আবারো রাজপথে শিক্ষকরা

আবারো রাজপথে শিক্ষকরা

রাজপথে নেমেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।

এমপিওভুক্তির দাবিতে ফের রাজপথে নেমেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রায় বাধা দিয়েছে পুলিশ। বাধার মুখে তারা প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান শুরু করেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় এই পদযাত্রা শুরু করেন নন শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সদস্যরা। প্রেসক্লাব থেকে কদম ফোয়ারা মোড় পর্যন্ত আসতেই পুলিশের বাধার মুখে পড়েন সংগঠনের প্রায় ৭০০০ শিক্ষক-কর্মচারী। 

পদযাত্রার বিষয়ে জানতে চাইলে ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘নন-এমপিও শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমরা আবেদন করে আসছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে আশ্বস্ত করেছেন আমাদের। এরপরও দেড় বছর অতিক্রম হয়েছে। উচ্চ মহলে বিভিন্ন সময় আমরা যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা একটা কথাই বলেছেন, আমাদের কিছু করার নেই।

তাই আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের লক্ষ্যে একটা পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছিলাম এক মাস আগে, যেটি বুধবার হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কারণে পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধে বুধবার আমরা সেটি স্থগিত কারি এবং আজকের এই কর্মসূচি দেই।

তিনি জানান, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে পদযাত্রা করি। তখন পুলিশ আমাদের আটকে দেয়। আমরা সহিংস কোনও কিছু করবো না। তাই আমাদের যেখানে আটকে দেওয়া হয়েছে, সেখানেই বসে পড়েছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চাই, উনাকে আমরা আমাদের কথা জানাতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাবো না। যত সময় পর্যন্ত আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এ রাস্তায় অবস্থান করবো।’

 

পদযাত্রায় কেন বাধা দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার পেট্রল (টহল) ইন্সপেক্টর বাশার জানান, ‘মিছিল করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা কোনও অবস্থাতেই সম্ভব না। তাই আমরা তাদেরকে বাধা দিয়েছি। তাদের বলা হয়েছিল যদি কোনও স্মারকলিপি দিলে আমরা সেই বিষয়টি অ্যারেঞ্জ করতে পারি। কিন্তু তাদের বক্তব্য একটাই, তারা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের প্রতিশ্রুতি চান। তাদের বক্তব্য, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে না দেখা করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তারা প্রেসক্লাবে অবস্থান করবেন। তাদের অবস্থানে বর্তমান আমরা কোনও বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু তাদের আমরা অবজার্ভ করছি।’

শিক্ষকদের অবস্থানের ফলে পল্টন থেকে কদম ফোয়ারা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এবিষয়ে তিনি বলেন, ‘যান চলাচলের জন্য আমরা বিকল্প একটি লিংক রোড ওপেন করে দিয়েছি। তাদের অনুরোধ করছি তারা যেন অন্তত একটি লেন ছেড়ে দেন।’

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা জানান, এমপিওভুক্তি না করা পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবেন না।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিনয় ভূষণ রায় বলেন, ‘২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব এসে আমাদেরকে জানান, প্রধানমন্ত্রী দাবি মেনে নিয়েছেন। অনশন ভেঙে আমাদের ঘরে ফিরে যেতে বলেছেন। এরপর জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীসহ কয়েকজন এসে আমাদের বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন তারা।’

বিনয় ভূষণ আরো বলেন, ‘এক বছর পার হলেও আজও আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি। এ কারণেই আমরা আবারো সমবেত হয়েছি। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের মানবেতর জীবনযাপন কথা তুলে ধরব। তিনি আমাদের যে নির্দেশনা দেবেন, তাই মেনে নেওয়া হবে।’

এ জন্যে সারা দেশের ৫ হাজার ২৪২টি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী প্রেস ক্লাবের সামনে উপস্থিত হয়েছেন বলে জানান বিনয় ভূষণ রায়।