লকডাউনে হুমকির মুখে পর্যটন শিল্প

লকডাউনে হুমকির মুখে পর্যটন শিল্প

ছবিঃ সাইফুল ইসলাম

হঠাৎ করেই দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা পৃথিবীটার গতিপথ থামিয়ে দিয়েছে এক ভয়ংকর প্রাণঘাতি ভাইরাস যার নাম করোনা ভাইরাস। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০  লক্ষ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮ হাজার ছাড়িয়েছে।

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভাইরাসটির কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউন থাকায় থমকে গেছে বিশ্বের অর্থনীতির চাকা। বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পর্যটন শিল্প। বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম একটি সম্ভামনাময় শিল্প হলো পর্যটন শিল্প। পৃথিবীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্পকে একটি অন্যতম খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশ সমূহ বিশেষ করে ইতালি,ফ্রান্স,যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আরো অনেক দেশের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্প ব্যপক প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে লকডাউন থাকায় এসব উন্নত দেশগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। যার ফলে মারাত্নক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সারা বিশ্বের পর্যটন খাত।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পর্যটন শিল্প একটি অপার সম্ভাবনাময় শিল্প। পর্যটন শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা লকডাউনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ৪০ লক্ষ পেশাজীবি এখন বেকার ঘুরছে। পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত বিভিন্ন উপখাত যেমন হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর,পরিবহন, বেসমারিক বিমান এসব উপখাত এবং এসব খাতে কর্মসংস্থানে জড়িত লোকজন ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বর্তমানে লকডাউনের কারণে প্রায় সমস্ত হোটেল,মোটেল,রেস্তোরাঁ, গণপরিবহন সব কিছু বন্ধ রয়েছে যার ফলে এসব খাত থেকে কোনো ধরনের আয় হচ্ছেনা। ফলশ্রুতিতে ভয়ানক আর্থিক সংকটে পড়তে হচ্ছে। যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে ঋনাত্মক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের জিডিপি হ্রাসের আশংকা ও করছেন দেশের অর্থনীতিবীদরা। লকডাউনের ফলে পর্যটন খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছু বন্ধ থাকায় হুমকির মুখে পর্যটন শিল্প।

বাংলাদেশে কক্সবাজার হচ্ছে একটি বড়সড় হোটেল,মোটেল জোন। সেখানে বড় ছোট মিলিয়ে রয়েছে ৪ শতাধিকেরও বেশী হোটেল,মোটেল,রিসোর্ট, গেস্ট হাউস রিসোর্ট ও কটেজ। যার মধ্যে অভিজাত হোটেল রয়েছে ৩০ টির ও বেশী। বর্তমানে এসব হোটেলে যেখানে পর্যটকদের অভাবে তিল ধারণের ঠাঁই থাকতো না সেখানে এসব হোটেলগুলো এখন বলতে গেলে ফাঁকা পড়ে আছে পর্যটকদের অভাবে। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কক্সবাজারে আসা কমিয়ে দিয়েছে পর্যটকরা। অনেকেই বাতিল করেছেন হোটেলের অগ্রিম বুকিং। যার ফলে কক্সবাজারের আশে-পাশের ব্যবসায়ীরা মারাত্নকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও তার আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষের আনাগোনা ছিলো। কিন্তু লকডাউনের ফলে এখন জায়গাগুলো প্রায় পর্যটকশূণ্য। 

লকডাউন ঘোষণা করার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে গণপরিবহণ। ফলে পরিবহন খাতের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা - কর্মচারীরাও পড়েছে বিপাকে।  বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মতে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পরিবহন খাতে প্রতিদিন ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। তারা আরো বলেন এই পরিবহন সেক্টরে নিয়োজিত প্রায় ৯০ লাখ শ্রমিক যারা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করতো তারা সবাই এখন বেকার। পরিবহন বন্ধ থাকার ফলে মালিক পক্ষ থেকেও তাদের বেতন পরিষোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। যার ফলে পরিবহন খাতের শ্রমিকরাও অনেক দুর্দশার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে।

লকডাউনের ফলে বিভিন্ন ট্যুর ও ট্রাভেল এজেন্সির অনেক অগ্রিম বুকিং বাতিল করা হচ্ছে। যার কারণে এসব ট্যুর ও ট্রাভেল এজেন্সিগুলো মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে আশংকা প্রকাশ করেন।লকডাউনের পর থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ এবং দেশের বাইরের সকল ধরণের বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই বিদেশ থেকে কোনো পর্যটক অাপাতত বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এই লকডাউনের কারণে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স ২৭০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে কিছুদিন আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পুণরায় চালু করার খবর পাওয়া গেছে যার ফলে কিছুটা হলেও ক্ষতি কমবে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশে কয়েকটি সম্ভাবনাময় শিল্পের মধ্যে পর্যটন শিল্প হলো অন্যতম। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতে পর্যটন শিল্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(টোয়াব) এর মতে করোনার প্রভাবে দেশের পর্যটন শিল্পে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৭শত কোটি টাকার মত। করোনার প্রভাব কেটে গেলেও এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেক সময় লাগবে। কারণ মানুষ প্রথমে নিজের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে চিন্তা করবে তারপর ভ্রমণ ও বিনোদন। চলমান সংকট মোকাবেলা করে পর্যটন শিল্পকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। তাছাড়া পর্যটন খাতের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা - কর্মচারীদের জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করা উচিত।  এই বিপর্যস্ত পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করতে আগামী অর্থবছরগুলো থেকে পর্যটন খাতের সুরক্ষা ও উন্নয়নে সরকার কর্তৃক যথেস্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা উচিত। সর্বপরি, সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প আবারো ফিরে আসুক তার আগের রুপে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো মজবুত ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলুক এটাই আমাদের কামনা।

সাইফুল ইসলাম

শিক্ষার্থী ২য় বর্ষ

ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।