আলোচিত নয়ন বন্ড বন্দুক যুদ্ধে নিহত

আলোচিত নয়ন বন্ড বন্দুক যুদ্ধে নিহত

ফাইল ছবি

দেশ জুড়ে আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে বড়গুনার পুরাকাঠা এলাকায় পুলিশের সাথে গোলাগুলির ঘটনা হয় বলে জানা যায়। এসময় নয়নবন্ড নিহত হন। এ ঘটনায় এএসপি সহ ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডকে গ্রেফতার করতে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়ির চর ইউনিয়নের পুরাকাটা নামক এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশের ওপর গুলি চালায় নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়।

গোলাগুলির এক পর্যায়ে নয়ন বন্ড বাহিনী পিছু হাঁটলে ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে নয়ন বন্ডের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, দুটি শর্টগানের গুলির খোসা এবং তিনটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন।

তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে তিনটি চাপাতি, একটি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। নয়ন বন্ডের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিহত নয়ন বন্ড বরগুনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কলেজ রোড এলাকার মৃত মো. আবুক্কর সিদ্দিকের ছেলে এবং রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি।

নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় নয়ন বন্ডকে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন সময় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এসব মামলার মধ্যে দুইটি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র মামলা এবং হত্যাচেষ্টাসহ পাঁচটি মারামারির মামলা রয়েছে।

 

এ দিকে সোমবার বিকেল ৩ টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, মামলার প্রতিনিয়ত অগ্রগতি হচ্ছে এবং অগ্রগতির হার সন্তোষজনক। আমরা আজকেও একজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এ নিয়ে এজাহারভুক্ত ৪ জন ও সন্দেহজনক ৫ জনসহ মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সর্বশেষ সোমবার যে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে তদন্তের স্বার্থে তার নাম বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন বরগুনার পুলিশ সুপার।

এছাড়া গ্রেফতারকৃত ৫ জন আসামিকে সোমবার বিকেল ৫টায় বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আসামিরা হলেন, সাগর, সাইমুন, অলি, নাজমুল তানভীর। এর মধ্যে অলি এ মামলার ১১ নং আসামি বাকী ৪ জন সাগর, সাইমুন, নাজমুল, তানভীর সন্দেহজনক আসামি। এ আসামিদের মধ্য থেকে এজাহারভুক্ত আসামি অলি ও সন্দেহজনক আসামি তানভীর আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, ৫ জন আসামিদের মধ্যে নাজমুল হাসানের ৩ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে পুনরায় ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়ায় আদালত তা মঞ্জুর করে। এছাড়া সাইমুন ও সাগরের ব্যাপারে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়ায় আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

 

এর আগে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নয়ন বন্ডের মা সাহিদা বেগম জানান, ঘটনার দিন সকাল ১১টায় নয়ন তাকে ফোন করে। ফোন রিসিভ করেই তিনি বলেন, ‘এ নয়ন তুই নাকি কারে কোপাইছো। আহারে কার মায়ের কোল খালি করছো।’ ওই সময় নয়ন বলে, ‘কোপাইছি ঠিক করছি, তুমি আমার জামা কাপড় দাও আর টাকা জোগার কর।’ এ কথা বলেই বাসার কাছাকাছি একটি দোকানের পেছনে আসে। সেখান থেকে একটি ছেলেকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। নয়নের মা ওই ছেলের কাছে একটি টি-শার্ট ও প্যান্ট পাঠিয়ে দেয়। পরে আবারো নয়ন তাকে টাকা পাঠাতে বলে। এবার নয়নের মা নিজে গিয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আসেন। এরপর নয়ন ও রিফাত টাকা নিয়ে কেজি স্কুল সড়কের এক বন্ধুর বাড়িতে যায়। সেখানে তারা তিনজন বন্ধুর সাথে কথা বলে। এ সময় নয়ন মোবাইল ভেঙে ফেলতে চাইলে একজন ফোনটি রেখে টাকা দিয়ে দেয়। এরপর নয়ন ও রিফাত তাদের আরেক ক্রোক হাওলাদার বাড়ির রিফাতের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে সঙ্গে দেখা করে। সেখান থেকে তারা আলাদা হয়ে যায়। নয়ন পুরাকাটা ফেরি পার হয়ে আমতলী গলাচিপা হয়ে পৌঁছে গেছে দশমিনায়। সেখানে বুধবার রাত কাটায় সে। এরপর নৌ ও সড়ক পথে ভেঙে ভেঙে চলে যায় উত্তরবঙ্গের জেলা শহর দিনাজপুর।

 

বৃহস্পতিবার রাত এবং শুক্রবার দিনের প্রথমভাগ পর্যন্ত চেষ্টা চালায় হিলি বর্ডারের চোরাপথ ধরে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু এরই মধ্যে সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি হওয়ায় পালাতে ব্যর্থ হয় সে। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ ছিল নয়ন বন্ডের। নিরাপত্তার স্বার্থে এরপর সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সে।

প্রসঙ্গত, বুধবার (২৬ জুন) বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যালিক্স কিন্ডারগার্টেনের সামনে দিনে দুপুরে স্ত্রীর আয়েশা আক্তারের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে দুর্বৃত্তরা। এই হামলার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী মিন্নিকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান রিফাত। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালান। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন তারা। রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নি দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।