বন্যায় ভেসে যাওয়ার পূর্বেই সচেতন হই।

বন্যায় ভেসে যাওয়ার পূর্বেই সচেতন হই।

আবু জাফর

ভাটির দেশ বাংলাদেশ। এই বাংলাকে নদী গুলো দুই হাতে যেমন দান করেছে মাঝে মাঝে কেড়েও নিয়েছে সব কিছু! জেষ্ঠ্য শেষ হলো শুরু হলো বর্ষা মৌসুম। এই বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশে প্রতিবছরই বেশকিছু এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়। যেহেতু নদীর পানির ৯৩ শতাংশই আসে নেপাল, ভারত এবং ভুটান থেকে। তাই পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃষ্টিপাতকে কেন্দ্র করেই প্তিবছর বন্য হয় পদ্মা- মেঘনা, গঙ্গা-যমুনা অববাহিকায়। জুন-সেপ্টেম্বর এসময় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত তার অন্যতম কারন। করোনা ও আম্ফানের মতো দুর্যোগের মধ্যেই এবার তৈরি হয়েছে আগাম বন্যার শঙ্কা। অকাল মৌসুমি বায়ু বিস্তারের ফলে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল অস্বাভাবিক। জুনে ও ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়ার অফিস। তাছাড়া বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি নিম্নচাপের আশঙ্কাতো রয়েছেই। তাই আবহাওয়াবিদদের মতে জুনে এক দফা এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরেক দফা বন্যা হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এবার সময়ের পূর্বেই দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি অনেক বেড়ে গেছে। এমনকি এখনই যমুনায় যে পরিমাণ পানি বেড়েছে, তা ১৯৮৮ সালের পর আর দেখা যায়নি। আবহাওয়া দপ্তরের মতে দেশের উপকূলীয় এলাকা ব্যতীত সারাদেশেই এবার বন্যার ঝুঁকিতে থাকবে। ৫৬,০০০ বর্গকিলোমিটারের এদেশটায় প্রায় ১১,০০০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ আছে। কিন্তু প্রায় প্রতি বছরই এগুলো নতুন করে মেরামত লাগে। অনেক সময় আমাদের বন্যার পানি আসার পূর্ব পর্যন্ত এগুলো মেরামতে নজর পরে না। আর তাতেই ভেসে যায় ফসলি জমি, লোকালয়ের সব কিছু। তাই আমাদের এখন সর্বোচ্চ নজর দিতে হবে এই বাঁধগুলো মেরামতের জন্য। হাওর ও উত্তরাঞ্চলে বন্যায় যেহেতু শত হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয় তাই এই অঞ্চল গুলোর দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। উল্ল্যেখ, বাংলাদেশে গত বছর বন্যায় শতাধিক মানুষের মৃত্যুবরন করেছিলো। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছিল প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ। বন্যা কবলিত অন্তত ২৫ টি জেলায় ঘরবাড়ী ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে, এতে সাধারণ মানুষ গুলো ভোগান্তির সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল! এইবারের প্রস্তাাবিত বাজেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রাণালয়ের জন্য ৯ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ৯ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকার সুস্ঠ ব্যবস্থাপনা হলে , আসন্ন দুই দফা বন্যার ভোগান্তি কিছুটা হলেও লাঘব হবে জনমনে এই কামনা। বন্যার সাথেই চলে আসে সাপগোপ সহ পানিবাহিত ডায়রিয়ার মত বহু রোগ তাই এগুলোর জন্যও প্রস্তুতি নেয়া জরুরি। যেকোন দুর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে ক্ষতির সম্ভাবনা অর্ধেক কমে যায়। তাই দুটি দুর্যোগের উপর তৃতীয় দুর্যেগ আসার পূর্বেই আমাদের সচেতন হতে হবে। না হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া খুবই কষ্টকর হবে! আবু জাফর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়