করোনা পরিস্থিতিতে হাঁটু ব্যথায় করণীয়

করোনা পরিস্থিতিতে হাঁটু ব্যথায় করণীয়

মেহেরুন নেসা

করোণা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘরবন্দি অবস্থায় থাকতে হচ্ছে প্রায় সকলকে। আমরা সবাই করোনা নিয়ে খুব চিন্তিত,সংকিত। কিন্তু এই সময় অন্যান্য রোগ কম হচ্ছে তা কিন্তু নয়। দেশের বয়স্কদের একটা বড় অংশ বিভিন্ন ধরনের বাত ও ব্যথায় ভুগেন। লকডাউনের এই সময় তাদের যাতে বাত ও ব্যথা জনিত কষ্ট না বাড়ে, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
বিভিন্ন  ধরনের ব্যথার মধ্যে হাঁটু ব্যথা অন্যতম। শারীরিক অক্ষমতার ৪র্থ অন্যতম কারন হিসেবে হাঁটু ব্যথাকে বিবেচনা করা হয়। প্রতি ৪ জনের একজন মানুষ হাঁটু ব্যথায় ভুগেন। হাঁটু ব্যথার অন্যতম প্রধান কারন অস্টিওআর্থাইটিস বা হাড়ক্ষয় বাত। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের বেশি হলে এই হাড়ক্ষয়  বাত বেশি হয়। বিভিন্ন হরমোনজনিত কারনে মহিলাদের এই হাড়ক্ষয়  বাত বেশি হয়। বিগত গবেষণায় দেখা যায় প্রায় ১৮-২০% মহিলা ও ১০% পুরুষ অস্টিওআর্থাইটিস এর জন্য হাঁটু ব্যথায় ভুগেন। এছাড়াও বিভিন্ন আঘাতজনিত কারনে, শরীরে অতিরিক্ত ওজন, অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও অন্যান্য রোগের কারনেও হাঁটু ব্যথা হয়।
হাটু ব্যথা নিরাময়ে ফিজিওথেরাপি একটি কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি। একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে তার পরামর্শ মেনে চললে ও কিছুদিন নিয়মিত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেয়ার মাধ্যমে হাঁটু ব্যথা কমিয়ে হাঁটুকে আবার পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
করোনার এই সময়ে বাসায় কি করনীয়ঃ

  • পরিচিত ও অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের সাথে  ফোনে আলোচনা করে পরামর্শ নিন।
  • ব্যথা যদি তীব্র হয় তবে ৩-৪দিনের জন্য হাঁটুকে পূর্ণ বিশ্রাম দিন।
  • যেসব কারনে ব্যথা বাড়ে(যেমনঃ সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করা, হাঁটু ভাঁজ করা, নিচে বসা, লো কমডে বসা, হাঁটা, অনেকক্ষণ  দাড়িয়ে থাকা ইত্যাদি) সেগুলো  এড়িয়ে চলুন। আর যেভাবে হাঁটু রাখলে ব্যথা কম লাগে, সেভাবে রাখার চেষ্টা করুন।
  • প্রয়োজনে কিছুদিনের জন্য চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করুন।
  • ব্যথার স্থানে নরম সুতি তোয়ালে ভিজিয়ে ২০মিনিট গরম সেঁক ও ১০মিনিট ঠাণ্ডা পানির সেঁক এভাবে দিনে ৩-৪বার দিতে পারেন। অথবা প্রয়োজনে শুধু গরম বা ঠাণ্ডা পানির সেঁক দিতে পারেন।
  • হাঁটা বা চলাফেরার সময় নি-ক্যাপ, নি-ব্রেস বা প্রয়োজনে স্টিকও ব্যবহার করতে পারেন।
  • পুষ্টিকর ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারের অভ্যাস করুন এবং ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন।
  • যদি হাড় ক্ষয় থাকে তবে কিছু ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট, সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করতে পারেন।
  • প্রতিদিন বাসার বারান্দায় বা ছাঁদে বা উঠানে সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সময়ের যেকোনো সময় সূর্যের সরাসরি আলোর সংস্পর্শে ১৫-২০ মিনিট থাকার চেষ্টা করুন।
  • ব্যথার তীব্রতা যখন ৫০% কমে যাবে তখন বিভিন্ন ধরনের স্বাভাবিক রেঞ্জ অব মোশন এক্সারসাইজ, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, বিভিন্ন অ্যারোবিক এক্সারসাইজ, স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ, বলকারক ব্যায়াম  ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে করতে পারেন।

কিছু ব্যায়ামঃ

  • একটি নরম তোয়ালে ভাঁজ করে হাঁটুর নিচে রেখে হাঁটু দিয়ে তোয়ালের উপর চাপ দিয়ে ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং ছেড়ে দিন। এভাবে ১০-১৫ বার দৈনিক ৩-৪ বেলা করতে পারেন।
  • একটি চেয়ারে বসে পায়ের গোড়ালিতে ২-৩ কেজি ওজনের বালির ব্যাগ বেঁধে পা সোজা করে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং আবার ভাঁজ করুন।এটি ১০-১৫ বার করে দৈনিক ৩-৪ বেলা করতে পারেন।
  • একইভাবে উপুর হয়ে শুয়ে বালির ব্যাগ পায়ে বেঁধে হাঁটু ভাঁজ করতে হবে। ১০ সেকেন্ড ধরে রেখে আবার ছেড়ে দিতে হবে। এটিও ১০-১৫ বার দৈনিক ৩-৪ বেলা করতে পারেন।
  • একটি চেয়ারের সামনে বা বাসায় জানালার গ্রিলের সামনে দাড়িয়ে তাতে ধরে আস্তে আস্তে হাঁটু ভাঁজ করে বসার চেষ্টা করুন(ব্যথা অনুভব করার আগে পর্যন্ত), আবার সোজা হয়ে দাড়িয়ে যান। এভাবে ১৫-২০ বার দৈনিক ৩-৪ বার করতে পারেন।
  • বিছানায় সোজা হয়ে বসে একটা তোয়ালে দিয়ে পায়ের পাতা সামনের দিকে টানুন, ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং ছেড়ে দিন। এটি ১০-১৫ বার করে দৈনিক ৩-৪ বেলা করে পারেন।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন, সুস্থ থাকুন।

মেহেরুন-নেসা
ফিজিওথেরাপি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ