করোনার শিক্ষা

করোনার শিক্ষা

ফাইল ছবি

তীব্র শ্বাসকষ্টের কারণে ছোট ভাইকে ICU-তে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বড় ভাইয়ের শ্বাসকষ্ট চরমে উঠল! বাঁচার জন্য আকুলি-বিকুলি করছেন তিনি, কিন্তু হাসপাতালের দশটি ICU-ভেন্টিলেশনের সবগুলোতেই রোগী ভর্তি; সবারই শ্বাসকষ্ট- সবাই একটু অক্সিজেন চান; একটু স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে চান। কার মুখ থেকে ভেন্টিলেশন খুলে কার মুখে দেবেন? সবারই যে বাঁচার আকুতি! সবারই যে আকুলি বিকুলি!

বড় ভাইয়ের কষ্ট বাড়ছে। এক-একটি শ্বাস যেন হাজার মন ওজনের এক একটি পাথর। রিং বসানো হার্ট এতো ভার সইতে পারে?!? এক পর্যায়ে ছোট ভাইয়ের ভেন্টিলেশন খুলে দেওয়া হলো বড় ভাইকে। হয়ত ক্ষণিকের স্বস্তি পেলেন, কিন্তু যে ধকল গেছে- তা আর কাটিয়ে উঠতে পারলেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফুসফুসের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরিচালক মোরশেদুল আলম। সময়মতো ICU-ভেন্টিলেশন সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে হয়ত তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হতো।

বড় ভাই মারা যাওয়ার পর ছোট ভাইকে আবার ICU-তে নেওয়া হয়েছে। তড়িঘড়ি করে যন্ত্রটি খুলে নিয়ে আবার দেওয়া হয়েছে ছোট ভাইয়ের মুখে। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।

এটি কোনো নাটকের স্ক্রিপ্ট নয়, দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প পরিবার এস. আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের বড় এবং ছোট দুই ভাইয়ের ঘটনা। গ্রুপের পাঁচ ভাইসহ মোট ছয়জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। এর মধ্যে দুই ভাইয়ের অবস্থা ছিল সঙ্কটাপন্ন।

দেশের শীর্ষ ধনীদের মধ্যে অন্যতম এস আলম গ্রুপ। তাঁদের রয়েছে আটটি ব্যাংক, তিনটি ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং দু’টি বীমা কোম্পানিসহ মোট ৩৪টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। পুরো আর্থিক-খাতে রাজত্ব বজায় রাখায় এতো বেশি তরল অর্থ দেশের অন্য কোনো গ্রুপের কাছে নেই। শুধু বাংলাদেশে নয়, সিঙ্গাপুর ও কানাডার ধনীদের তালিকায়ও নাম রয়েছে গ্রুপটির।

এস আলম গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের মোট বাজেটের চেয়ে বেশি। তাঁদের মতো দু’-চারজন উদ্যোক্তা চাইলে দেশের পুরো স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাকে পাল্টে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। কিন্তু কেউ কি জানতেন- এমন দিন আসবে, যখন কাড়ি কাড়ি টাকা ঢাললেও সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ডের দরজা খুলবে না! মহামারীর বিশ্বায়ন হবে আর জাতিরাষ্ট্রগুলো নিজ নিজ বাউন্ডারির মধ্যে খিল এঁটে বসে থাকবে; কোনো কারেন্সি দিয়েই এই দরজা আর খোলা যাবে না! করোনা-উত্তর বাংলাদেশের উদ্যোক্তাগণ কি এই দুঃখজনক ঘটনাটি থেকে শিক্ষাগ্রহণ করবেন?

চট্টগ্রামে ICU ভেন্টিলেশন সুবিধা পর্যাপ্ত নয়। এস আলম গ্রুপ চাইলে চোখের পলকে কয়েক হাজার ICU-ভেন্টিলেশন বেড কিনতে পারে। অথচ সময়মতো একটি মাত্র বেডের অভাবে ভয়াবহ কষ্ট নিয়ে তাঁদের পরিবারের এক অভিভাবককে হারালেন! হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক, পাওয়ার প্ল্যান্ট, গাড়ি, বাড়ি সহায় সম্পদ সবই যেন অর্থহীন হয়ে গেল! এস আলম গ্রুপের পরিচালকদ্বয়ের বেলায় যা ঘটল, একই ঘটনা যে কারো ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে। ভয়াল সেই ক্ষণটি কেবলই যেন নীরবে অনুসরণ করছে…!

শুধু চট্টগ্রামের শিল্পপতি নয়, করোনা ভাইরাস আমাদের সবারই বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ছে। যখন তখন ছোবল মারতে পারে। বিপদ থেকে বাঁচতে আরো আগেই অনেক কিছু করার দরকার ছিল, হয়তো করার সময় পাননি। কিন্তু আর সময় নেই। এবার অন্তত কিছু করুন। নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য, নিজের শহরের জন্য সর্বোপরি মানুষের কল্যাণের জন্য এগিয়ে আসুন।

করোনা ভাইরাস কিন্তু দ্রুত বিদায় নেওয়ার জন্য আসেনি! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছেন- এই মহামারী সহসা যাচ্ছে না, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই আমাদেরকে চলতে হবে। করোনা ভাইরাসকে ভয় নয়, জয় করতে শিখুন।

যে শত্রুকে খালি চোখে দেখা যায় না, তার সঙ্গে লড়াই করতে পারে কেবল শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম)। আর প্রাকৃতিক নিয়মে সেটি বাড়িয়ে নিতে চাইলে মধু, কলোজিরা, টাটকা শাক-সবজি, তাজা ফলমূল, গরম মশল্লা, আদা, কাঁচা হলুদ, রসুন খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ছাড়তে হবে ধুমপান, চিনি, আলগা তেল আর কোমল পানীয়। রাতে ঘুমাতে হবে সাত থেকে আট ঘণ্টা। গায়ে রোদ লাগাতে হবে আর শরীরকে সেই পরিমাণ খাটাতে/পরিশ্রম করাতে হবে যেন ঘাম ঝরে। এর বাইরে ধর্মীয় আচার পুরোপুরি মেনে চলুন; সব সময় ওজু’র ওপরে থাকুন। কারো প্রতি রাগ, অভিমান, ক্ষোভ থাকলে নিঃশর্ত ক্ষমা করে দিন আর নিজে ভুল করে থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিন।

সংগৃহীত