করোনাভাইরাস ভীতিতে দুশ্চিন্তা-উদ্বেগ, মুক্তি মিলবে যেভাবে

করোনাভাইরাস ভীতিতে দুশ্চিন্তা-উদ্বেগ, মুক্তি মিলবে যেভাবে

ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের বিস্তার পৃথিবীকে এক অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচার হচ্ছে একে ঠেকানোর নানা চেষ্টা সত্বেও নানা দেশে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে, হাজারো লোক আক্রান্ত হচ্ছে, অনেকে মারা যাচ্ছে, এক একটি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা রোগীর চাপে ভেঙে পড়ছে।

এসব খবর দেখে, শুনে এবং পড়ে কোটি কোটি মানুষের মনে তৈরি হয়েছে তীব্র উদ্বেগ। এর ফলে তার এক গভীর প্রভাব পড়ছে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই দুশ্চিন্তা ও শুচিবায়ুর মতো মানসিক সমস্যা আছে। তাদের জন্য এ পরিস্থিতি আরো গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে।

সুতরাং প্রশ্ন হলো, কীভাবে এমন একটা পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা যায়?

সংবাদ মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নানা খবর দেখে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে পারেন, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু লোকের জন্য তা তাদের বিদ্যমান মানসিক সমস্যাকে আরো গুরুতর রূপ দিতে পারে।

সেকারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন এই করোনাভাইরাস সংকটের সময় মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করার ব্যাপারে পরামর্শ প্রকাশ করে, তখন তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন সবাই।

এ্যাংজাইটি ইউকে নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নিকি লিডবেটার বলছেন, দুশ্চিন্তার সাথে সম্পর্কিত বেশ কিছু মানসিক সমস্যার একটা বৈশিষ্ট্য হলো, অনিশ্চয়তা সহ্য করতে পারার অক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার ভয়।

এধরণের সমস্যা যাদের আছে, তারা যে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন তা সহজেই বোধগম্য।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক দাতব্য প্রতিষ্ঠান মাইন্ডের মুখপাত্র রোজী ওয়েদারলি বলছেন, ‘অজানা যেকোনো কিছুর ব্যাপারে দুর্ভাবনা এবং কিছু একটা ঘটার জন্য অপেক্ষা করতে থাকা এ দুটি হলো এই সমস্যার মূলে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এটাই একটা বিরাট আকার নিয়ে হাজির হয়েছে।’

মানসিক স্বাস্থ্যকে রক্ষায় যা করতে পারি:

১. খবর পড়া কমিয়ে দিন

ইংল্যান্ডের কেন্টে থাকেন দুই সন্তানের পিতা নিক। করোনাভাইরাস নিয়ে নানা রকম খবর পড়ে তার 'প্যানিক এ্যাটাক' হচ্ছে। অর্থাৎ তিনি ক্ষণে ক্ষণে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

নিক বলেন,  ‘এক এক সময় এমন হয় যে আমার মনে নানা রকম দুশ্চিন্তা আসতে থাকে, আমি কিছুতেই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, আমার মনে ভয়ঙ্কর সব পরিণতির চিত্র ভেসে উঠতে থাকে।’

তবে দীর্ঘ সময় ধরে সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট এবং সামাজিক মাধ্যম থেকে দূরে থাকাটা তার এ দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক জয়েছে বলে জানান নিক। তিনি এ ক্ষেত্রে দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সাহায্যও নিয়েছেন।

ফলে, যেসব খবর দেখলে বা পড়লে আপনি ভালো বোধ করেন না, তা দেখার সময় কমিয়ে দিন। হয়তো দিনের কোনো একটা নির্দিষ্ট সময় একবার খবর দেখে নিতে পারেন।

ইন্টারনেটে বহু ভুল তথ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই শুধু বিশ্বস্ত উৎস থেকে খবর জানবার চেষ্টা করুন।

২. সামাজিক মাধ্যম থেকে কিছুটা সময় বিচ্ছিন্ন থাকুন

ম্যানচেস্টারের বাসিন্দা এ্যালিসন, বয়স ২৪। স্বাস্থ্য নিয়ে দুর্ভাবনায় ভোগেন তিনি এবং সবসময় সবকিছু তার জানা থাকতে হবে এমন একটা তাড়না অনুভব করেন।

তিনি বলছিলেন মাসখানেক আগে করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে নানারকম হ্যাশট্যাগে ক্লিক করে এবং কিছু ভুয়াতত্ত্ব দেখে তিনি খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তার অসহায় লাগতে থাকে, তিনি কাঁদতে শুরু করেন।

এখন অবশ্য তিনি করোনাভাইরাস বিষয়ক কনটেন্ট সম্পর্কে খুব সতর্ক। তিনি চেষ্টা করছেন সামাজিক মাধ্যম এবং টিভি থেকে দূরে থাকতে, তার বদলে তিনি এখন অনেক বই পড়ছেন।

আপনিও এভাবেই টুইটার, হোয়টসএ্যাপ বা ফেসবুকে এ সম্পর্কিত নানা পোস্ট এড়িয়ে চলতে পারেন।

৩. হাত ধুতে হবে, কিন্তু বাড়াবাড়ি করবেন না

কোন কোন দেশে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর যারা শুচিবায়ুগ্রস্ত, তাদের ভীতি দূর করতে পরামর্শ চাওয়ার হার বেড়ে গেছে।

শুচিবায়ুর মেডিক্যাল নাম হচ্ছে ‘অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার’ বা ওসিডি। এতে আক্রান্ত অনেকে উদ্বেগে ভোগেন যে তাদের গায়ে নোংরা কিছু লেগে গেল কিনা, বার বার তা পরিষ্কার করার চেষ্টা করতে থাকেন।

করোনাভাইরাস ঠেকাতে কারণে বার বার হাত ধোয়ার পরামর্শে তাদের অনেকের সমস্যা হচ্ছে। কারো কারো হয়তো শুচিবায়ু সেরে গিয়েছিল, কিন্তু এ পরামর্শের কারণে তা নতুন করে দেখা দেবার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

এদের অনেকে বলছেন, ভাইরাস বিস্তারের কারণে তাদেরকে যদি ঘরে বসে থাকতে বলা হয়, তা হলে এ সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

৪. আইসোলেশনে যেতে হয়েছে? এ সময়টাকে কাজে লাগান

কেউ যদি দু'সপ্তাহের জন্য স্বেচ্ছা-আইসোলেশনে যান - চেষ্টা করুন একে একটা উপভোগ্য সময়ে পরিণত করতে।

নিয়মিত আপনার প্রিয় মানুষদের সাথে যোগাযোগ রাখুন । কাকে কখন ফোন করবেন তার সময় ঠিক করুন।

সময়টাকে কাজে লাগান। নানা রকম ফেলে-রাখা কাজ সেরে ফেলুন। অনেক দিন ধরে যে বইটা পড়বেন ভেবেছিলেন, কিন্তু পড়া হয়নি, তা পড়তে শুরু করুন।

সূত্র : বিবিসি