আমার অনূভবে রমাদান- ১২

আমার অনূভবে রমাদান- ১২

ছবিঃ সংগ্রহীত

আমার সালাতে দাঁড়ানোটা কেমন হলো? আমায় দেখে কি মনে হচ্ছে যে, আমি এক নগন্য বান্দাহ সালাত নামক ইবাদাতের এক মহাসুযোগে বিশ্বজাহানের নিরঙ্কুশ মালিকের দরবারে দাওয়াতপ্রাপ্ত হয়েছি? আমাকে কত দরদী ভাষাতেইনা ডাকা হয়েছে তার ঘরে ! দিনে পাঁচটি ডাকের ক‘বার গেছি? কী এমন ব্যস্ততা ছিল? আর যখন গেলাম তখন কতটা খুশি হতে পেরেছি? নাকি বোঝা হালকা করতে, দায়মুক্ত হতে গিয়েছিলাম? আমার পরিধেয় পোশাক, ভেতরে বাইরের পবিত্রতা, আরশের অধিপতির সামনে উপস্থিত হওয়ার আনন্দ আর গৌরবের জোয়ার  অন্তরে-বাইরে সত্যিই কী বইছিল? একটু খাবার বা পানীয় চেহারার ক্ষুত-পিপাসার চিহ্ন মুছে দিলেও সালাত যেন আমার হৃদয়কে প্রশান্ত করে না! চেহারায় কোনো তৃপ্তির ছাপ দেয় না। তাহলে কী হলো? আমি কী সালাতের ক্ষুধা-পিপাসা নিয়ে আল্লাহর ঘরে যাইনি! না কি, এ দু‘য়ের অনুপস্থিতি থাকে বলেই, সালাতের স্বাদ পাই না! আজ এ ভাবনা আমায় প্রচন্ডভাবে পেয়ে বসেছে।

দুই সালাতের মাঝের জমা হওয়া আবেগ-অনুভূতি, কষ্ট-বেদনা, পাওয়া-না পাওয়ার তালিকাটা কী সাথে করে দাঁড়িয়েছিলাম মহান রবের সামনে? অবুঝ শিশু যেমন খেলার মাঝে বার বার ছুটে গিয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে কত শত নালিশ করে আর ফিরে এসে খেলায় মগ্ন হয়; তেমনি করে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে আমারও ছুটে যাওয়ার কথা ছিল, কথা ছিল জীবনের সকল ব্যথা-বেদনা, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার তালিকাটি সেখানেই কেঁদে কেঁদে নালিশ করা বা চাওয়া। অতঃপর সালাত শেষে প্রশান্ত হৃদয়ে কর্মস্থল বা গৃহকোণে ফেরা। এমন প্রাণবন্ত সালাতই আমার কাম্য ছিল ! তা কি হচ্ছে?

না কি, এক মহাগাফেলের মত আলস্যভরা দেহমন নিয়ে এমনভাবে দাঁড়িয়েছি- যেখানে না আছে আনন্দ আর না আছে কোনো প্রাপ্তির প্রত্যাশা। কাঁধের বোঝা নামাতেই যেন পাঁচটি বার ছুটে যাচ্ছি। প্রস্তুতিহীন নিষ্প্রাণ এ সালাত আমায় এজন্যই কী জীবনভর বঞ্চিত করলো? হাদীসে কুদুসীতে কত স্পষ্ট করেইনা আমাকে বুঝিয়ে দেয়া হলো- সূরা ফাতিহায় মহান রবের সাথে আমার কথপোকথন গুলোকে ! কথা ছিল- গোটা সালাতেই দেহমনে এক পরিপূর্ণ বান্দার অনুভূতি নিয়ে হাজির হওয়া। বিশেষ করে রুকুতে কিংবা সাজদায় মহান আরশের মালিকের জন্য দেহমন একান্তভাবে নিবিষ্ট থাকবে। কথা ছিল- সাজদারত দেহটি মাটিতে লুটিয়ে থেকেও হৃদয়টি আরশে আজীমের মালিকের কাছে ধর্ণা দিবে- পরম ভালোবাসা আর সর্বান্তকরণে নিবেদিত হয়ে। সেটিই ছিল আমার প্রাত্যহিক মি‘রাজ।  কতই না ভালো হতো! যদি, আমার মাঝে সালাতের ক্ষুধা সৃষ্টি হতো, মিনারের আহবান আর সালাতের ভাষাকে বুঝতে পারতাম ! (চলবে)

লেখক- ড. মীর মনজুর মাহমুদ