করোনায় ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে ব্রিদিং বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম

করোনায় ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে ব্রিদিং বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম

মেহেরুন নেসা

কোভিড -১৯ মূলত শ্বসনতন্ত্রে সংক্রমিত একটি রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে রোগীর কাশি, শ্বাসকষ্ট এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। যাদের ফুসফুস দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা খুবই বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমনের প্রায় ৩৪% রোগীর ফুসফুসে অতিরিক্ত কফ জমা হয়, ১৯% রোগীর শ্বাসকষ্ট হয় এবং ৫% রোগীর ভেন্টিলেশন  বা লাইফ সাপোর্টের প্রয়োজন হয়।
ফুসফুসের কারযকারিতা বৃদ্ধিতে অন্যান্য অ্যারোবিক ব্যায়ামের পাশপাশি ব্রিদিং বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা সুস্থ, এখনো করোনায় আক্রান্ত হননি বা করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেসনে আছেন বা হাসপাতালে ভর্তি সবার জন্যই ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ব্রিদিং বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া ব্রিদিং এক্সারসাইজের মাধ্যমে এন্ডোরফিন নামক এক ধরণের হরমোন নিঃসৃত হয় যা বিষন্নতা ও দুশ্চিন্তা কমিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় খুবই কার্যকরী। এছাড়া শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান (প্রায় ৭০%) বের করতে, শরীরে রক্ত চলাচলের প্রবাহ ত্বরান্বিত করতে, হজম শক্তি বৃদ্ধিতে এবং ভালো ঘুম হওয়ার জন্য ব্রিদিং এক্সারসাইজ খুবই উপকারি।
ব্রিদিং এক্সারসাইজ করার পূর্বে অবশ্যই ঘাড়, কাঁধ ও শ্বসনতন্ত্রের  মাংসপেশিকে স্ট্রেচিং এবং সংশ্লিষ্ট জয়েন্টগুলোর মোবিলাইজেশন করে নিতে হবে। ব্রিদিং এক্সারসাইজ দিনে ৩-৪ বেলা ৫-১০ মিনিট করে করতে পারলে ভালো। তবে শুরুর দিকে ২-৩ মিনিট করে করতে পারেন এবং আস্তে আস্তে বাড়াবেন। বিভিন্ন ধরনের ব্রিদিং এক্সারসাইজ আছে। বেশ কার্যকরী ও উপকারি কিছু ব্রিদিং এক্সারসাইজ গুলো হলোঃ

(ক) ডায়ফ্রাগমেটিক বা বেলিব্রিদিং এক্সারসাইজঃ

বিছানায় সোজা হয়ে দুই হাঁটু ভাজ করে নিন। প্রয়োজনে মাথা ও হাঁটুর নিচে বালিশ রাখবেন। এবার এক হাত পেটের উপর ও এক হাত বুকের উপর রাখুন। এবার নাক দিয়ে বাতাস নিন (পেট পূর্ণ ফুলা পর্যন্ত ), ৫ সেকেন্ড বাতাস ধরে রাখুন এবং মুখ দিয়ে শিস দেওয়ার মতো ( মুখের আকৃতি O এর মতো ) করে জোড়ে বাতাস ছেড়ে দিন।
(খ) পারসড লিপ  ব্রিদিং এক্সারসাইজঃ

যাদের শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা আছে তাদের জন্য এটি বেশ উপকারি ব্যায়াম। এটি অর্ধশায়িত বা উপুর হয়ে করলে ভালো কারণ এর ফলে অধিক পরিমাণে অক্সিজেন ফুসফুসে প্রবেশ করে, এতে শ্বাসকষ্ট কম হয় এবং ফুসফুসের ভিতর জমে থাকা কফ পাতলা হয়। এটি করার জন্য নাক দিয়ে বাতাস নিন, কিছু সময় (৩-৫) সেকেন্ড বাতাস ধরে রাখুন এবং মুখ দিয়ে শিস দেয়ার মতো করে যতক্ষণ বাতাস নিয়েছেন তার দ্বিগুণ সময় ধরে বাতাস ছাড়ুন। অর্থাৎ ১:২, এর মানে যদি ২ সেকেন্ড ধরে বাতাস নেন তবে ছেড়ে দেওয়ার সময় ৪ সেকেন্ড সময় ধরে ছাড়ুন।

(গ) ইকোয়াল ব্রিদিংঃ

এটি শুয়ে, বসে যে কোন অবস্থায় করা যায়। নাক দিয়ে ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত বাতাস নিন। কিছু সময় বাতাস ধরে রাখুন এবং নাক দিয়েই ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত বাতাস ছাড়ুন।

(ঘ) ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজঃ

দুই হাত বুকের উপর রেখে কনুই পেছনের দিকে করে বুক প্রসারিত করুন।এবার নাক দিয়ে গভীর শ্বাস নিন, কিছুক্ষন শ্বাস ধরে রাখুন এবং নাক দিয়ে জোড়ে শ্বাস ছাড়ুন।

(ঙ) এক্টিভ সাইকেল অব ব্রিদিং টেকনিকঃ

এটি অর্ধশায়িত অবস্থায় করলে বেশি ভালো। নাক দিয়ে জোড়ে শ্বাস নিন, ৩ সেকেন্ড ধরে রাখুন, মুখ দিয়ে জোড়ে বাতাস ছাড়ুন। এভাবে ৩ বার করুন। এবার ১০ সেকেন্ড স্বাভাবিক শ্বাস নিন। এবার আগের মত ৩ বার নাক দিয়ে গভীর শ্বাস নিন, মুখ দিয়ে ছাড়ুন। তারপর হাফিং দিয়ে জোড়ে কাশি দিন। কাশি দেওয়ার সময় কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন। এভাবে ২ থেকে ৩ টি চক্র পূর্ণ করুন। ফুসফুসের ভিতরে জমে থাকা কফ বের করার জন্য এটি সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।

আপনারা আপনাদের সুবিধামত ও উপযোগী যে কোনো ধরনের ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে পারেন ।

যেহেতু শিশুরা ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে চাইবে না, তাই তাদেরকে বেলুন কিনে দিয়ে, বেলুন ফুলানোতে উৎসাহিত করুন। এটিও ভালো ব্রিদিং এক্সারসাইজ।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন, সুস্থ থাকুন।

মেহেরুন নেসা
ফিজিওথেরাপি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ