আমার অনূভবে রমাদান- ১১

আমার অনূভবে রমাদান- ১১

ছবিঃ সংগ্রহীত

সালাত এক বিস্ময়কর ইবাদাত। সম্প্রতি আমার স্মৃতি, আমার অনুভূতি আর যৎসামান্য জানা যেন আমায় বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দিচ্ছে। সবুজেঘেরা এক নিভৃত গ্রামে শতবর্ষী মসজিদের দেয়ালঘেষা এক ছোট্ট কুটিয়ে আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা। আল্লাহর ঘরের একান্ত প্রতিবেশি হওয়ার সুবাদে আমার বালকবেলার স্মৃতির ক্যানভাসটি মসজিদের জলছাপেই যেন তৈরি হয়েছে। সে সময়ের স্মৃতিকাতরতায় বাবার দেয়া সালাতের একটি পরিচয় মনে পড়ে গেল- সালাত মানে একাকী কথা বলা। সে কথা কার সাথে, কী জন্য- কিছুই বুঝিনি তখন। তবে আমার কবরবাসী বাবা বলতেন, তোমার সবকথা আল্লাহ শোনেন। একদিন তিনি সব কথাগুলোর জবাবও দিবেন।

আমি সরল বিশ্বাসে সেই সময় থেকেই আজ অবদি একাকী সালাতে কথা বলে আসছি - দিনে, রাতে, একত্রে কিংবা নিভৃতে। কালোগেলাফে মোড়া ঘরটিকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম, কেবল সেদিন সালাতে বেশি কথা বলা হয়নি সশব্দে- চেষ্টা করেছিলাম বলতে হৃদয়ের ভাষায়। সালাতে চোখ বন্ধ করা নিষেধ জেনেও অনেকটা শব্দহীন সালাত পড়েছিলাম মসজিদে নববীর ক‘দিনের সালাতে- চোখ দু‘টো সেদিনগুলোতে খোলা থাকতে এতো অসহযোগিতা করেছিল, যা আর কখনো করেনি। আমি জানি না, আমার বলা কথাগুলো আমার মহান রব কিভাবে নিয়েছেন! তবে আমার কবরবাসী বাবার দেয়া সালাতের সংজ্ঞাটির যাচাই করে নেয়ার সাধকে সযত্নে পুষে রেখেছি- যদি মহান রবের সাক্ষাত কখনো মেলে!    

সালাতের বিস্ময়কর সৌন্দর্য ও প্রাণময়তা-আমায় বড় চিন্তিত করে। কথা ছিল, তাকবীরে তাহরীমা আমায় দুনিয়ার সবকিছু থেকে বিমুক্ত করে হৃদয়-মন দিয়ে রবের সাথে কথা বলাবে; সে ছবিগুলো কাঁধের ফিরিশতারা এক রকম তুলবে আর দয়াময়-মায়াময় অন্তরযামী ধারণ করবেন অন্যভাবে। যেখানে বাঙময় হবে আমার মুখের তাসবীহ ও বুকের ভাষা- যা প্রাণের সকল আকুতিযোগে অনন্য এক রূপ লাভ করেছিল ধূলিমলিন পৃথিবীর কোনো এক কোণে, নিভৃতে, নীরবে-যেখানে আমার মালিক ব্যতীত দ্বিতীয় কেউ ছিল না।

হায়! আমার সালাত যদি এমন হতো! সেখানে কী এমন এক আবহ তৈরি হয় যেন, চরম দুর্যোগের রাতে অপেক্ষারতা কোনো এক জননীকে ফোনের একপ্রান্ত থেকে ‘মা’ বলে একটি মাত্র ডাকের পর লাইনটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, তখন যে অস্থিরতার জন্ম নেয় উভয়ের মাঝে প্রয়োজনীয় কথা না হওয়া পর্যন্ত- তার চেয়ে কতগুণ বেশি হবে আমার রবের সাথে- যিনি আমার মত অপরাধীকে ক্ষমার ভাষা শিখিয়ে অপেক্ষা করছেন মাফের জন্য, প্রতি রাতের গভীরে একান্তে একটু ডাক শোনার জন্য! বেপথু আমাকে দয়ার চাদরে মোড়াতে কত আয়োজনই না তিনি করেছেন! হায়! আপনার চেয়ে আপন করে কবে আমি সালাতে এককভাবে কথা বলাটা শুরু করতে পারবো? ইয়া রহমান! ইয়া রাহীম! ইয়া ওয়াদূদ! ইয়া যুল জালাল ওয়াল ইকরাম!! (চলবে..)

লেখক- ড. মীর মনজুর মাহমুদ