আমার অনূভবে রমাদান- ১০

আমার অনূভবে রমাদান- ১০

ছবিঃ সংগ্রহীত

“স্বপ্নে শুনি নিশি রাতে, যেন কাবার মিনার থেকে, কাঁদছে বেলাল ঘুমন্ত সব মুসলিমেরে ডেকে ডেকে”- মিনারের আহবান, ও যে বেলালের (রা) কান্না-তা আমি আজো বুঝিনি। কখনো গাফলতি, কখনো ব্যস্ততা আবার কখনো ঘুমের ঘোরে সে ডাক আমায় একটুও রেখাপাত করেনি। আমার উপলব্ধিতে আজো আসেনি- এ আহবানের পেছনে প্রায়শই নবীজি সা.-এর অভিপ্রায় থাকত। তিনি বলতেন, ও বেলাল আমাকে প্রশান্ত করো ! প্রশান্ত করো ও বেলাল ! আর তখনই মিনার থেকে ভেসে আসতো বেলালী এ সূর। সাহাবীগণ অধীর আগ্রহে মসজিদের পানে ছুটতেন- মহান রবের কাছে সাজদাবনত হতেন আর তাঁদের প্রাণপ্রিয় রাহবার মানবতার মহানবন্ধুর পবিত্র মুখখানি আর সাহচর্য পেতেন। আজ নবীজি নেই। তাঁর প্রিয় সাথীরাও নেই।

তবে, আজো সে আহবান আছে। মসজিদ আছে, আছে মিনারও। দেড় হাজার বছর ধরে চলছে। কিন্তু মুসলিমদের ঘুম কী ভেঙ্গেছে? আমাদের সমাজে, না দুনিয়ার কোথাও! কারণ কী? মিনারের আহবানের মাঝে বেলালের রা. হৃদয়ভাঙ্গা কান্না নেই বলে? সালাতে ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ র- এর মত ইমাম নেই বলে? নাকি, আবু আইউব আল আনসারী রা-এর মত দাঈ নেই বলে? যিনি শাহাদাতের তামান্না নিয়ে সুদূর ইস্তাম্বুলে বসফরাসের তীরে শুয়ে আছেন। আমি যতবারই তাঁর কবরের কাছে গেছি, ততবারই কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে একটি প্রশ্ন করেছি- ও আল্লাহর নবীর প্রিয় সাথী! তুমি এখানে কেন? তুমিই তো সেদিন নিজের বসত বাড়ীটিও ছেড়ে দিয়েছিলে প্রিয় নবীজির জন্য? একটু সাহচর্য পেতে, ঐ পবিত্র চেহারার সান্নিধ্যে থাকতে কিনা করেছিলে, তুমি ও তোমার বন্ধুরা! সে পরম বন্ধুর বিয়োগ ব্যাথা অথবা দায়ভারই কি তোমায় টেনে এনেছে?  সে প্রিয় সাথীকে রেখে কেন এতদূরে এলে? আমি ভালো করেই জানি- এর উত্তর এ জীবনে কোনোদিন পাবো না। তাওহীদের কবি নজরুলের ভাষায়- “স্ত্রী- পুত্ররে আল্লারে সঁপি, জেহাদে যে নির্ভীক, হেসে কোরবানী দিত প্রাণ হায়! আজ তারা মাগে ভিখ”।

অবাক হয়ে পৃথিবী আজ এমন এক জাতিকে ঘুমন্ত দেখছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, যারা এসেছিলো মানবতার ঘুম ভাঙ্গাতে, সেবক হয়ে নেতৃত্ব দিতে। প্রাণপ্রাচুর্যের জীবনবিধান ইসলাম যেন আজ বড় দায়গ্রস্থ হয়ে গেছে আমাদের কাছে। নাকি, আমরা ! এ সবই কী আজকের দুর্গতির মূল কারণ? সে কথাগুলোই হৃদয়কে আজ খুব করে নাড়া দিচ্ছে। অবরুদ্ধ দুনিয়া। দেশ, জাতি, সে সাথে আমিও। ও মানবতা! আমার অধঃপতন তোমায় সেবাবঞ্চিত করছে, তোমার মুক্তিবার্তা আমার হাতে। সীমাহীন অজ্ঞতা, উদাসীনতা আর লক্ষ্যহীন জীবন আমাকে ও তোমাকে সমানভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমায় ক্ষমা করো। হায়! যদি মিনারের আহবানকেও অনুভব করতে পারতাম!! (চলবে)

লেখক- ড. মীর মনজুর মাহমুদ