এফআর টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডের এক বছর, এপ্রিলেই চার্জশিট

এফআর টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডের এক বছর, এপ্রিলেই চার্জশিট

ছবিঃ সংগ্রহীত

দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে ২২তলা একটি ভবনে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভবনের কাচের দেয়াল বেয়ে ঝুলে ঝুলে নামার চেষ্টা করছে। হাত ফসকে পড়ে যাচ্ছে তাদের কেউ কেউ। চারদিকে গগনবিদারী চিৎকার। যেন সিনেমার কোনো দৃশ্য। বাস্তবে এটি ছিল রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য। যা ঘটেছিল গত বছরের ২৮ মার্চ।

বহুল আলোচিত সেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে শনিবার। ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনে পুড়ে ও লাফিয়ে পড়ে নিহত হয়েছিলেন ২৭ জন। আহত হন অর্ধশতাধিক। উদ্ধার কাজ চালাতে গিয়ে আহত হন ফায়ার সার্ভিসের ফায়ারম্যান সোহেল রানা। পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। দেশের বীর হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় সোহেল রানাকে।

এদিকে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কাজও রয়েছে শেষ পর্যায়ে। তদন্তে ৫টি অভিযোগের সত্যতাসহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবন মালিকদের চরম অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আগামী মাসেই মামলার চার্জশিট দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

২০১৯ সালের ২৮ মার্চ, ৩২ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, এফআর টাওয়ারের ৭ তলায় একটি অফিস থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন সাত তলা থেকে ১০তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিভিন্ন অফিসে কর্মরত প্রায় দুইশ মানুষ আটকা পড়েন। অনেকেই ভবনের ছাদে চলে যান। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচতে কেউ কেউ নিচে ঝাঁপ দেন। এই অগ্নিকাণ্ডে ২৭জন মারা যান। আহত হয় প্রায় অর্ধশত। নিহতদের পরিবারের কাউকেই আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিল্টন দত্ত বাদী হয়ে বনানী থানায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া এফআর টাওয়ার নির্মাণে জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের পক্ষ থেকে পৃথক দুইটি মামলা করা হয়।

বনানী থানার মামলায় এফআর টাওয়ারের জমির মালিক প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুক ও ভবনের কয়েকটি ফ্লোরের মালিক বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি তাসভীর উল ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করে কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

দুদকের মামলায় ভবন মালিক ফারুক, বিএনপি নেতা তাসভীর উল ইসলাম, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান কেএএম হারুন, ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ন গ্রুপের কর্ণধার লিয়াকত আলী খান মুকুলসহ ২৩ জনকে আসামি করা হয়।

জানা গেছে, এফআর টাওয়ারটি ২৩ তলা হলেও ভবনটির রাজউকের নকশায় ১৮ তলা পর্যন্ত অনুমোদন রয়েছে। ১৯ তলা থেকে ২৩ তলা পর্যন্ত ৫টি ফ্লোর তাসভীর উল ইসলাম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নির্মাণ করিয়ে নিজে মালিক হয়েছেন। জাল নকশা দিয়ে ভবনের ৫টি ফ্লোর অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অবহেলাজনিত বিষয়টির নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেছে। অবহেলার মধ্যে ছিল ওই ভবনে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না থাকা, ভবনের ভেতরের অফিসের ডিজাইন পরিবর্তন করা ইত্যাদি। মূলত ডিজাইন পরিবর্তন করে একটা বাণিজ্যিক ভবনের পুরো নকশাই পরিবর্তন করা হয় এফআর টাওয়ারের।