আমার অনূভবে রমাদান-১৩ (লায়লাতুল ক্বদর ও ই‘তিকাফ)

আমার অনূভবে রমাদান-১৩ (লায়লাতুল ক্বদর ও ই‘তিকাফ)

ছবিঃ সংগ্রহীত

লায়লাতুল ক্বদর- কুরআন নাযিলের মহিমান্বিত রাত। এ রাতের অনুসন্ধানে রমাদানের শেষ দশক পুরোটা/কিয়দাংশ নিজেকে একমাত্র আল্লাহর জন্য তারই ঘরে অবস্থান করা/আটকে রাখা হলো ই‘তিকাফ। কুরআনে বলা ক্বদর রাত আর ই‘তিকাফের কল্যাণলাভে মুসলিম মাত্রেই প্রতীক্ষা করেন। আমাদের মহান রব, যিনি দয়াময়-মায়াময়, গাফ্ফার (ক্ষমাকারী) ও সাত্তার ( গোপনকারী)- এটি তাঁর দেয়া এক মহাক্ষণ বা বিশেষ দয়ার নাম। ছেলেবেলা থেকেই রমাদান এলেই এ রাতের ব্যাপারে আগ্রহী হই। সুযোগমত ই‘তিকাফে থাকার ইচ্ছা করি- যেখানে যাপিত জীবনের ব্যস্ততা নামক একটি প্রসঙ্গ পাহাড়ের মত দেয়াল তৈরি করে প্রতিনিয়ত। এ বারের প্রসঙ্গটি একেবারে ভিন্ন সকলের জন্যই।

দুনিয়াজোড়া মহামারির বছরে মুসলিম জীবনের এ মর্যাদাবান ইবাদাত নিয়ে ভাবছি। বিশেষ অবস্থার কারণে এবারের সিদ্ধান্তটি নিতে হবে শরয়ী বিশারদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণের নির্দেশনা মেনে। এ পরিস্থিতিতে ই‘তিকাফ মসজিদে গিয়ে করা না গেলেও নিয়মিত তাহাজ্জুদ, কুরআনের সাথে নিবিড়তর সম্পর্ক তৈরি আর সালাতের মাধ্যমে ক্বদরের অনুসন্ধানে তো কোনো বাধা নেই। প্রশ্ন জাগে, ক্বদর কেন ক্বদরময় হলো? হ্যাঁ, প্রথমতঃ আল্লাহ তা‘আলার একান্ত অভিপ্রায়, দ্বিতীয়তঃ কুরআন নাযিলের মর্যাদা। তাহলে, যে কুরআনের কারণে একটি রাত এমন মর্যাদা পেল; সে কুরআন জীবনে ধারণ করলে সারাটা বছর তথা গোটা জীবনইতো ক্বদরময় হতে পারতো!  বাস্তবে আমরা ক্বদর রাতের মর্যাদা খুঁজি কিন্তু জীবনকে ক্বদরময় করার অঙ্গীকার করতে পারি কি?

 

বিচিত্র রূপিনী মানব ‘মন’- যেটি সবচেয়ে দূরন্ত ও চঞ্চল এক সত্ত্বা। এর বাহক আমাদের জীবন। তাই জীবনের পরিবর্তনের ব্যাপারে রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা। তারপরও জীবন সদা পরিবর্তনশীল। কখনও ‘বেলা যে চলে গেলো জলকে চল’- এমনি এক অনুভূতিও কাউকে বদলিয়ে দেয়।

রমাদান নামক ইবাদাতের বসন্তে থেকেও কী আমরা জীবন পরিবর্তনের আশা করব না? ভেবে দেখুন তো, এক মুঠো বীজ একখন্ড জমিকে সোনালী ফসলে ভরে দেয়, এক পশলা বৃষ্টি তৃষিত জমিনের বুককে শীতল ও সজীব করে তুলে, ভুলের জবাবে নবীজির একটি মুচকি হাঁসি আনাস রা.এর অবশিষ্ট জীবনকে কীভাবেইনা শাসন ও সতর্ক করেছিল, ঠিক তেমনিভাবে ক্বদর রাতের মহাক্ষণ (হোক না সেটা একটি রাত) কেন আমাদের জীবনকে ঐশী আলোয় ভরিয়ে দেয় না? জীবনের সদার্থক পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘকালব্যাপী বড় কিছু কি খুবই জরুরি?

আসুন না! এ রমাদানে ঐ মহাপালকের কাছে একটি সতত সুন্দর ও পরিশীলিত সৎ জীবনকে ভিক্ষা চেয়ে নিই- যিনি আমার ও আপনারই জন্য বিশাল আকাশকে আলোকময় করেছেন, বুনোপথে হাজারো রঙ ও সৌরভভরা ফুল-ফলের ডালি সাজিয়েছেন, মরূদ্যান গড়েছেন মরুচারীকে একটু ছাঁয়া আর বুকফাটা তৃষ্ঞা মেটাতে, সুনীল আকাশের সামিয়ানাকে আদিগন্তে নয়নাভিরাম করতে কোথাও সবুজ গালিচা, কোথাও সুউচ্চ পাহাড়, কোথাও ধূ ধু বালুকা, কোথাও বরফে ঢাকা শ্বেত-শুভ্র চাদর বিছিয়ে রেখেছেন আর রহস্যঘেরা জলসীমার দুর্ভেদ্য প্রাচীরও গড়েছেন। দেখা না দেখা সকল নিয়ামতের তিনিই স্রষ্টা, মহান রব্বুল আলামীন, তাঁরই কাছে একটি ক্বদরময় জীবনের প্রত্যাশা করছি- এই রমাদানে, লায়লাতুল ক্বদরের এই দশকে!!! (চলবে)

ড. মীর মনজুর মাহমুদ