আমার অনূভবে রমাদান- ৯

আমার অনূভবে রমাদান- ৯

ছবিঃ সংগ্রহীত

“আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল, শুধাইল না কেউ”— হৃদয়েরও একটা ‘ভাষা’ আছে, আছে শোনার একটি ‘কান’। এ ভাষাকে রপ্ত করতে না শিখলে মানবিকতার মুকুট পরা যায় না, স্বাদও মেলে না জীবনের। সৃষ্টির সব সুন্দরের চেয়ে সুন্দরতম করে সে মহান মুসাব্বির (আকৃতিদানকারী) আমাকে ও আপনাকে সৃষ্টি করেছেন তা দেখবেন কী করে? একটি উদাহরণ দিই। ভিখারীর প্রতি রহমদিল তখনিই হতে পারবেন, যখন ভাবতে শিখবেন- পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া কোনো প্রাণী খাবার জমা করতে পারে না আবার না খেয়েও থাকে না। তাহলে ঐ নিরন্ন মানুষটি এলো কোত্থেকে? নিশ্চিতভাবেই সে ‘গাফেল’ নতুবা আমি-আপনি ‘জালিম’।  

মনে রাখবেন, কেবল পেটের দায়ে আমার দরজায় ভিখারী আসেনি; বরং আমার ক্ষমাশীল ও অমুখাপেক্ষি রবই তাকে পাঠিয়েছেন, ছেঁড়া-ময়লা ঝুলি আর ফেকাসে চেহারার আড়ালে আপনার জন্য দয়া ও ক্ষমার ডালাটাও সে বহন করছে। সে নিত্যদিন আমার দরজায় আসে, পথ আগলে বিরক্ত করে। অথচ সে তো মহান রবের দয়া ও ক্ষমার পসরা নিয়েই এসেছিল! শুধু এতুটুকু, ‍ওর হৃদয়ের ভাষাকে বুঝতে শিখুন, সামর্থের মধ্যে সুন্দর কথা/ সাহায্যের হাতটা একটু বাড়িয়ে দিন। ওর পেতে রাখা হাতটির সাথে নিজের ব্যর্থতার হাতটিও কল্পনা করতে শিখুন। দয়া নয়, দায়বদ্ধতায় পাশে দাঁড়ান। দেখেবেন, কেমন করে আপনাতেই বুকের ভেতরটায় দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে- যা ওর কান্নাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে। যখন দাতা-গ্রহিতার আনন্দ একাকার হবে। কোনোভাবেই আলাদা করা যাবে না, ঠিক তখনই আসমানের বাতিগুলো ম্লান হয়ে বলে উঠবে, ও রব! ঐ তো তোমার সুন্দরতম সৃষ্টি তার সৌন্দর্য ও সুষমায় দেদীপ্যমান হয়ে উঠেছে। হায়! একটি বারের জন্যও এ কথা ভাবার সুযোগ মেলেনি জীবনে! যা এখন ভাবছি, অখন্ড এক অবসরে। (চলবে)

লেখক- ড. মীর মনজুর মাহমুদ