মানুষে মানুষে ছয় ফুট দূরত্ব না রাখলে ব্রিটেন লকডাউন

মানুষে মানুষে ছয় ফুট দূরত্ব না রাখলে ব্রিটেন লকডাউন

ফাইল ছবি

করোনা সংকটে ব্রিটিশ জনগণের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। দেশটিতে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। কিন্তু এখনও ঠিকমতো করোনা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না জনগণ।

এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জনগণ যদি বিশেষজ্ঞদের স্বাস্থ্য নির্দেশনা না মানে তাহলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে সরকার।

তিনি বলেন, ‘বাড়ির বাইরে বের হয়ে আপনার পাশেরজনকে বিপদে ফেলছেন আপনিই।’ মানুষে মানুষে ছয় ফুট দূরত্ব না রাখলে ইতালি-ফ্রান্সের মতো করে ব্রিটেনকেও লকডাউন করা হবে সতর্ক করেন তিনি। বলেন, সবাইকেই ঘরবন্দি করা হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কার্যকর হতে পারে বলেও জানান তিনি। মহামারী পরিস্থিতিতে দৈনিক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের অংশ হিসেবে রোববার এই হুশিয়ারি দেন বরিস।

মহামারী পরিস্থিতি অনেকটা ইতালির মতো হলেও ব্রিটেনে এখনও লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি। তবে সোমবার থেকে মহাসড়কগুলো সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সে সঙ্গে ম্যাকডোনাল্ড ও ন্যানডোর মতো হোটেল-রেস্তোরাঁ কোম্পানিগুলো নিজেদের সব খাবারের দোকান বন্ধ ঘোষণা করেছে। খবর রয়টার্সের।

ব্রিটেনে গত শুক্রবার সবগুলো শহরে হোটেল-রেস্তোরাঁ ও বারগুলো বন্ধ রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী বরিস। এছাড়া রোববার ‘জাতীয় মা দিবস’ সামনে রেখে সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশটিতে বেশকিছু স্বাস্থ্য নির্দেশনা দেন দেশটির বিশেষজ্ঞরা। এতে উন্মুক্ত স্থানে জনসমাগম না করতে বলা হয়। বলা হয়, মানুষে মানুষে দুই মিটার তথা অন্তত ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে।

কিন্তু এসব নির্দেশনায় কান দিচ্ছে না ব্রিটিশরা। তারা এখনও সচেতন নয়। ‘মা দিবসে’ রোববার রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া উপভোগ করার লোভ সামলাতে পারেনি অনেকেই। প্রিয়জনদের নিয়ে দলে দলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে তারা। পার্ক, শহরের উন্মুক্ত স্থান ও সমুদ্র সৈকতগুলোতে ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। ফুল কিনতে ভিড় দেখা যায় ফুলের দোকানগুলোতেও। এতে বোমের মতো করোনা সংক্রমণে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে সেলুন-পার্লারও বন্ধের দাবি জানান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের এমপি ডেভিড মরিস। বরিস জনসনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারী প্রতিরোধের চেষ্টা করছে পুরো জাতি।

এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেশের সেলুনগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’ যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘চুল কাটার সময় নাপিতরা হাতে কোনো ধরনের গ্লাভস পরে না। আর গ্লাভস পরে চুল কাটা সম্ভবও নয়।

এভাবে একজনের চুল কাটতে গিয়ে গড়ে হাজারবার স্পর্শ করতে হয়। এতে সংক্রমণের বড় ঝুঁকি তৈরি করছে তারা।’ ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি সত্ত্বেও এখনও পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা করেনি ব্রিটেন।

গাড়ি-ঘোড়াও চলছে আগের মতোই। সোমবার সকালেও লন্ডনে মেট্রোরেল চেপে অফিসে যেতে দেখা যায় বহু মানুষকে। বেশিরভাগ সময়ই ছিল ঠাসাঠাসি-গাদাগাদি। কর্মচারীদের কেউ কেউ বলছেন, বড় কর্তাদের কারণে অফিসে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী তারা। ট্রেনে চেপে অফিসে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন রেল কর্মচারীরাও। এভাবে অন্যের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলার কারণে এসব কর্মচারীকে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের এক এমপি। নিল কয়েল নামে ওই এমপি বলেন, ‘যারা অন্যের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে, এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মচারীদের বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এখন পর্যন্ত ব্রিটেনে ২৮১ জন মারা গেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৬০০ জন। ইতালিতে আক্রান্ত হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৭৮ জন। মারা গেছেন ৪ হাজার ৮২৫ জন এবং প্রতিদিনই ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৯৩ জন। এ পরিসংখ্যানের দিকে ইঙ্গিত করে বরিস বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে হু হু করে বাড়ছে এই ভাইরাসে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা। আর হয়তো দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের অবস্থাও ইতালির মতোই ভয়াবহ হবে।’

ঘরের বাইরে জনসমাগম বিষয়ে বরিস বলেন, ‘আপনার মনে হতে পারে, করোনা আপনাকে ক্ষতি করবে না। কিন্তু এমন বহু মানুষ আছে যারা আপনার কারণেই আক্রান্ত হতে পারে। অর্থাৎ আপনিই আপনার পাশের জনকে বিপদে ফেলছেন। ’

বরিস আরও বলেন, ‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ না করি এবং জাতীয়ভাবে কোনো পদক্ষেপ না নেই তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও ইতালির মতোই ভেঙে পড়বে। ইতালির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও আমাদের মতোই খুবই উন্নত ছিল।

কিন্তু জনগণের অসচেতনতার ফলে হঠাৎ করেই করোনার বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনার আকস্মিকতায় পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা টালমাটাল হয়ে যায়। এতো বেশি রোগী আসতে থাকে যে ডাক্তার-নার্সরা হতভম্ব হয়ে যান।’

এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ফ্রান্স, ইতালি ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো ব্রিটেনেও শিগগিরই কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে ইঙ্গিত দেন বরিস। তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটা কার্যকর কথা চিন্তা করছি আমরা।’ যুক্তরাজ্যে ইতিমধ্যেই বার, রেস্টুরেন্ট এবং থিয়েটারসহ সব জনসমাগমের স্থান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বেসরকারি খাতে চাকরিজীবীদের ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদের ছুটিতেও ৮০% বেতন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। লন্ডন এবং অন্যান্য শহরগুলো লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। রাস্তায় বসবাসকারী গৃহহীনদের হোটেলে নিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছে সরকার।