করোনায় ঈদ
ছবিঃ সংগৃহীত
সৌজন্য: তানভীর রহমান
বাসার ছাদে ঈদ পুণর্মিলনী দাওয়াত পেয়েছি।লকডাউনের দুই মাস বাসায় ঘাপটি মেরে ছিলাম, দেখা হয়নি কারো সাথে, ঈদ উপলক্ষে অন্যফ্লাটের লোকজনের সাথে দেখা হবে অনেক দিনপর।
ঈদের দিন বিকেলে বউ বললো, আমি ছাদে যাচ্ছি তুমি তাড়াতাড়ি আসো।তাড়াহুড়া করে ছাদে গিয়ে দেখি চারিদিকে অপরিচিত লোকজন।আশ্চর্য লাগলো, নতুন ভাড়াটে আসছে নাকি সব ফ্ল্যাটে?
একটা চেয়ারে শ্বেতশুভ্র চুল আর লম্বা সাদা দাড়ির এক মুরব্বি বসে ছিলেন।চেহারায় শেষ বয়সের রবীন্দ্রনাথের মতো প্রশান্তি ।আমি গিয়ে সালাম দিলাম,
-- আংকেল স্লামুআলাইকুম, নতুন ভাড়া আসছেন বুঝি?
এই সাধারণ প্রশ্নেই আংকেল গরম চোখে তাকালেন।
-- মেহেদী ভাই, ইয়ার্কি মাঝে মাঝে একটু বেশি কইরে ফেলান।
আমি থতমত খেয়ে গেলাম। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখি আরেএ-তো ছয়তলার শাহীন ভাই।কিন্তু বয়স হঠৎ করে বিশ বছর বাড়লো কেমনে?ব্যাটা তাইলে এতোদিন কলপ দিয়ে ইয়াং ভাব নিয়ে ঘুরতো? এখনতো দেখি শরীরের কোন লোমই কালো নাই।একটু খোঁচা দিয়ে বললাম,
স্যরি শাহীন ভাই আমার চাচার ঠিক এই রকম সাদা দাড়ি ছিল, তাই ভুল হয়ে গেছে।
শাহীন ভাই গম্ভীর চোখে তাকাচ্ছে।ব্যাটা রাগ করছে মনে হয়।উনি ফ্লাট এসোসিয়েশনের সভাপতি, আমার সার্ভিস চার্জ আবার বাড়িয়ে না দেয়।পরিস্থিতি খারাপ দেখে ওখান থেকে কেটে পড়লাম।
আমার বউরে খুঁজতে গিয়ে দেখি একটা কাজের বুয়া আসছে, বেশ চকচকে একটা শাড়ি পরা, নিশ্চয়ই ঈদে কোন ভাবি উপহার দিয়েছে তাকে।
ডেকে বললাম, এই খালা আমরা তিনতলায় থাকি, আমার স্ত্রীকে একটু ডেকে দাওতো।
কাজের বুয়া হটাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়লো, কড়া চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
আমাকে দেখলে কি কাজের বুয়ার মতো লাগে?
গলাশুনে চমকে গেলাম।ভালো করে তাকিয়ে দেখি, পাঁচ তলার ভাবি। মুখে মেকআপ নাই।সেই ফর্সা সুন্দর মুখের বদলে একবান্টু আদিবাসী রমনীর মুখ বসানো এখন।উনা কে দেখে কেবল বেউনি সেই ভাবি যাকে দেখলে আমি ভাবতাম, হায় খোদা আমার বউরে এইরকম সুন্দর করে দাও।ভাগ্য ভালো দোয়া কবুল হয় নাই, সত্যি, খোদা যা জানে আমরা তা জানিনা। লকডাউন কত লক যে খুলে দিচ্ছে।তবে উনার মেকআপ ম্যানের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেল আমার, বান্টু রমণীকে বলিউড নায়িকা করার আশ্চর্য ক্ষমতা তার।
ছাদের এদিক ওদিক বউকে খুজছি, সাত তলার ভাবি এগিয়ে এলো।চমৎকার হাসি খুশি মহিলা, এই লকডাউনেও চেহারা বদলায় নি। আমাকে দেখে হটাৎ গম্ভীর হয়ে গেল।হাজার টাকার তিনটা নোট আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-- এই ভাইযা ওতো মিস্টি আর দই নিয়ে আসো দৌড় দিয়ে।
আমি একটু ভ্যাবা চেকা খেয়ে গেলাম। আমি একটু ইতস্তত করছি দেখে ভাবী ধমক দিলো
কিব্যাপার ভ্যাবলার মতো দাড়ায় আছো কেন? সামনের মোড়েই দোকান, যাও, একদৌড়ে যাবা একদৌড়ে আসবা।
আমি যন্ত্রের মতো নামলাম, তিন তলায় নেমে ভাবলাম বৌ আসছে কিনা দেখি।নিজের ঘরে ঢুকে দম নিচ্ছি এই সময় বউ বাইরে থেকে ঢুকলো।
কই, তুমি রেডি হওনাই এখনো? তাড়াতাড়ি কর।লুংগীখুলে পায়জামা পাঞ্জাবি পর।ছাদে চল তাড়াতাড়ি, ছাদে চোর আসছে।
--ক্বি?চোর?
--হু।আরে সাত তলার ভাবির তিন হাজার টাকা চুরি করেছে।
আমি ঢোক গিললাম, কেমনে?
-- আর বইলোনা, ভাবীর কাছ থেকে মিস্টি দই কেনার কথা বলে টাকা নিয়ে ভাগছে।
--ভাবী টাকা দিলো কেন?
বউ মাথা নাড়লো, ভাবিরে বলছে সে নাকি নতুন দারোয়ান। ভাবি বললো দেখাও যায় নাকি সেই রকম, ময়লা লুংগী আর ছেড়া গেঞ্জি পরা, উষ্ক খুষ্ক চুল দাড়ি চিমসে চেহারার চোর।এইদিকে নতুন দারোয়ান হাজির, সেগাট্টা গোট্টা লোক।
আমি বলতে চাইলাম পুরাই মিথ্যা, আমি মোটেই নিজেরে দারোয়ান বলি নাই, মহিলা জোর করে টাকা দিছে।
কিন্ত ঘরের আয়নায় নিজের চেহারা দেখে চুপকরে গেলাম ।হায়রে লকডাউন, চেহারা আর কন্ট্রোলে নাই, লুংগী পরার অভ্যাসও।
সংগৃহীত