করোনা বিশ্বে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে : প্রধানমন্ত্রী

করোনা বিশ্বে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে : প্রধানমন্ত্রী

ছবি:সংগৃহীত

করোনা ভাইরাসের মতো একটি অদৃশ্য শক্তি সারা বিশ্বে একটি অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এমন ভয়, মৃত্যু আতঙ্কের পরিবেশ আগে কখনো দেখেননি। এ আতঙ্ক উন্নত, উন্নয়নশীল, দরিদ্র রাষ্ট্রে একাকার হয়ে গেছে। উন্নত দেশ, পশ্চিমা বিশ্ব হয়ে সংক্রমনের ঢেউ এখন দক্ষিণ এশিয়াতে চলছে।

সাবেক মন্ত্রী ও চলতি সংসদের সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেমন একটা অদৃশ্য শক্তি করোনা ভাইরাস, যাকে চোখেও দেখতে পাওয়া যায় না, বুঝতেও দেয় না সারা বিশ্বটাকে স্থবির করে দিলো! এমন একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করলো, যখন আমাদের আওয়ামী লীগের কর্মী মারা গেলেও ছুটে গিয়েছি, জানাজা, পরিবারের সাথে দেখা করেছি কিন্তু আমরা এবার সেটা করতে পারলাম না। একটা আতংক ভয়ভীতি মৃত্যু আতংক যেন সারা বিশ্বকে পেয়ে বসেছে। এটাই হচ্ছে একটা অদ্ভূত ব্যাপার। এই ধরণের পরিবেশ কিন্তু আমরা আগে কখনো দেখিনি।

তিনি বলেন, এই ভীতিটা প্রতিনিয়ত সারাবিশ্বে। উন্নত, অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ, অস্ত্রের দিক থেকে শক্তিশালী, অর্থের দিক থেকে শক্তিশালী অথবা হয়তো দরিদ্র রাষ্ট্র কোন ভেদাভেদ নেই। সব যেন, এক হয়ে গেছে এক করোনা ভাইরাসের ভয় এবং আতংকে। ঠিক শুরু হয় এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে আক্রান্তের হার মৃত্যুর হার বাড়তে বাড়তে হয়তো এক জায়গায় গিয়ে থামে। আমাদের এই দক্ষিন এশিয়াতে এখন। উন্নত দেশ, পশ্চিমা দেশ, আমেরিকাসহ আমাদের দক্ষিণ এশিয়াতে ওয়েবটা (সংক্রমনের ঢেউ) চলছে।

সংসদ নেতা বলেন, আজকে আমি পার্লামেন্টে আসবো অনেক জায়গা থেকে কিন্তু আমকে ভীষণভাবে বাধা দেয়া হয়েছে। অনেকে যেতে নিষেধ করেছেন। আামি বললাম, গুলি, বোমা, গ্রেনেড কতকিছুইতো মোকাবেলা করে করে এ পর্যন্ত এসছি। অথচ একটা অদৃশ্য শক্তি তার ভয়ে ভীত হয়ে থাকবো, আর আমার আওয়ামী লীগের একটা মেম্বার, শুধু আওয়ামী লীগের মেম্বার বলে না, আওয়ামী লীগের একটা পরিবারের একজন সদস্য তাকে হারিয়েছি আজ সেখানে যাব না, আমার কেবিনেট মন্ত্রীকে হারালাম তাতো হয় না।

সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকে বর্তমান সংসদের সদস্য খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম এবং টেকনোক্রেট কোটায় মনোনীত ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আব্দুল্লাহর ইন্তেকালে স্পিকার শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। নিয়ম অনুযায়ী শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়।

মোহাম্মদ নাসিম করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং ওইদিন রাত পৌনে বারোটায় একই হাসপাতালে নেয়ার পথে শেখ মো: আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পর শেখ আব্দুল্লাহর নমূনা পরীক্ষায়ও করোনা পজেটিভ ফলাফল এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, অনেক কষ্ট বুকে নিয়ে আজ এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে। মাত্র ১০ তারিখে সংসদ শুরু করলাম। আমাদের একজন সদস্যসহ অনেকে মৃত্যবরণ করেছে। তাদের শোক প্রস্তাব আমাদের নিতে হলো। তারপর মাত্র কয়েকটি দিন গেলো। আজ আমরা হারালাম দুইজনকে হারালাম।

তিনি বলেন, মানুষ মরণশীল। একবার জন্মগ্রহন করলে মৃত্যু অবধারিত। সকলের জন্য এটা প্রযোজ্য হবে। যখন একটা কাজ করে দেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের একটা আশা ছিল মুজিব বর্ষ উদযাপন করবো। বাংলাদেশের দারিদ্রসীমা আমরা কমিয়ে এনেছি। কোথায় ৪০ ভাগ ছিল, সেটাকে আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে আনতে পেরেছি মাত্র ১০ বছরের মধ্যে। আমাদের জিডিপি বেড়ে গিয়েছিল এবং আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছিলাম তখন এমন একটা অদৃশ্য শক্তি করোনা ভাইরাস যাকে চোখেও দেখতে পারা যায় না, বুঝতেও দেয় না সারা বিশ্বটাকে স্থবির করে দিলো।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চেষ্টা করছি মানুষকে বোঝাতে অন্ত স্বাস্থ্যবিধিটা যেন মেনে চলে। এটা খুব সাংঘাতিক একটা সংক্রামক ব্যাধি। সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা, এই রক্ষা করার জন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বলেছি। পাশাপাশি এটা বাস্তবতা যে, মানুষগুলোকে করোনার ভয়ে না খাইয়ে মারতে পারি না। তাদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থাতো আমাদের নিতে হবে। জীবনযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে সেটা তো আমাদের করতে হবে। অথচ আতঙ্কটা এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যেটা সত্যি খুব দুঃখজনক। তবুও এখন থেকে আমরা ঠিক করেছি। কোন কোন এলাকায় বেশি আক্রান্ত দেখা যাচ্ছে, সেই সব এলাকা লকডাউন করা হবে। যেন ওখান থেকে কোনো রকম সংক্রামিত না হয়। কিন্তু সাথে সাথে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মক্ন্ডাগুলি যেন সচল থাকে সেদিকেও ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা একটা বাজেটও দিতে সক্ষম হয়েছি। এটি এক ধরণের যুদ্ধ। ঠিক সময় আমরা আমাদের দুইজনকে হারিয়েছি। এটা অত্যন্তকষ্টকর।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমরা সবসময় অনেকগুলো দল নিয়ে যখন আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। শুধু ১৪ দল বলে নয়, ১৯৮০ সালে যখন ঐক্য গড়ে তুলেছি আমি সবসময় ঐক্যের দায়িত্বটা মোহাম্মদ নাসিমকে দিতাম। তার ভেতর একটা বিষয় ছিল, সবাইকে নিয়ে অন্যান্য দলের সাথে চমৎকার সম্পর্ক রেখে চলা এবং কাজ করার একটা শক্তি ছিল। আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে গড়ে তোলার পেছনে যথেষ্ট সময় দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, আমি দেশে আসার পর আবদুল্লাহ সাহেবকে পেয়েছি। আমার নির্বাচন পরিচালনা শুধু না, নির্বাচনের সম্পূর্ণ দেখাশোনা তিনি করতেন। গোপালগঞ্জের মানুষের জন্য কঠিন সময়ে হাল ধরেছেন তিনি। কওমি মাদরাসাকে একত্রিত করে তাদের জন্য সনদ দেওয়া, নীতিমালা তৈরি করা। একটা আইন করা, আইনটাকে পাশ করা সব থেকে বেশি কাজ করেছে আমার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নুল আবেদিন আর আব্দুল্লাহ সাহেব। দুজনই খুব ঠান্ডা মাথার। এই দুজনকে মূল দায়িত্ব দিয়েছিলাম সবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করার। আজ সেই দুজনই নাই। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের অবদানের কথা স্মরণ করে বক্তব্যের সময় কিছুটা বাকরুদ্ধও হয়ে যান। তিনি দুজনের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন, সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, আওয়ামী লীগের মতিয়া চৌধুরী, ডা. হাবিবে মিল্লাত ও মৃণাল কান্তি দাস, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।

আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিতে শোক প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। প্রস্তাবে উভয়ের জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরা হয়। এরপর এক মিনিট নিরাবতা পালন ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। বিদ্যমান সংসদের সদস্যের ইন্তেকালে রেওয়াজ অনুযাযায়ী দিনের অন্যান্য কার্যসূচী স্থগিত করে অধিবেশন আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।