছে, অন্যের দেশের 'কহিনূর' যাদের যাদুঘরকে সমৃদ্ধ করছে আজও, কেবল গায়ের  রঙ (বর্ণবাদ) যাদের পরস্পরকে ভালবাসতে শেখায়,  একমাত্র রঙীন পানীয় যাদের ক্ষণিকের তরে স্বস্তি লাভের ভরসা..... আমরা কী তাই? আমাদের সাথে তাদের মিল রয়েছে কতখানি?

আমাদের দীর্ঘ পারিবারিক জীবনে বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, ভাই-বোনের পারস্পরিক সম্পর্ক, পাড়া-প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক, অভিভাবক, বন্ধৃ-বান্ধব-এর মাঝে ভালবাসা, মায়া-মমতা কী ফিকে হয়ে গেছে? কোথায় যাচ্ছো? কার পিছনে ছুটছো? তুমি না যুক্তিবাদি, বিজ্ঞানমনস্ক, সর্বোপরি মুসলিম? নবী কি শিখিয়ে জাননি ভালবাসার সংজ্ঞা, এর বাস্তব দৃষ্টান্ত, পরিসর ও মূল্যবান প্রাপ্তির কথা। 

তোমরা তো ভাল করেই জানো, হাঁসের পালক মুরগীর গায়ে লাগিয়ে দিলে সে কোনো জাতেই পড়ে না। আমরা কী পরিচয়হীন আজব কিছু হতে চাই ! নিশ্চয়ই না।

ও প্রিয় সন্তানেরা! 

আদর্শহীন কোনো জীবনচারণকে স্বাগত জানিও না।তোমাদের জীবনের প্রতিটি পল অনুপলের হিসাব প্রস্তুত রেখো। তোমাদের হাতের মোবাইল সেট দিয়ে কত নিখুঁতভাবেইনা তোমাদের প্রিয় মুহুর্তগুলোকে ধরে রাখা শিখেছো।এ জগতে স্রোষ্টা তাঁর মত করেই আমাদের সকল কিছুকেই রেকর্ড করে রাখছেন। ভুলে যেওনা।

মনে রেখো, অন্ধ অনুসারীরা সব সময় পিছনে থাকে। কারণ তার সামনে তো একজন থাকে। সে কখনও পথিকৃত হতে পারে না। একটু ভেবে দেখতো-- সুশোভিত এ আকাশ, সুজলা-সুফলা ও সর্বংসহা এ জমীন, আর সমুদ্রের বিশাল বুকে এত পানি, এত সম্পদ এমনিতেই আসেনি। এর একজনই মালিক আছেন।তাঁর জন্য কিছু কৃতজ্ঞতা জানাবে না? তা কি হয়? তোমরা এখনো হারিয়ে যাওনি, নি:শেষ হয়ে যাওনি, বরং সিদ্ধান্ত নেয়া উপযুক্ত সময় এখনই।

ও একান্ত প্রিয়জনেরা!

তোমরা আমাদের অস্তিত্ব।আমাদের সকল পরিচয়ের ধারক। আমরা তোমাদের কাছেই রেখে যাচ্ছি, এ প্রিয় দেশ, সমাজ, আর তিল তিল করে গড়ে তোলা বাস্তুভিটাটা।এমনকি আমাদের দুনিয়ার জীবনের শেষ ঠিকানা- কবরস্থানটাও। শুধু দেখভালের জন্য না।আমাদের কথা মাঝে মধ্যে মনে করার জন্যও।তবে, আজকের দিনের এই চেতনা, উপঢৌকন নিয়ে দয়া করে সেখানে যেয়ো না।

এখন যা করতে পারো:

সব হারাদের ভালবাসার দিনকে সফল করতে তোমরা যারা গিয়েছো, আর যেও না। জীবনের মূল্যবান সময় ও সামর্থকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত হও, আদর্শিক দেউলিয়া হইও না। বরং জীবন গড়ার পথে মনে রেখো---------
(ড.মীর মনজুর মাহমুদ)