করোনা কবিতা

করোনা কবিতা

ফাইল ছবি

প্রশান্ত চৌধুরী  

আমি মুখ্যমন্ত্রীকে দাম্ভিক বলি, প্রধানমন্ত্রীকে সাম্প্রদায়িক। স্বাস্থ্যসচীবকে ব্যর্থ বলি, অর্থমন্ত্রীকে স্তাবক। ডাক্তারকে খুনি বলি,পুলিশকে ঘাতক।
রেশনডিলারকে চোর বলি, সরকারি কর্মচারীকে অলস, শিক্ষককে নিকম্মার ঢেঁকি বলি, সেলিব্রেটিকে কিপ্টে, রাজনীতিবিদদের কে দুর্নীতিবাজ।

আর আমি নিজে......?

আমি কী!!!!!!!!
আমি হলাম সবজান্তা পাবলিক।
আমি কখনও হিন্দু তো কখনও মুসলমান।
কখনোও মন্দিরে নারীদের প্রবেশ বাধা দেই তো কখনও করোনার দাওয়াই কোরানে খুঁজি।

আমি কার্ফুতে দিনের বেলায় আকাশপানে
জীবাণুনাশক স্প্রে খুঁজি, আমিই ঐক্যের মোমবাতি না জ্বালিয়ে কুশপুত্তলিকা পোড়াই, আবার আমিই দেশের একটিও ভালো কাজের সাথে না থেকেও কানাডার/ আমেরিকার প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হই।

আমি কথায় কথায় নেতামন্ত্রীকে শাপশাপান্ত দেই, প্রয়োজনে সেই নেতামন্ত্রীর পেছন ও পা চেটে দেই।

আমি সরকারি অনুদান সাদরে গ্রহন করি, সান্ধ্য চায়ে সেই সরকারের অতিব্যায়ের নিন্দা করি। আমি সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করি, আমি সেই সরকারের উপকারী নির্দেশিকা ভঙ্গ করে রাস্তায় আড্ডা দেই।

আমি ডাক্তার পেটাই, থুতু ছেটাই, অর্ধনগ্ন হয়ে নার্সদের খিস্তাই। আমি সুস্থ হলে, আবার বিপদে পড়লে ডাক্তারদের জন্য থালা তালি বাজাই।

পুলিশকে ঘুষখোর বলি, পাথর ছুঁড়ি, জামায় লিপস্টিক লাগাই। আমিই সিগন্যাল ভেঙে ঘুষ দেই, লকডাউনে সেই পুলিশকে সিংহম উপাধি দেই।

আমি পরিযায়ী শ্রমিকের পদযাত্রায় কাতর হই আবার আমি সেই শ্রমিকের মজুরি দিতেই উচ্চবাচ্য দশটা কথা শোনাই।

আমি বিপর্যয়ে সেলিব্রটির অনুদানের হিসেব রাখি। আমিই আবার বাজারে গরীব সবজিওয়ালার সাথে এক টাকার জন্যে তর্ক করি।

আমি রাস্তার মোড়ে মাতালের মাতলামির ভিডিও করি। সেই আমিই আবার লকডাউনে হন্যে হয়ে মদের দোকান খুঁজি।

আমিই ধর্ষন করে মুখে রুমাল চাপাই আবার আমিই সেই নিরীহ বৃদ্ধের চা খাওয়ার ভিডিওতে খিল্লি করি।

হ্যাঁ উপরের সবগুলোই আমি। আমিই শিক্ষিত, আমিই অশিক্ষিত। আমিই গোঁড়া, আমিই বিজ্ঞানমনস্ক। আমিই প্রতিবাদী, আমিই মিথ্যেবাদী। আমিই হিন্দু, আমিই মুসলমান। আমি পাবলিক, আমিই দায়িত্ববান একজন নাগরিক।

আমার মান আছে তো হূঁশ নেই, হূঁশ আছে তো মান নেই।

আমি জাত খুঁজি.-" পাত খুঁজি.-" লিঙ্গ খুঁজি.-" বর্ণ খুঁজি.-" অর্থ খুঁজি.-" সুযোগ পেলে অন্যের দোষ খুঁজি..."

শুধু মনুষ্যত্বই খুঁজিনা। 

সংগৃহীত