অপরিহার্য ওষুধের নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

অপরিহার্য ওষুধের নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

ছবি সংগৃহিত।

 

 

দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য ওষুধের নতুন তালিকা প্রণয়ন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এটি এই সংস্থার প্রণীত ২১তম তালিকা। সমসাময়িক রোগব্যাধী ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় আমলে নিয়ে এই তালিকা করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবার শুধু অপরিহার্য ওষুধের তালিকাই প্রণয়ন করেনি, পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিকের তালিকাও প্রকাশ করেছে। তালিকায় ক্যান্সারসহ বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জগুলো গুরুত্ব দিয়ে তার কার্যকর ও সময়োপযোগী সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত অপরিহার্য ওষুধের তালিকা অনুসরণ করা হয়। এ থেকে প্রমাণিত হয়, এসব ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ৯ জুলাই প্রকাশিত এ তালিকায় বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তার কার্যকর সমাধান এবং রোগীদের সর্বোত্তম প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

নতুন দুটি তালিকা মরণব্যাধী ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরনের থেরাপি, মাল্টি-ড্রাগ প্রতিরোধী সংক্রমণের চিকিৎসায় তিনটি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক এবং বিভিন্ন ধরনের ১২টি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের মহাপরিচালক ড. টেড্রোস অ্যাডহোম গিব্রেইয়াসাস বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় ১৫০টিরও বেশি দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রণীত অতি প্রয়োজনীয় বা অপরিহার্য ওষুধের তালিকা ব্যবহার করে। যা থেকে প্রমাণিত হয়, ওষুধগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর। ক্যান্সারের নতুন এবং সর্বাধিক উন্নত কিছু থেরাপি এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় এটিই প্রমাণিত হয় যে, জীবন সংরক্ষণকারী ওষুধের প্রাপ্যতা বা অধিকার শুধু আর্থিক সামর্থ্য আছে তাদেরই নয়, বরং এটা সর্বজনীন।’

সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ক্যান্সর চিকিৎসার বেশকিছু ওষুধ বাজারে বিক্রি হলেও যার দাম মাত্রাতিরিক্ত। অথচ এসব ওষুধ ক্যান্সার রোগীদের জন্য এক প্রকার অপরিহার্য। তাই পাঁচটি ক্যান্সার থেরাপি নতুন ওষুধের তালিকায় যোগ করা হয়েছে।

যা ডায়াবেটিস, মেলানোমা, ফুসফুসের, প্রোস্টেট, একাধিক মেলোমা এবং লিউকেমিয়া ক্যান্সারের চিকিৎসায় সর্বোত্তম হিসেবে বিবেচিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, দুটি উন্নত ইমিউনো থেরাপি (নিভোলুম্যাব এবং পেমব্রোলিজুমাব) মেলানোমায় বেঁচে থাকার হার ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। নিকট অতীতে ক্যান্সার চিকিৎসায় যা প্রায় অসম্ভব ছিল।

অ্যান্টিবায়োটিক : অপরিহার্য ওষুধ প্রণয়ন কমিটি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শকে আরও শক্তিশালী করে, যা অ্যান্টিবায়োটিকগুলো সর্বাধিক সাধারণ ও গুরুতর সংক্রমণের জন্য ব্যবহার, চিকিৎসায় ভালো ফল অর্জন এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের ঝুঁকি হ্রাস করে। কমিটি সুপারিশ করেছে যে, মাল্টি-ড্রাগ প্রতিরোধী সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য তিনটি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজনীয় হিসাবে যুক্ত হবে।

অ্যান্টিঅঙ্কল্যান্টস স্ট্রোক প্রতিরোধে, অ্যাট্রিয়েল ফাইব্রিলেশন এবং গভীর শিরা থ্রম্বোসিসের চিকিৎসার জন্য ওয়ারফারিনের বিকল্প। এগুলো স্বল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য সুবিধাজনক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, ইমার্জেন্সি মেডিকেল লিস্ট (ইএমএল) কমিটি তাদের কাছে সুপারিশকৃত সব ওষুধ তালিকাভুক্ত করে না। যেমন, অন্তর্ভুক্তির জন্য একাধিক সেক্লরোসিস থাকলেও সেগুলো তালিকাভুক্ত করা হয়নি।

কমিটি প্রয়োজনীয় ডায়গোনস্টিকগুলোর প্রথম তালিকা প্রকাশ করে ২০১৮ সালে। সেখানে ছিল এইচআইভি, ম্যালেরিয়া, টিপিককুলোসিস এবং হেপাটাইটিস। তবে এ বছরের তালিকাটিতে আরও কিছু সংক্রামক রোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ডায়াগনস্টিক তালিকাতে ক্যান্সারের ১২টি পরীক্ষা যুক্ত করা হয়েছে।

যেখানে কোলোরাটাল, লিভার, সার্ভিকাল, প্রোস্টেট, স্তন এবং জীবাণু কোষ ক্যান্সার, যেমন লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমাসের মতো কঠিন টিউমারের পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উপযুক্ত ক্যান্সার নির্ণয়ে শারীরবৃত্তীয় প্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষার যোগ করা হয়েছে।

তালিকাটি কম এবং মাঝারি আয়ের দেশগুলোতে যেমন কলেরা, লেশম্যানিয়াসিস, স্কিস্টোসোমিয়াসিস, ডেঙ্গু, জিকা ইত্যাদি অবহেলিত রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।