আত্মোপলব্ধি

আত্মোপলব্ধি

ফাইল ছবি

মুহাম্মদ আব্দুস সবুর

এ্যান্টি ট্যোবাকো মিডিয়া এ্যালায়েন্স (আত্মা) গত ২৯ মার্চ ২০২০-এ আগামী ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক পণ্যের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করেছে। সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা চারটে থেকে দুটিতে নামিয়ে এনে ৩৭ ও ৬৩ টাকার দুটি মূল্যস্তর একত্রে করে নি¤œস্তরে এনে মূলস্তর ৬৫ টাকা নির্র্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল থাকবে। বর্তমানে ৬৩ টাকার সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক রয়েছে ৬৫ শতাংশ। প্রস্তাবে সেটি কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে ৬৩ টাকার সিগারেটে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ মোট শুল্ক ৮০ শতাংশ অর্থাৎ শুল্ক প্রদানের পরিমাণ ৫০.৪০ টাকা। প্রস্তাবে সেটিকে ৬৫ টাকা মূল্য ধরে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১০ টাকা  সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধরলে শুল্কের পরিমাণ হয় ৬৫ শতাংশ ও ১০ টাকা ভ্যাট অর্থাৎ শুল্ক প্রদানের পরিমাণ ৫২.২৫ টাকা। তারমানে শুল্ক বৃদ্ধি হলো ১.৮৮ শতাংশ ও মূল্য বৃদ্ধি হলো ১.৬৩ শতাংশ। একইভাবে ৯৩ ও ১২৩ টাকার দুটি মূল্যস্তরকে একত্রে করে প্রিমিয়াম স্তরে এনে ১২৫ টাকা মূল্য, ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৯ টাকা সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপের প্রস্তাবের সাথে থাকছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। বর্তমানে ১২৩ টাকার সিগারেটে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক রয়েছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কম দেবার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে ১২৩ টাকার সিগারেটে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধরে ৮০ শতাংশ হিসাবে শুল্ক দেয় ৯৮.৪০ টাকা। কিন্তু প্রস্তাব করভ হচ্ছে ১২৫ টাকায় ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ১৯ টাকা সুনির্দিষ্ট শুল্কারোপ। অর্থাৎ শুল্ক দেওয়া হবে ১০০.২৫ টাকা। তারমানে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে ১.৬৩ শতাংশ আর শুল্ক বাড়বে ১.৮৮ শতাংশ। সিগারেটের এই নামমাত্র শুল্কবৃদ্ধি করে তারা প্রত্যাশা করছেন বিরাট রাজস্ব আয়ের যা দেশকে করোনা ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে।

পক্ষান্তরে ফিল্টারবিহিন বিড়ির মূল্য ৪০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৬.৮৫ টাকা সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। সাথে বহাল থাকবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। তারমানে শুল্ক প্রদানের পরিমাণ হবে ৩০.৮৫ টাকা। বর্তমানে ফিল্টারবিহিন বিড়ির মূল্য ১৪ টাকা সাথে রয়েছে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট। অর্থাৎ শুল্ক প্রদানের পরিমান ৬.৩০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রস্তাব অনুসারে মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ ১৮৬ শতাংশ আর শুল্কবৃদ্ধির পরিমাণ ৩৮৬ শতাংশ। একইভাবে ফিল্টারযুক্ত বিড়ির মূল্য ৩২ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ৫.৪৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ শুল্কের পরিমাণ হবে ২৪.৬৮ টাকা। বর্তমানে ফিল্টারযুক্ত বিড়ির দাম ১৭ টাকা সাথে ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট। অর্থাৎ শুল্কের পরিমাণ ৮.৫০ টাকা। প্রস্তাব অনুযায়ী মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ ৮৮ শতাংশ আর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির পরিমাণ ১৯০ শতাংশ।

সংগত কারনেই প্রশ্ন করা যায় আত্মার কোন উপলব্ধিতে নি¤œস্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে যেখানে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হচ্ছে ১.৬৩ শতাংশ ও শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব ১.৮৮ শতাংশ সেখানে বিড়ির নি¤œস্তরের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হচ্ছে ১৮৬ শতাংশ ও শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব ৩৮৬ শতাংশ। একইভাবে প্রিমিয়াম সিগারেটের ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব ১.৬৩ শতাংশ ও শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব ১.৮৮ শতাংশ। পক্ষান্তরে একই ক্ষেত্রে বিড়ির ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব ৮৮ শতাংশ ও শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব ১৯০ শতাংশ। বিশ্লেষণ থেকে সহজেই বোঝা যায় আত্মা কাদের স্বার্থ রক্ষার তদবীরে নিয়োজিত।

এই কারণে তামাক বিরোধী দৃশ্যত বহু কার্যক্রম সত্বেও সিগারেটের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। ২০১৭ সালের বৈশি^ক প্রাপ্ত বয়স্কদের তামাকের সমীক্ষায় বাংলাদেশে পাওয়া গেছে ১ কোটি ৫০ লক্ষ সিগারেট ব্যবহারকারীর বিপরীতে ৫৩ লক্ষ বিড়ি ব্যবহারকারী। বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানীর নানাবিধ কু-কোশলের কাছে দেশীয় শিল্প বিড়ি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কফিনে শেষ পেরেক গাথার আয়োজনের জন্য আত্মা নিশ্চতভাবেই পুরষ্কৃত হবার দাবী করতে পারে।

 

অথচ মার্চ মাসটি আমাদের অনেক গর্বের বহু ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার মাস। স্বাধীনতার চেতনাই ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই। অথচ স্বাধীনতার এত বছর পরে এসেও দেশীয় শিল্প বিড়িকে লড়তে হচ্ছে একই গোত্রের বহুজাতিক কোম্পানীর বিরুদ্ধে বৈষম্যের শিকার হয়ে। স্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে তামাক বিরোধীতার আড়ালে সুকৌশলে বহুজাতিক সিগারেটকে আনুকুল্য দিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে দেশীয় শিল্প বিড়িকে। কোন যুক্তিতে সিগারেটকে আনুকূল্য দেখানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। যেখানে বহুজাতিক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তোষণের ইতিহাস আমাদের জানা। নব্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানীর তোষণের ফলাফল কি হবে তা সবারই ভেবে দেখা দরকার।